ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কল্যাণকর আপ্যায়ন

নিয়ামুল ইসলাম
কল্যাণকর আপ্যায়ন

আবু হুরায়রা (রা.)-সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, সেই আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি ক্ষুধার জ্বালায় মাটিতে পেট লাগাতাম এবং পেটে পাথর বাঁধতাম। একদিন লোকেরা যে রাস্তায় বের হয়, সেখানে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর রাসুল (সা.) আমাকে অতিক্রম করলেন। এভাবে বসে থাকতে দেখে মুচকি হাসলেন। আমার চেহারার অবস্থা ও মনের কথা বুঝে ফেললেন। বললেন, ‘আবু হুরায়রা! আমাকে অনুসরণ কর।’ তিনি চলতে লাগলেন। আমি তাকে অনুসরণ করলাম। নিজ ঘরে ঢুকে আমার জন্য অনুমতি চাইলেন। তারা অনুমতি দিলে আমি ঢুকলাম। ঘরে এক পেয়ালা দুধ দেখতে পেয়ে বললেন, ‘এ দুধ কোত্থেকে এলো?’ তারা বলল, ‘অমুক আপনার জন্য পাঠিয়েছে।’ তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘আহলে সুফফাকে ডেকে আন।’

তারা ছিলেন ইসলামের মেহমান, তাদের কোনো আশ্রয় ছিল না। ছিল না কোনো পরিবার ও ধন-সম্পদ বা অন্য কিছু। সদকা ও হাদিয়ার মাধ্যমে তাদের জীবন কাটত। রাসুল (সা.)-এর কাছে কোনো সদকা এলে তিনি সবটুকুই তাদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। তা থেকে নিজে কিছুই গ্রহণ করতেন না। তা ছাড়া কোনো হাদিয়া বা উপঢৌকন এলেও তাদের জন্য পাঠাতেন। তবে তা থেকে নিজে কিছু গ্রহণ করতেন। তিনি যখন তাদের ডাকতে বললেন, তখন আমার খারাপ লাগল।

মনে মনে বললাম, ‘এটুকু দুধে আহলে সুফফার কী হবে? আমিই তো বেশি হকদার ছিলাম। তারা এলে আমার ভাগে কতটুকুই বা জুটবে!’ অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর কথা মানা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও ছিল না। তাদের ডেকে আনলাম। অনুমতি নিয়ে তারা ঘরে প্রবেশ করে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। রাসুল (সা.) বললেন, ‘সবাইকে দুধ পান করাও।’ পেয়ালাটি নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তিসহ পান করে পেয়ালাটি ফেরৎ দিলেন। এরপর আরেকজনকে দিলাম। তিনিও তৃপ্তিসহ পান করে পেয়ালাটি ফেরৎ দিলেন। তারপর আরেকজনকে, এভাবে সবাই তৃপ্তিসহ পান করে পেয়ালাটি ফেরৎ দিলেন। অথচ পেয়ালা থেকে একটু দুধ কমেনি। সবশেষে রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে উপস্থিত হলাম। তিনি পেয়ালাটি নিয়ে নিজের হাতে রাখলেন। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘এখন বাকি আছি আমি আর তুমি।’ বললাম, ‘ঠিকই বলেছেন ইয়া রাসুলাল্লাহ!’ বললেন, ‘বসো এবং পান কর।’ আমি বসে পান করলাম। তিনি আবারও বললেন, ‘পান কর।’ আমি আবারও পান করলাম। এরপরও আমাকে পান করার কথা বলতেই থাকলেন। অবশেষে বললাম, ‘সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, এর জন্য আমার পেটে আর কোনো জায়গা নেই।’ বললেন, ‘এবার পেয়ালাটি আমাকে দাও।’ আমি তাকে পেয়ালা দিলে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। বিসমিল্লাহ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করলেন। (বোখারি : ৫৩৭৫)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত