ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঋণ দানের সওয়াব

আবদুল কাইয়ুম শেখ
ঋণ দানের সওয়াব

অভাবগ্রস্তকে ঋণ দেয়া মানবতার দাবি। কোরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। এতে অনেক সওয়াব মেলে। দুস্থ ও অভাবগ্রস্ত না হলে সাধারণত কেউ কারও কাছে হাত পাতে না। তাই অভাবগ্রস্ত মানুষের অভাব দূর করা এবং মসিবতগ্রস্ত মানুষের মসিবত অপসারণ করা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও জরুরি। অভাবগ্রস্ত মানুষের অভাব দূর করলে এবং মসিবতগ্রস্ত মানুষের মসিবত অপসারণ করলে অপার্থিব এক সুখের পরশ অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে ইহকালে মহান আল্লাহর সহযোগিতা লাভ করা যায়। পরকালে তার বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক কোনো ঈমানদারের পার্থিব কোনো মসিবত দূর করে দেবে, আল্লাহতায়ালা বিচার দিবসে তার থেকে মসিবত সরিয়ে দেবেন। যে লোক কোনো দুস্থ লোকের অভাব দূর করবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দুরবস্থা দূর করবেন। যে লোক কোনো মুসলমানের দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে, আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন।’ (মুসলিম : ৬৭৪৬)।

ঋণে আঠারোগুণ প্রতিদান

কাউকে দান করলে দানগ্রহীতা সেই দানকৃত বস্তু আর কখনও দাতাকে ফিরিয়ে দেয় না; কিন্তু কাউকে ঋণ দেয়া হলে দেনাদার পাওনাদারকে সেই বস্তু এক সময় ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু তারপরও ইসলামি শরিয়তে দান করার চেয়ে ঋণ দেয়ার সওয়াব বেশি। হাদিস শরিফের ভাষ্যমতে, দান করার পুণ্যের চেয়ে ঋণ দেয়ার পুণ্য আটগুণ বেশি। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মেরাজের রাতে আমি জান্নাতে একটি দরজায় লেখা দেখলাম, দান-খয়রাতে দশগুণ সওয়াব এবং ঋণে ১৮ গুণ।’ আমি বললাম, ‘হে জিবরাইল! ঋণ দান-খয়রাতের চেয়ে উত্তম হওয়ার কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘ভিক্ষুক নিজের কাছে সম্পদ থাকতেও ভিক্ষা চায়, কিন্তু ঋণপ্রার্থী প্রয়োজনের তাগিদেই ধার চায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৩১)।

ঋণে দাস মুক্তির সওয়াব

একজন দাসের মূল্য মানভেদে কোটি বা কমবেশ হতে পারে। তাই যে কেউ ইচ্ছে করলেই একজন দাস মুক্ত করে এর সওয়াব লাভ করতে পারে না। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি কারও প্রয়োজনে তাকে কাঙ্ক্ষিত বস্তু ঋণ দেয়, তাহলে সে এ মহাপুণ্যের অধিকারী হতে পারে। বারা ইবনে আজেব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে অথবা টাকাণ্ডপয়সা ঋণ দেয় কিংবা পথ হারিয়ে যাওয়া লোককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি দাস মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ সওয়াব।’ (তিরমিজি : ১৯৫৭)।

ধারে দান করার পুণ্য

দান করার চেয়ে ঋণ দেয়া সহজ। কেননা, দান করার পর দানকৃত বস্তু আর ফিরে পাওয়া যায় না। তবে ঋণ দেয়ার পর ঋণের বস্তু ফিরে পাওয়া যায়। তা সত্ত্বেও ঋণ দেয়ার পুণ্য দান করার তুলনায় বেশি। যদি কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে কোনো বস্তু দু’বার ঋণ দেয়, তাহলে সে সেই পরিমাণ বস্তু একবার দান করার সওয়াব পাবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে দু’বার ঋণ দিলে সে সেই পরিমাণ মাল একবার দান-খয়রাত করার সমান সওয়াব পায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৩০)।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত