ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ক্যারিয়ারবিষয়ক পরামর্শ

ক্যারিয়ার ডেভেলপের পদ্ধতি

মুফতি ইউসুফ সুলতান, সহ-প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, আইএফএ কনসালটেন্সি লিমিটেড মধ্যবাড্ডা, ঢাকা
ক্যারিয়ার ডেভেলপের পদ্ধতি

সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সবচেয়ে উত্তম উপার্জন বা শ্রেষ্ঠ ডেভেলপ কী?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘এমন বিক্রয়, যাতে কোনো ধোঁকা নেই এবং একজন মানুষের নিজ হাতের কর্ম।’ আরেকটি হাদিস এসেছে, রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে পানাহ চাচ্ছি। জীবনের শেষ মুহূর্তের যন্ত্রণা ও কবরের আজাব থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।’ এর দ্বারা বোঝা যায়, একজন ডেভেলপার শক্তিশালী হবে। ফিট হবে। অলস হবে না। আমি এটা বলছি না, দুর্বলতা আমাদের মধ্যে থাকতে পারবে না। আল্লাহতায়ালা আমাদের দুর্বলতা দেবেন, কিন্তু আমরা অলসতা করে সময় অপচয় করব না।

বর্তমান বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয়। আমাদের কাছে স্মার্টফোন আছে। কম্পিউটার আছে। যার মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী মানুষ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে আমি কাজ পাচ্ছি না, আমি বেকার। এটা বলা খুব মন্দ কথা। কারণ, বর্তমান সময়ে অনলাইনভিত্তিক প্রচুর কাজ রয়েছে। অলসতা করে দুর্বলতাকে ঢাকার জন্য এমনটি বলা কখনোই কাম্য নয়। তরুণ প্রজন্মকে বলব, সময় নষ্ট করবেন না। সময় হচ্ছে, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সম্পদ। তরুণদের আল্লাহ বিপুল সময় দিয়েছেন। তাদের শরীরে এ্যানার্জি দিয়েছেন। তরুণদের সময় ও সক্ষমতা রয়েছে। চাইলেই তারা অনেক কিছু করতে পারে। সময় ও সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান মার্কেট এবং ফিউচার মার্কেটের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ না থেকে আউট যোগ্যতা অর্জন করা চাই। অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে। যেখানে সুন্দর সুন্দর কোর্সের মাধ্যমে আমরা প্রচুর পরিমাণে কর্মক্ষেত্রের সন্ধান পেতে পারি। গুগলের মাধ্যমে নিজেদের কর্মের পরিধি বাড়াতে পারি। এটা কিন্তু ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। অনেকে উল্টো ভেবে এগুলো থেকে পিছিয়ে রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি বস্তু যেন মোমিনের হারানো সম্পদ।’ একজন তার হারিয়ে যাওয়া সম্পদ যখন ফিরে পায়, তখন সে সেটাকে সবচেয়ে বেশি অধিকার হিসেবে ধরে। তাই যেখানে জ্ঞান পাওয়া যাবে, ব্যবহারযোগ্য করে সেটা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের রাতের ঘুমের সময় ঠিক নেই। রাতে তাদের ঘুমানোর কোনো নির্দিষ্ট রুটিন নেই। সারারাত তারা বিভিন্ন কাজে নষ্ট করে। বিভিন্ন মুভি ও গেমস দেখে। দিনের বড় একটা অংশ ঘুমায়। ফজরের সময় উঠতে পারছে না। এটা খুব দুঃখজনক। অনেকে ফেইসবুকে লেখে বা স্ট্যাটাস দেয় যে, ‘আমার ভালো লাগছে না। আমি অসহায়ত্ব অনুভব করছি।’ এর পেছনে মৌলিক কারণ হচ্ছে, রাতের ঘুম ঠিকমতো হয় না। রাতের ঘুমানোর যে রুটিন রয়েছে, সেটা ভঙ্গ করছে তারা। আল্লাহতায়ালা রাতকে আমাদের নিদ্রার জন্য বানিয়েছেন। আর দিবসকে রিজিক অর্জনের জন্য বানিয়েছেন। আল্লাহর এ নিয়ম আমরা বদলে ফেলেছি। ফলে আজ আমাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। যতদিন না আমরা এটা পরিবর্তন করতে পারব, রাতের ঘুম পর্যাপ্ত পূর্ণ না করতে পারব, ততদিন আমাদের মধ্যে হতাশা থেকেই যাবে। বলছিলাম, এখন অনেক রকম স্কিল রয়েছে। প্রত্যেকটা মানুষের অনেকগুলো স্কিল থাকা দরকার। একজন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ইংরেজি ভাষা জানা দরকার। আমরা যেহেতু মুসলমান, আল্লাহতায়ালা আমাদের কোরআন দিয়েছেন। আর কোরআনের ভাষা যেহেতু আরবি। তাই আমাদের আরবি ভাষা জানতে হবে। অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে ইংরেজিও জানতে হবে। অনেক ট্রেনিং, রিসার্চ রয়েছে; যার অধিকাংশ ইংরেজিতে। সেগুলো জানার জন্য অবশ্যই ইংরেজি জানতে হবে।

আরেকটি হচ্ছে, উপস্থাপন। নিজের যোগ্যতা ফুটিয়ে তুলতে হবে। হাজার মানুষের সামনে ফুটিয়ে তোলার কথা বলছি না। কিন্তু সামান্য হলেও ফুটিয়ে তোলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বর্তমান সময়ে শুধু যোগ্য হলে হবে না; বরং যোগ্যতার প্রচার ঘটাতে হবে। নিজের সুপ্ত প্রতিভাগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। আগে শুধু মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড জানলেই হতো; কিন্তু বর্তমান সময় আরো অনেক এগিয়েছে। সুতরাং মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড অফিস শিখেই ভাবলাম, অনেক কিছু শিখে ফেলেছি। এটা ভুল চিন্তাধারা। আমাদের আরো জানতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কীভাবে কাজ করা হয়! অনলাইনে যেসব সফ্টওয়্যার আছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা চাই। বর্তমানে ইন্টারনেট অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা দরকার। কেউ যদি ফ্রিল্যাংসিং করেন, তাহলে এসব বিষয়ে অনেক জানাশোনার ব্যাপার আছে। সেগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা চাই। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ভিডিও রয়েছে, সেগুলো দেখে কাজ শেখা উচিত। যদি একটা সফ্টওয়্যার পরিচালন পদ্ধতি জানা যায়, তাহলে অন্যান্য সফ্টওয়্যারও শেখা সহজ হয়। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিই। জিপিএ ফাইভ পাওয়াকে অনেক বেশি মাথায় রাখি। কিন্তু এর বাইরে বিভিন্ন যোগ্যতা রয়েছে, সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিই না। আমাদের আরো অধিক আউট যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তাহলেই যুগের চাহিদানুসারে যোগ্যতা ও মেধার সমন্বয়ে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করা সম্ভব।

অনুলিখন : আবদুল কাদের আফিফ

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত