আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মানুষ পার্থিব এ জীবন সুন্দরভাবে যাপনের জন্য খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছেদসহ দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধ প্রয়োজনীয় জিনিসের সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ প্রয়োজনীয় জিনিস পূরণ করার ক্ষেত্রে রুচিবোধের ভিন্নতায় বিভিন্নজন নানান উপায়ে অর্থ উপার্জন করে থাকে। অর্থ উপার্জনের যত মাধ্যম আছে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মাধ্যম হলো, ব্যবসা-বাণিজ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়। আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর। আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর। যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা : ১০)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা (হজের সময় ব্যবসা বা মজুর খাটার মাধ্যমে) স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করলে তাতে তোমাদের কোনো গোনাহ নেই।’ (সুরা বাকারা : ১৮৯)।
এ আয়াত দুটিতে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানের কথা বলা হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য উপায়ে জীবিকা আহরণ করা। এতে প্রতীয়মান হয়, ফরজ নামাজ ও ফরজ হজ আদায়ের পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হলো, জীবিকা অনুসন্ধান করা। এ বিষয়টি রাসুল (সা.)-এর হাদিস থেকেও প্রমাণিত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অন্যান্য ফরজ কাজ আদায়ের পর হালাল রিজিক অনুসন্ধান করাও ফরজ।’ (সুনানে বাইহাকি : ১১৫৯৫)। অপর এক এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কোন উপার্জন শ্রেষ্ঠতম?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত অর্থ।’ (তাবারানি : ১৩৯৩৯)।
তবে ব্যবসা-বাণিজ্য যেহেতু একজন দ্বারা সম্পাদিত হয় না, বরং ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসাতে নানান মত-পথের মানুষের সঙ্গে লেনদেন করতে হয়, তাই পরস্পরে লেনদেনের ক্ষেত্রে অপরের যাবতীয় হকগুলো রক্ষা করে ব্যবসা পরিচালনা করা চাই। সততা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারিতা রক্ষা করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা কর্তব্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা (পরকালে) নবীগণ, সিদ্দিকগণ, সত্যবাদীগণ ও শহিদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি : ১২০৯)। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের শত ব্যস্ততার মাঝেও নামাজ, কালাম, জিকির-আজকার ইত্যাদি সব ইবাদতের প্রতি সদা সতর্ক থাকা চাই। যাতে ব্যবসার ব্যস্ততার কারণে শরিয়তের কোনো আমলে যেন ব্যাঘাত না ঘটে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘এমন লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহর স্মরণ, নমাজ কায়েম ও জাকাত আদায় থেকে গাফেল করতে পারে না। তারা ভয় পায় সে দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টি ওলট-পালট হয়ে যাবে।’ (সুরা নুর : ৩৭)। এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহতায়ালার এমন কিছু সৌভাগ্যবান বান্দা আছে, যারা আল্লাহর হুকুম-আহকাম অনুসারে জীবিকা উপার্জন করে, ব্যবসায়িক ধান্দায় পড়ে, তারা আল্লাহর স্মরণ ও তার হুকুম-আহকাম পালনে গাফেল হয়ে যায় না; বরং তারা সময়মতো নামাজ পড়ে, জাকাত ফরজ হলে আদায় করে।