ইসলাম ও সুদ
জাকারিয়া মাহমুদ
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনে ধোঁকা, প্রতারণা সর্বোপরি ক্ষতির কোনো মাধ্যমকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। ইসলামি জীবনে মানুষ থাকবে স্বস্তি, শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রেমময় ভুবনে। এ লক্ষ্যে ইসলাম কিছু বিষয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার জোগান দিয়েছে, আবার কিছু বিষয়ে করেছে চরম নিরুৎসাহিত। হুমকি-ধমকি ও ভীতিপ্রদ বার্তা দিয়ে নিভৃত রাখার চেষ্টায় একদম কার্পণ্য করেনি। তার মধ্যে কিছু বিষয় পরিত্যাগের ক্ষেত্রে ইসলাম দিয়েছে বিশেষ গুরুত্বারোপ। এরই অগ্রগণ্য হলো সুদ বা অর্থনৈতিক মায়াজাল। যার শুরু ফোঁটা ফোঁটা আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে, আর শেষ কষ্টাশ্রুর বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে ভেসে।
সুদ কী?
পবিত্র কোরআনে সুদ বা কুসিদের প্রতিশব্দ হিসেবে রিবা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যার আভিধানিক অর্থ আধিক্য, পরিবৃদ্ধি, পরিবর্ধন, স্ফীত, বিকাশ ইত্যাদি। (মুজামুল ওয়াসিত : ৩২৩)। সুদ শব্দটি মূলত ফার্সি বা উর্দু শব্দ। বাংলায় বলা হয় কুসিদ। ইংরেজিতে বলা হয় ইউজুরি (ঁংঁৎু)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ঋণ মুনাফা টানে, তা সুদ বা রিবা।’ মুজামুল ওয়াসিত গ্রন্থকার বলেন, ‘চুক্তিকারীদ্বয়ের কোনো একজনের জন্য শর্তযুক্ত বিনিময় মুক্ত অতিরিক্ত অংশকে সুদ বলে।’ মুফতি আমিমুল ইহসান (রহ.) কাওয়াইদুল ফিকহ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘চুক্তিবদ্ধ দু’পক্ষের যে কোনো একপক্ষ পারস্পরিক লেনদেনে শরিয়াসম্মত বিনিময় ছাড়া শর্ত মোতাবেক যে অতিরিক্ত অংশগ্রহণ করে, তাকে সুদ বলে।’
সুদের ধরন
কোরআনুল কারিমে সুদ হারাম হওয়া এবং তার কদর্যতা ও সুদখোরের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট আলোচনা পাওয়া গেলেও সুদ কি, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় করণীয় হলো, রাসুল (সা.)-এর হাদিসের দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টি ঘোরানো। সেদিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাই, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গমের মোকাবিলায় গম, যবের মোকাবিলায় যব, খেজুরের মোকাবিলায় খেজুর। স্বর্ণ-রুপার মোকাবিলায় স্বর্ণ-রুপা- এগুলো হতে হবে সমানভাবে এবং হাতে হাতে। এর ব্যতিক্রম হলে সুদ হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৭১৭১)। সুদ বা রিবা সম্পর্কে এর চেয়ে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই মাজহাবের সম্মানিত ইমামরা আপন প্রজ্ঞাবলে গবেষণা করে মূলনীতি বের করেছেন। ইমামদের অন্তঃদৃষ্টিতে ধরা দিল, হাদিসটিতে মূলত কদর বা সমজাতীয় ও জিনস বা অভিন্ন সত্তা হ?ওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। সে হিসেবে তিনি কদর মাআল জিনস বা সমজাতীয় অভিন্ন দ্রব্যকে সুদ বা রিবা হওয়ার জন্য মূলনীতি মেনেছেন। অর্থাৎ যে দু’টি বস্তুর মাঝে মোবাদালা বা কমবেশ করা হবে, সে দুই বস্তু যদি মাকিলি ও মাওযুনি বা পরিমাপযোগ্য হয় এবং উভয়ের জিনস বা সত্তা অভিন্ন হয়, তাহলে কমবেশি করা হারাম। ব্যতিক্রম হলে জায়েজ আছে।
সুদের প্রকার
উম্মাহর ফকিহরা রিবা বা সুদকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন- ১. রিবায়ে ফজল বা এমন বাড়তি অংশকে, যা বস্তুর মধ্যে বিনিময়হীন অর্জিত হয়। ২. রিবায়ে নাসিয়াহ বা এমন উপকারিতাকে, যা মেয়াদের বিনিময়ে অর্জিত হয়। এই দু’প্রকার বর্ণনার ওপর আল্লাহর এ আয়াতকে মূলনীতি মানা হয়, ‘তোমরা মাল বৃদ্ধির জন্য যা প্রদান কর, তা আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না।’ (সুরা রুম : ৩৯)। পাশাপাশি উপরোল্লিখিত হাদিস থেকেও এ প্রকারভেদের সমর্থন পাওয়া যায়।