কোরবানির জন্য যেসব পশু কেনা নিষেধ
মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কোরবানির ঈদ আসন্ন। এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। কোরবানির জন্য যেমন নির্দিষ্ট কিছু পশু নির্ধারিত রয়েছে, তেমনি কিছু পশুর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাও এসেছে। কোরবানির পশু ক্রয়ের আগে সেগুলো জেনে নেয়া কর্তব্য।
ক্ষীণ ও দুর্বল পশু
খুব ক্ষীণ ও দুর্বল পশু দিয়ে কোরবানি হবে না। তাই পশু কেনার ক্ষেত্রে এ ধরনের পশু এড়িয়ে চলা কর্তব্য। বারা ইবনে আজেব (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, জবাইয়ের স্থানে যেতে পারে না এমন খোঁড়া পশু, মারাত্মক ধরনের রোগা পশু ও এমন ক্ষীণ দুর্বল পশু দিয়েও কোরবানি করা যাবে না, যার হাড্ডির মগজ শুকিয়ে গেছে। (তিরমিজি : ১৪১৭)।
লেজ বা কান কাটা
অধিকাংশ লেজ বা কান কাটা পশু দিয়ে কোরবানি হয় না। তাই কোরবানির জন্য এ ধরনের পশু কেনা যাবে না। আলী (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের কান কাটা এবং শিংভাঙা পশু দিয়ে কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। আমি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবকে বিষয়টি বললাম। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, যে পশুর শিং অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশি ভেঙে গেছে, তা দিয়ে কোরবানি হবে না।’ (তিরমিজি : ১৪২৪)।
চর্মরোগ বিশিষ্ট ও স্তন কাটা
দুর্বল, চর্মরোগ বিশিষ্ট ও স্তন কাটা পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ নেই। তাই কোরবানির জন্য এ ধরনের পশু কেনা যাবে না। ইয়াজিদ মিসরি (রহ.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, একদিন আমি উতবা ইবনে আবদ আস সুলামির কাছে গেলাম। তাকে বললাম, ‘আবু ওয়ালিদ! আমি কোরবানির পশুর তালাশে বেরিয়েছি। কিন্তু দাঁতভাঙা একটি পশু ছাড়া পছন্দমতো কোনো পশু পেলাম না। তাই পশুটি আমার পছন্দ হলো না। তুমি কী বলো?’ উতবা বলল, ‘ওটাকে আমার কাছে আনলে না যে!’ আমি বললাম, ‘আশ্চর্য! তোমার জন্য জায়েজ আর আমার ক্ষেত্রে নাজায়েজ?’ উতবা বলল, ‘হ্যাঁ, তুমি সন্দেহ করছ, আমি সন্দেহ করছি না। রাসুল (সা.) কানবিহীন, অন্ধ, শিংভাঙা পশু দ্বারা কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন।’ (আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি : ১৯৫৭৪)।
শুকনো দুর্বল পশু
এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না, তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। তাই এ ধরনের পশু কোরবানির জন্য ক্রয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। (তিরমিজি : ১/২৭৫, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৪)।
দাঁতহীন পশু
যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না; এমন পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। কোরবানির হাটে এ ধরনের পশুও এড়িয়ে চলা চাই। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৫, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৮)।
শিংভাঙা পশু
যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙে গেছে বা শিং একেবারে গজায়নি, সে পশু কোরবানি করা জায়েজ। (তিরমিজি : ১/২৭৬, সুনানে আবি দাউদ : ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৬ রদ্দুল মুহতার : ৬/৩২৪, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৭)।
লেজ কাটা পশু
যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা, সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে, তাহলে তার কোরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবে যদি কান ছোট হয়, তাহলে কোরবানির জন্য তা ক্রয়ে অসুবিধা নেই। (তিরমিজি : ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ : ১/৬১০, ইলাউস সুনান : ১৭/২৩৮, ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৫২, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৭-২৯৮)। আলী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আদেশ করেছেন, আমরা যেন কোরবানির পশুর চোখ ও কান ভালো করে দেখে নিই এবং যে পশুর কানের অগ্রভাগ ও পেছনের ভাগ কাটা, কান ফাঁড়া বা গোলাকার ছিদ্রযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি না করি। (মুসনাদে আহমদ : ১/৮০, সুনানে আবি দাউদ : ২৮০৪, সুনানে নাসাঈ : ৪৩৭২, তিরমিজি : ১৪৯৭)। তিনি আরও বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের শিংভাঙা বা কান-কাটা পশু দ্বারা কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩১৪৫, সুনানে আবি দাউদ : ২৮০৫)।
অন্ধ পশু
যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট, সে পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়। কোরবানির জন্য এ ধরনের পশু ক্রয় করা থেকে বিরত থাকা চাই। (তিরমিজি : ১/২৭৫, ফতোয়ায়ে কাজিখান : ৩/৩৫২, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৪)। বারা ইবনে আজেব (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘চার ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে না- যে পশুর চোখের জ্যোতি ক্ষতিগ্রস্ত, যে পশু অতি রোগাক্রান্ত, যে পশু বেশি খোঁড়া আর যে পশু অতি শীর্ণকায়।’ (মুয়াত্তায়ে মালেক : ২/৪৮২, তিরমিজি : ১৪৯৭, সহিহ ইবনে হিব্বান : ৫৯১৯, সুনানে আবি দাউদ : ২৮০২, সুনানে নাসাঈ : ৪৩৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩১৪৪)।
তিন পায়ে চলা পশু
যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না, এমন পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। কোরবানির জন্য এ ধরনের পশু ক্রয় করা থেকে বিরত থাকা চাই। (তিরমিজি : ১/২৭৫, সুনানে আবি দাউদ : ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩২৩, ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৭)।
ত্রুটিযুক্ত পশু
কোরবানির নিয়তে ভালো পশু ক্রয় করার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয়, যে কারণে কোরবানি জায়েজ হয় না, তাহলে ওই পশুর কোরবানি সহিহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কোরবানি করতে হবে। তবে ক্রেতা গরিব হলে (নতুন আরেকটি ক্রয় করার সামর্থ্য না থাকলে) ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কোরবানি করতে পারবে। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৬, ফতোয়ায়ে নাওয়াজিল : ২৩৯, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩২৫)।
লেখক : খতিব, কাজী ফিরোজ রশিদ জামে মসজিদ, ঘাঘরবাজার, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