যে আমলে রিজিক বাড়ে

হুমাইদুল্লাহ তাকরিম

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

তওবা-ইসতিগফার : তওবা-ইসতিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন। আর তোমাদের বাগবাগিচা ও নদীনালা দান করবেন।’ (সুরা নুহ : ১০-১২, সুরা ওয়াকিয়া : ৮২)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইসতিগফার করবে, আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন। অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৫১৮, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩/৮১৯, মুসতাদরাকে হাকেম : ৭৬৭৭)।

পরহেজগারি অবলম্বন ও আল্লাহর ওপর ভরসা : যেসব কাজকর্ম বা আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন করা এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ (সুরা সোয়াদ : ৩৫)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখ, তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ (তিরমিজি : ২৩৪৪, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪১৬৪)।

হজ-ওমরাহ পালন : বারবার হজ ও ওমরাহ পালন করার দ্বারা রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা লাগাতার হজ ও ওমরাহ পালন করতে থাক। কারণ, এর দ্বারা এমনভাবে অভাব ও গোনাহ দূর হয়, যেমনভাবে কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে দেয়।’ (তিরমিজি : ৮১০, সুনানে নাসাঈ : ২৬৩১)।

হিজরত ও জিহাদে অংশগ্রহণ : আল্লাহতায়ালার রাস্তায় হিজরত করা ও জিহাদে অংশগ্রহণ করার দ্বারা রিজিকে বরকত হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার রাস্তায় হিজরত করবে, জমিনে বহু আশ্রয়স্থল ও সচ্ছলতা পাবে সে।’ (সুরা নিসা : ১০০)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার বর্শার ছায়াতলে আমার রিজিক রাখা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৫৬৬৭, সুনানে বাইহাকি : ১১৫৪)।

সময়মতো নামাজ আদায় : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে। কাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহতায়ালার ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ (সুরা তহা : ১৩২)। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দারিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব মিটাব না।’ (তিরমিজি : ২৪৬৬, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪১০৭, মুসনাদে আহমদ : ৮৬৯৬)।

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় : রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম আমল হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আল্লাহতায়ালা আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করতে এবং তাদের হক যথাযথভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুরা নিসা : ৩৬, সুরা বনি ইসরাইল : ২৬)। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং আয়ু দীর্ঘ করা হোক, সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বোখারি : ৫৯৮৫, মুসলিম : ৪৬৩৯)।