ইসলামে এমন অনেক আমল রয়েছে, আপাত দৃষ্টিতে যা আমাদের কাছে খুব ছোট মনে হতে পারে; কিন্তু আল্লাহর কাছে তার সওয়াব ও প্রতিদান অনেক। এরকমই একটি আমল হলো, হাদিসের ভাষায় যার নাম ‘ইকালা’। অভিধানে ‘ইকালা’র অর্থ- বাতিল করা, প্রত্যাহার করা, ক্ষমা করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় ‘ইকালা’ বলতে বোঝায়, কেউ কারো কাছ থেকে কোনো পণ্য কিনে আনার পর যে কোনো কারণে আবার তার কাছে সেটা ফেরত নিয়ে গেলে, পূর্বনির্ধারিত মূল্যেই বিক্রেতার সেটা ফেরত নিয়ে নেয়া।
যাপিত জীবনে কখনো কখনো আমাদের সঙ্গে এমন ঘটে যে, আমরা টাকা দিয়ে দোকান থেকে একটা জিনিস কিনে নিয়ে আসি; কিন্তু বাড়িতে এসে দেখি, এমন জিনিস ঘরে আগে থেকেই কেনা আছে বা একটা প্রয়োজনে জিনিসটা কিনেছিলাম, পরে আর সে প্রয়োজন রইল না অথবা জিনিসটা কিনে আনার পর মনে মনে খুব পস্তাতে থাকি, কেন যে তা কিনতে গেলাম; এখন তো আমার টাকার খুব প্রয়োজন! এমন পরিস্থিতিতে দোকানদারের কাছে যদি পণ্যটি ফেরত নিয়ে যাই, সে আর তা ফেরত নিতে চায় না। মূলত এ ক্ষেত্রে ফেরত না নেয়াটা বিক্রেতার অধিকার, যা শরিয়ত তাকে দিয়েছে। কেননা, শরিয়ত বলেছে, বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর পণ্যে গ্রহণযোগ্য কোনো ত্রুটি পাওয়া না গেলে ক্রেতার জন্য সেটা ফেরত দেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
কিন্তু লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, শরিয়ত বিক্রেতাকে শুধু এ অধিকার দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি; বরং তাকে এ-ও বলেছে যে, কখনো বিপদে বা ঠেকায় পড়ে কোনো ক্রেতা যদি বিক্রীত পণ্য ফেরত নিয়ে আসে, তাহলে তার কাছ থেকে সেটা ফেরত নিয়ে সে যেন তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে এবং তার ঠেকা দূর করে। আর এর বদলা হিসেবে শরিয়ত তার জন্য বিশাল এক পুরস্কারেরও ঘোষণা দিয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের সঙ্গে ইকালা করবে (অর্থাৎ তার সঙ্গে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিকে পূর্বনির্ধারিত মূল্যে প্রত্যাহার করবে), আল্লাহতায়ালা তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৩৪৬০)। মানুষের উপকার করলে আল্লাহতায়ালা খুশি হন। তাই তার বদলাটাও তিনি অনেক বড় দিয়ে থাকেন। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের ওপর থেকে দুনিয়ার একটি বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহতায়ালা তার ওপর থেকে কেয়ামতের দিনের একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে কোনো কঠিন অবস্থায় নিপতিত ব্যক্তির জন্য সহজতার ব্যবস্থা করে দেবেন, আল্লাহতাআ’লা দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে সহজতা দান করবেন। আর যে কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবেন। মোটকথা, বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় লিপ্ত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহও তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৯৪৬)।