ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুনাফাখোরি থেকে সাবধান

নিয়ামুল ইসলাম
মুনাফাখোরি থেকে সাবধান

ইসলামে ব্যবসার মাধ্যমে পণ্য বিক্রি ও মুনাফা অর্জনের বিধান রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে সততা অবলম্বন করা এবং সব ধরনের ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যবসার লক্ষ্য হলো, সম্পদের প্রবৃদ্ধি ঘটানো বা মুনাফা লাভ করা। ব্যবসার মাধ্যমে মূলধনের মুনাফা লাভ ইসলামে সম্পূর্ণ জায়েজ। ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুন বলেন, সস্তায় পণ্য কিনে বেশি দামে বিক্রি করে মূলধনের প্রবৃদ্ধি ঘটানোর মাধ্যমে উপার্জনের চেষ্টা চালানোই হচ্ছে ব্যবসা। আর ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত এ বাড়তি পরিমাণকে বলা হয় মুনাফা। (মুকাদ্দামা ইবনে খালদুন : ৩২৮)। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় যে কোনো উপায়ে মুনাফা অর্জনের অবাধ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ইসলামি অর্থনীতিতে অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত মুনাফা হারাম। কারণ, তা শোষণের হাতিয়ার। ইসলামি শরিয়তে মুনাফা বা লাভের কোনো পরিমাণ নির্ধারিত নেই; বরং তা সাধারণ বাজার দরের ওপর নির্ভরশীল।

লেনদেনে যেসব লক্ষ্যণীয়

কেনাবেচার ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় হলো- ১. তাতে জুলুম না থাকা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাক। কেননা, জুলুম কেয়ামতের দিন ঘন অন্ধকার হয়ে দেখা দেবে।’ (মুসলিম : ২৫৭৮)। ২. ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতি। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ক্রয়-বিক্রয় শুধু পারস্পরিক সম্মতিতে অনুষ্ঠিত হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২১৮৫)। ইসলাম সুদের মাধ্যমে মুনাফা লাভের পন্থাকে হারাম ঘোষণা করেছে। অনেকে সুদ ও মুনাফাকে একই মনে করেন। অথচ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সুদ হলো ঋণের শর্ত অনুযায়ী ঋণগ্রহীতা কর্তৃক ঋণদাতাকে মূল অর্থের সঙ্গে প্রদেয় অতিরিক্ত অর্থ। পক্ষান্তরে হালাল ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত লভ্যাংশকে বলা হয় মুনাফা। আর মিথ্যা, ধোঁকা ও অবৈধ উপায়ে লাভ করার নেশায় যে মত্ত থাকে, তাকে বলা হয় মুনাফাখোর।

ইসলামে মুনাফাখোরির বিধান

ইসলাম মুনাফাখোরিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তা প্রতিরোধে কয়েক ধরনের ব্যবসাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। যেমন- ব্যবসায় প্রতারণা, মিথ্যা কসম করা, মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মজুদ করা এবং সব ধরনের অবৈধ বেচাকেনা ইত্যাদি। পণ্যমূল্য জানে না, এমন ক্রেতা থেকে বেশি মূল্য আদায় করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এটা এক ধরনের ধোঁকার শামিল। যেমন- বিক্রেতা বলবে, আমি এটি এত দামে কিনেছি। অথচ সে মিথ্যাবাদী। এটিকে বলা হয় নাজাশ। এটি মুসলমানদের সঙ্গে প্রতারণা করা এবং মিথ্যা বলে তাদের ধোঁকা দেয়ার নামান্তর। এটি হারাম এবং অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করার শামিল। (আল বুয়ু আল মানহি আনহা ফিল ইসলাম : ২৪)।

মুনাফাখোরি রোধে নবীজির কৌশল

মুনাফাখোরির পথকে রুদ্ধ করার জন্য রাসুল (সা.) বাজারে পণ্য আসার আগেই কিনতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিক্রয়ের বস্তু বাজারে উপস্থিত করার আগে অগ্রগামী হয়ে তা কেনার জন্য যেও না।’ (বোখারি : ২১৬৫)। উল্লিখিত ক্রয়-বিক্রয়ের ফলে মূল বাজারে পণ্যদ্রব্যের আমদানি ব্যাহত হয়। ফলে পণ্যের সঠিক মূল্যও নির্ধারিত হয় না। কেননা, সঠিক মূল্য নির্ধারণ সম্ভব হয় বাজারে পণ্যের আমদানি ও তার চাহিদা অনুপাতে। কিন্তু ওই অবস্থায় বিক্রেতা বাজারের দরদাম কিছুই জানতে পারে না।

ইসলামে মজুদদারি নিষিদ্ধ

ইসলামে মজুদদারিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে; যাতে মুনাফাখোরির সুযোগ না থাকে। কারণ, মজুদদারির উদ্দেশ্যই হচ্ছে অত্যধিক মুনাফা অর্জন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে পণ্য মজুদ করে, সে পাপী।’ (মুসলিম : ১৬০৫)। তবে সাধারণভাবে পণ্য মজুদ করা দোষের নয়। রাসুল (সা.) নিজের পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য মজুদ রেখেছেন। তবে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মুনাফাখোরির উদ্দেশ্যে মজুদ করলে অবশ্যই তা অপরাধ হবে। মুনাফাখোরি সমাজ ও জনকল্যাণবিরোধী ঘৃণ্য পুঁজিবাদী মানসিকতা। ইসলাম এ ধরনের মুনাফাখোরি মনোভাবকে ধিক্কার দিয়েছে। তবে ইসলামে হালাল উপায়ে ব্যবসার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনে কোনো বাধা নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত