প্রশ্ন : কোনো বাজার মসজিদে নামাজের জামাত দাঁড়াতে প্রায় পাঁচ-দশ মিনিট বিলম্ব হয়। জামাত নির্ধারিত সময়ে দাঁড়ানোর নিশ্চয়তা না থাকায় অনেক মুসল্লিই জামাতের অপেক্ষা না করে একাকী নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু দেখা গেল, অনেক সময়ই নামাজের বেশ কিছু অংশ (যেমন- এক রাকাত, দুই রাকাত, কখনো বা তিন রাকাত) পড়ে ফেলার পর জামাত আরম্ভ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর : প্রথম কথা হলো, এভাবে জামাত শুরু হওয়ার আগে একাকী নামাজ আদায় করাই ঠিক নয়। আর যদি জোহর বা ইশার নামাজ একাকী শুরু করার পর জামাত আরম্ভ হয়ে যায় এবং যদি পরিপূর্ণ এক রাকাত পড়া হয়ে যায়, তাহলে এর সঙ্গে আরেক রাকাত পড়ে নিয়ে সালাম ফেরাবে। তারপর জামাতে শরিক হবে। এ ক্ষেত্রে তার এ দু’রাকাত নফল বলে গণ্য হবে। আর যদি একাকী দুই রাকাত পড়ার পর জামাত শুরু হয়ে যায়, তাহলে তৃতীয় রাকাতে না দাঁড়িয়ে তাশাহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে এবং জামাতে শরিক হয়ে যাবে। কিন্তু যদি এক রাকাতও পূর্ণ করা না হয়ে থাকে, তাহলে ওই অবস্থায়ই নামাজ ভেঙে দিয়ে জামাতে শরিক হবে। উল্লেখ্য, মসজিদ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো, একটা নির্ধারিত সময়ে জামাত শুরু করা এবং বিশেষ কোনো ওজর না থাকলে ইমাম সাহেব ওই সময়ের মধ্যেই নামাজ শুরু করবেন; যেন মুসল্লিদের অন্যান্য কাজে ব্যাঘাত না ঘটে। (আল জামিউস সাগির : ৮৯, ফতোয়ায়ে খানিয়া : ১/৬৭, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১১৯, ফাতহুল কাদির : ১/৪১০, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ২/৩১০, আল বাহরুর রায়েক : ২/৭০, আদ্দুররুল মুখতার : ২/৫০)।
প্রশ্ন : নামাজ আদায়ের সময় প্রায় বিভিন্ন খারাপ শব্দ বা বাজে কথা মনে পড়ে। নামাজের বাইরেও মাঝে মাঝে এমন হয়। এটি নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে হয়। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী? আবার নামাজে দাঁড়ালে প্রায় মনে হয়, পায়ু পথে বায়ু বের হওয়ার কারণে অজুু ভেঙে গেছে। ফলে নামাজ ছেড়ে বারবার অজু করতে যেতে হয়। কিন্তু এ রকম হওয়ার মতো কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। এ ক্ষেত্রেও করণীয় কী?
উত্তর : নামাজের বাইরে খারাপ কথা মনে এলেই কবর ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে হবে। সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, কেউ না জানুক, রাব্বুল আলামিন আমার সব কাজ, সব অনুভূতি শুনছেন, দেখছেন। আর নামাজের মাঝে সুন্নতের প্রতি খেয়াল করে নামাজ পড়তে হবে। আর সঙ্গে সঙ্গে স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহতায়ালা আমাকে দেখছেন। আমরা আল্লাহর কুদরতি পায়ে সেজদা করছি। তাহলে নামাজে কুধারণা আসবে না, আশা করি। আর নামাজরত অবস্থায় যদি সুনিশ্চিতভাবে জানা না যায় যে, বায়ু বেরিয়েছে। তাহলে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। বায়ু বের হওয়ার নিদর্শন রাসুল (সা.) বলে দিয়েছেন। তা হলো, হয়তো গন্ধ বেরুবে, নইলে শব্দ শ্রুত হতে হবে। এছাড়া যদি সুনিশ্চিত ধারণা হয় যে, বায়ু বেরিয়েছে, তাহলেই নামাজ ছেড়ে অজু করতে হবে। শুধু ধারণার ওপর নামাজ ছাড়া যাবে না। (মুসনাদে আহমদ : ১৫৫০৬, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৫১২, মুসনাদুল হারেস : ৮৩, কানযুল উম্মাল : ২৬২৭৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৭৯৯৮)।
প্রশ্ন : নামাজে কোন অবস্থায় কাশি দেওয়া জায়েজ, আর কোন অবস্থায় নাজায়েজ?
উত্তর : নামাজে কাশি চলে এলে নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কাশি দেবে না। কেননা, বিনা প্রয়োজনে কাশি দিলে কখনো নামাজ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। (আল মুহিতুল বোরহানি : ২/১৫১, তাবঈনুল হাকায়েক : ১/৩৯২, হালবাতুল মুজাল্লি : ২/২৫৬, শরহুল মুনয়া : ৩৫১ ও ৪৪৮, আল বাহরুর রায়েক : ২/৫, মাজমাউল আনহুর : ১/১৭৯)।
প্রশ্ন : অনেক সময় পেশাবে ভেজা কাপড়সহ বাচ্চারা নামাজরত নারীদের কোলে বসে। এ অবস্থায় তার নামাজের ক্ষতি হবে কী?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশুটির কাপড়ের নাপাকি থেকে যদি নামাজরত নারীর কাপড় ভিজে না যায়, তাহলে বাচ্চা কোলে বসার দ্বারা তার নামাজ নষ্ট হবে না। কারণ, এ ক্ষেত্রে নাপাক বহনকারী হলো বাচ্চা। নামাজ আদায়কারীর শরীর এবং কাপড় সবই পাক। তার কোনো কিছুই নাপাক নয়, আবার সে নাপাক বহনকারীও নয়। তাই তার নামাজ নষ্ট হয় না। কিন্তু যদি শিশুটির জামার ভেজা থেকে উক্ত নামাজির কাপড়ও ভিজে যায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। (মুখতারাতুন নাওয়াযিল : ১/১৭১, ফাতহুল কাদির : ১/১৭৮, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/৭৮, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ২/৩৫২, আল বাহরুর রায়েক : ১/২২৮, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৩৪৭, শরহুল মুনয়া : ১৭৪)।
প্রশ্ন : প্রায় সময় নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হলে করণীয় কী?
উত্তর : প্রায় সময় রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে মুসল্লির করণীয় হলো, প্রবল ধারণা অনুযায়ী আমল করা। অর্থাৎ যত রাকাত হয়েছে বলে প্রবল ধারণা হয়, তত রাকাত ধরে নামাজ পূর্ণ করে ফেলা চাই। প্রবল ধারণা অনুযায়ী আমল করলে সেজদায়ে সাহু দিতে হবে না। আর যদি চিন্তার পরও কোনো রাকাতের ব্যাপারে প্রবল ধারণা না হয়, তাহলে সন্দীহান রাকাতগুলোর মধ্যে কম সংখ্যাটি ধরে নামাজ পূর্ণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি রাকাতে বসে তাশাহুদ পড়তে হবে এবং নামাজের শেষে সেজদায়ে সাহুও দিতে হবে। (বোখারি : ৪০১, তিরমিজি : ৩৯৮, কিতাবুল আসল : ১/১৯৩, শরহু মুখতাসারিত তাহাবি : ২/২৪, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/১৬৯, আল মুহিতুল বোরহানি : ২/৩৩৭, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৩০, আদ্দুররুল মুখতার : ২/৯৩-৯৪)।
প্রশ্ন : জায়নামাজের দোয়া পড়ার কোনো বিধান আছে কী?
উত্তর : জায়নামাজের কোনো দোয়া নেই। কোনো কোনো মহলে ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু’ দোয়াটি জায়নামাজের দোয়া নামে পরিচিত। কিন্তু এটি ঠিক নয়। এটি জায়নামাজের দোয়া নয়; বরং হাদিসে নামাজ শুরু করার পর সানা হিসেবে এ দোয়া পড়ার কথা আছে। (মুসলিম : ৭৭১, সুনানে আবি দাউদ : ৭৬০, রদ্দুল মুহতার : ১/৪৮৮, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/১৫১)।