ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সাবেক সহকারী মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা), টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : দানবক্সের টাকা দিয়ে ইমামণ্ডমুয়াজ্জিনের বেতন দেওয়া যাবে?

উত্তর : মসজিদের প্রয়োজনে ব্যয় করার জন্য মসজিদে মুসল্লিরা দান করে থাকেন। আর ইমামণ্ডমুয়াজ্জিনের বেতন সেই প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। তাই মসজিদের দানবাক্সের টাকা দিয়ে ইমামণ্ডমুয়াজ্জিনের বেতন দেওয়া জায়েজ আছে। (আদ্দুররুল মুখতার : ১৭/ ২৫৮, আল বাহররুর রায়েক : ৫/৩৫৬)।

প্রশ্ন : আমাদের এলাকার মসজিদের ক্যাশিয়ার সাহেব অত্যন্ত পরিশ্রমী ও বিশ্বস্ত। মসজিদের হিসাব-নিকাশ ও অন্যান্য কাজে অনেক সময় দেন। মসজিদের ফান্ড থেকে তার জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা যাবে?

উত্তর : মসজিদের ক্যাশিয়ার যদি মসজিদের কাজে উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করেন, তবে মসজিদের ফান্ড থেকে তার জন্য ন্যায্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা জায়েয হবে। আর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করলে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে নিতে হবে। (ফতোওয়ায়ে ওয়ালওয়ালিজিয়া : ৩/৯৬, ফতোওয়ায়ে বাজ্জাজিয়া : ৬/২৫৫, আল ইসআফ : ৫৩-৫৬, ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া : ২/৪৬১, রদ্দুল মুহতার : ৪/৩৭১)।

প্রশ্ন : আমাদের এলাকার মসজিদের ছাদে একটি কোম্পানি বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড লাগাতে চাচ্ছে। তারা বলেছে, যেহেতু মসজিদের ছাদ, তাই এতে তারা কোনো ছবি ব্যবহার করবে না। মসজিদটির ছাদে সাধারণত নামাজ পড়ারও প্রয়োজন হয় না। এমতাবস্থায়, এ মসজিদের ছাদে বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড লাগানো জায়েজ হবে?

উত্তর : মসজিদের ছাদে বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড লাগানো জায়েজ হবে না। কেননা, মসজিদের ছাদও মসজিদের অন্তর্ভুক্ত এবং মসজিদের মতোই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। মসজিদের কোনো অংশ যেমনিভাবে উপার্জনের মাধ্যম বানানো যায় না, তদ্রূপ ছাদের ক্ষেত্রেও একই বিধান। (আল বাহরুর রায়েক : ২/৩৪, ২৫১; আল মুহিতুল বোরহানি : ৯/১২৭, ফতোওয়ায়ে বাজ্জাজিয়া : ৩/২৮৫; আদ্দুররুল মুখতার : ৪/৩৫৮)।

প্রশ্ন : মুসল্লির সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় মসজিদে জায়গা হয় না। তাই মসজিদটি বড় করা দরকার। এদিকে মসজিদের পর্যাপ্ত খালি জায়গাও আছে। উক্ত জমির একাংশ বিক্রি করে তার অর্থ দিয়ে মসজিদ সম্প্রসারণ করা যাবে?

উত্তর : কোনো মসজিদের জমি সে মসজিদের ভবন নির্মাণের উদ্দেশেও বিক্রি করা জায়েজ নয়। তাই প্রশ্নোক্ত মসজিদণ্ডভবন নির্মাণের উদ্দেশেও মসজিদের ওই জমি বিক্রি করা জায়েজ হবে না। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৪২৫, ফতোওয়ায়ে তাতারখানিয়া : ৬/৬৬, আল বাহরুর রায়েক : ৫/২০৬, ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া : ২/৪৬৩)।

প্রশ্ন : অনেক সময় রাস্তাঘাটে টাকা-পয়সা পাওয়া যায়। খোঁজাখুঁজির পরও যদি মালিক না পাওয়া যায়, তাহলে কী করা হবে? অনেকে বলে, মসজিদে দিয়ে দিতে। মসজিদে দেওয়া জায়েজ হবে?

