হারাম বর্জন করুন
ইসমাঈল হুসাইন
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
দুনিয়ার জীবন উপভোগ করার জন্য যা কিছুই করা হোক না কেন, এ দুনিয়াই চিরস্থায়ী আবাসস্থল নয়। অবশ্যই একদিন দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন সবাইকেই তার আয়-রোজগার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। আল্লাহর সামনে পাই পাই হিসেব দিতে হবে। কোথা থেকে উপার্জন করেছি এবং কোথায় ব্যয় করেছি, জবাব চাওয়া হবে। সুতরাং রিজিক অন্বেষণের ক্ষেত্রে আবশ্যীকভাবে পরিত্যাজ্য বিষয়গুলো পরিত্যাগ করতে হবে। নইলে রিজিক হারাম হবে। তা হলো- কোনো উপার্জনে সামান্যতম হারামের সংশ্লিষ্টতা থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে। নোমান ইবনে বাশির (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। উভয়ের মাঝে বহু অস্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গোনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গোনাহ হওয়া সুস্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গোনাহের সন্দেহযুক্ত কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুস্পষ্ট গোনাহের কাজে পতিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গোনাহগুলো আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা। যে পশু সংরক্ষিত এলাকার চারপাশে চরতে থাকে, তার ওই সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।’ (বোখারি : ২০৫১)।
ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত
ইবাদত কবুলের জন্য পরিধেয় বস্ত্রসহ সবকিছু হালাল উপার্জনের হতে হবে। অন্যথায় তা গ্রহণযোগ্য হবে না। রাসুল (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তু গ্রহণ করেন। তিনি মোমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসুলদের। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ এরপর রাসুল (সা.) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকাবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধূসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’ অথচ সে যা খায়, তা হারাম; যা পান করে, তা হারাম; যা পরিধান করে, তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। সুতরাং তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে? (মুসলিম : ২৭৬০)।
মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়ুন
মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে সম্পদ অর্জন না করা চাই। মানুষের নেক আমল ধ্বংসের জন্য এই একটি পাপই যথেষ্ট। তাই রাসুল (সা.) তার প্রিয় উম্মতকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তোমরা সত্যের অনুসরণ কর। কারণ, সত্য মানুষকে ভালো কাজের দিকে নিয়ে যায়। আর ভালো কাজ মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়। যে সত্য বলে আর সত্যের সন্ধানে থাকে, এমন ব্যক্তি একপর্যায়ে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। আর মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কারণ, মিথ্যা (মানুষকে) পাপাচারে লিপ্ত করে। আর পাপাচার (মানুষকে) জাহান্নামে নিয়ে যায়। এভাবে যে মিথ্যা বলে আর মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এক সময় এমন ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে চরম মিথ্যুক বলে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।’ (মুসলিম : ২৬০৭)।
সুদ বর্জন করুন
সুদের সঙ্গে কোনো অবস্থায়ই সম্পৃক্ত না থাকা চাই। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ খুব শক্তভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মোমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শোন। আর যদি তওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বাকারা : ২৭৮-২৭৯)।
ঘুষকে না বলুন
ঘুষের সম্পৃক্ততা না থাকা চাই। ঘুষ দেয়া-নেয়া বা এর সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা রাখলে সে উপার্জন সরাসরি হারাম। কারও হক বিনষ্ট করা কিংবা কোনো অন্যায়কে কার্যকর করার জন্য বিচারক কিংবা শাসককে ঘুষ দেয়া মারাত্মক অপরাধ। কেননা, ঘুষের ফলে বিচারক প্রভাবিত হয়, হকদারের প্রতি অবিচার করা হয়, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থায় ধস নেমে আসে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং জেনে-বুঝে মানুষের সম্পদ থেকে ভক্ষণের জন্য বিচারকদের দরবারে তার আরজি পেশ করো না।’ (সুরা বাকারা : ১৮৮)। অনুরূপভাবে আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই লানত করেছেন। (তিরমিজি : ১৩৩৬, সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৩১৩)।