পণ্যে কতটুকু লাভ নেবেন
ইসমাঈল হুসাইন
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যবসায় ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতি ও সন্তুষ্টি থাকা জরুরি। তাই ইসলাম ক্রেতা-বিক্রেতার ওপর লাভের হার নির্ধারণের বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে। কেনাবেচায় ক্রেতা-বিক্রেতার পণ্য সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা সাধারণ বুদ্ধি-বিবেচনার দাবি। বিক্রেতা তার লাভ-লোকসান বিবেচনায় পণ্যের দাম চাইবে, আর ক্রেতা দেখেশুনে আর্থিক সংগতি অনুযায়ী দাম বলবে। অতঃপর তারা যে দামে সম্মত হবে, সে দামে লেনদেন হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে যদি তা তোমাদের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসার মাধ্যমে হয়, তাহলে ভিন্ন কথা।’ (সুরা নিসা : ২৯)। ইসলাম ব্যবসায় লাভের হার নির্ধারণ করে দেয়নি।
নবীজির সময়কার গল্প
উরওয়া বারিকি (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) একটি বকরি কিনে দেয়ার জন্য তাকে একটি দিনার দেন। তিনি ওই দিনার দিয়ে দুটি বকরি কেনেন। এরপর এক দিনার মূল্যে একটি বকরি বিক্রি করে দিলেন। রাসুল (সা.)-এর খেদমতে একটি বকরি ও একটি দিনার নিয়ে উপস্থিত হলেন। তা দেখে তিনি তার ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকত হওয়ার জন্য দোয়া করেন। পরে তার অবস্থা এমন হলো যে, ব্যবসার জন্য যদি মাটিও তিনি কিনতেন, তাতেও তিনি লাভবান হতেন। (বোখারি : ৩৬৪২)। এ হাদিসে দেখা যায়, একটি বকরিতে ১০০ শতাংশ লাভ করার পরও রাসুল (সা.) কোনো আপত্তি করেননি, বরং তার জন্য দোয়া করেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, বিক্রেতা কত শতাংশ লাভ করবে, সে ব্যাপারে তার স্বাধীনতা আছে। ক্রেতার পণ্য পছন্দ হলে বাজারদর যাচাই-বাছাই করে সে দামে কিনবে অথবা কিনবে না।
অর্থনীতিবিদদের মতামত
তবে ইসলামি অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ‘অভাব, দুর্ভিক্ষ, মহামারি ও সংকটময় মূহূর্তে জীবন ধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে সীমাতিরিক্ত লাভ করা বৈধ নয়। (যেমন- খাদ্য-পানীয়, ওষুধ ইত্যাদি)। বরং তা যথাসম্ভব কম লাভে বিক্রি করবে।’ আবার ইসলাম একজন মুসলমান ব্যবসায়ীর জন্য ব্যবসায় নীতি-নৈতিকতা অবলম্বন করার তাগিদ দিয়েছে। যেমন- দাম চাওয়ার ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা যাবে না, বাজারদর থেকে সীমাতিরিক্ত দাম চাইবে না, মজুদদারি করবে না, পণ্যের দাম সম্পর্কে ক্রেতার অজ্ঞতার সুযোগে তাকে ঠকাবে না, বেচাকেনার ক্ষেত্রে নম্রতার পরিচয় দেবে ইত্যাদি। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যে নম্রতার সঙ্গে বেচাকেনা করে এবং পাওনা ফিরিয়ে দেয়।’ (বোখারি : ২০৭৬)।