উত্তর : রাস্তাঘাটে কুড়িয়ে পাওয়া টাকা-পয়সার ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো, যদি টাকার পরিমাণ এত কম হয় যে, মালিক তা অনুসন্ধান করবে না বলে মনে হয়, তবে কোনো ফকিরকে তা সদকা করে দেবে। আর যদি অনেক টাকা বা মূল্যবান কোনো বস্তু পাওয়া যায় এবং মালিকের খোঁজে থাকবে বলে মনে হয়, তাহলে ওই স্থান ও আশপাশ এবং নিকটবর্তী জনসমাগমের স্থানে (যেমন- মসজিদের সামনে, বাজারে, স্টেশনে ইত্যাদিতে) প্রাপ্তির ঘোষণা দিতে থাকবে এবং প্রকৃত মালিক পেলে তার কাছে হস্তান্তর করে দেবে। কিন্তু এরপরও যদি মালিক না পাওয়া যায় এবং মালিকের সন্ধান পাওয়া যাবে না বলে প্রবল ধারণা হয়, তাহলে তা কোনো গরিব-মিসকিনকে সদকা করে দেবে। প্রাপক দরিদ্র হলে সে নিজেও তা রেখে দিতে পারবে। আর কুড়িয়ে পাওয়া টাকা মসজিদে দেওয়া যাবে না। প্রশ্নোক্ত ওই কথা ঠিক নয়। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ২/২৮৯, আদ্দুররুল মুখতার : ৪/২৭৮, ফাতহুল কাদির : ২/২০৮, আল মুহিতুল বোরহানি : ৮/১৭১)।

প্রশ্ন : মসজিদের জায়গায় মসজিদের উন্নয়নের জন্য নিচতলায় মার্কেট রেখে দোতলা থেকে মসজিদ বানানো যাবে কী?

উত্তর : মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত স্থানে নিচতলা মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা হলে পরবর্তী সময়ে বহুতল ভবন করার সময় নিচতলা বা অন্য কোনো ফ্লোরে দোকানপাট করা জায়েজ হবে না। তবে জায়গাটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের আগেই যদি নিচের দুয়েক তলায় দোকান করার সিদ্ধান্ত থাকে কিংবা ওয়াকফ দলিলেই এমন লেখা থাকে, তাহলে তা জায়েজ আছে। তদ্রূপ মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত স্থানে মসজিদ নির্মাণের আগে প্রথম থেকেই যদি নিচতলায় মার্কেট বানানো হয়, তবে জায়েজ হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে জায়েজ থাকলেও মসজিদের নিচে দোকানপাট না করাই উচিত। কেননা, মসজিদ হলো সর্বোৎকৃষ্ট স্থান আর বাজার হলো নিকৃষ্টতম স্থান। তাই মসজিদণ্ডভবনে শপিংমল, দোকানপাট থাকলে মসজিদের পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই মসজিদের আয়ের জন্যও মসজিদের নিচতলায় দোকানপাট করা থেকে বিরত থাকা উচিত। উল্লেখ্য, মসজিদের ব্যয় নির্বাহের জন্য মসজিদের জমিতে শপিংমল, দোকানপাট ইত্যাদি করতে চাইলে মসজিদের জন্য বেশি জমি ওয়াকফ করে মসজিদের ভবন থেকে দূরে পৃথক ভবন নির্মাণ করে বাণিজ্যিকভিত্তিতে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে মসজিদের পরিবেশও বজায় থাকবে এবং মসজিদের আয়েরও একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এ ছাড়া মসজিদের নিয়মিত জরুরি ব্যয় মুসল্লি ও সাধারণ মুসলমানের স্বতঃস্ফূর্ত দান থেকে নির্বাহ করা হবে। (সুরা জিন : ১৮, আল মুহাররারুল ওয়াজিয : ১৫/১৪৫, হাশিয়াতুশ শিলবি আলাত তাবঈন : ৪/২৭১, আল মুহিতুল বোরহানি : ৯/১২৭, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ৮/১৬২, আদ্দুররুল মুখতার : ৪/৩৫৮)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত