ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সাবেক সহকারী মুফতি, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : যখন নতুন ফসল কাটা হয়, তখন ফসলের দাম কম থাকে। তাই কম দামে ক্রয় করে গুদামজাত করে রাখি। যখন বাজারে বেশি দাম হয়, তখন বিক্রি করি। এভাবে অধিক মুনাফা লাভের আশায় পণ্য গুদামজাত করে রাখতে কি কোনো অসুবিধা আছে?

উত্তর : অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খাদ্যশস্য বা সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য অধিক পরিমাণে আটকে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা শরিয়তে নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী) আটকে রাখে, সে গোনাহগার।’ (মুসলিম : ১৬০৫)। তাই মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য গুদামজাত করে আটকে রাখার কারণে বাজারে সংকট সৃষ্টি হলে এবং মানুষ অভাব অনটনের শিকার হলে এবং দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে, এ ধরনের গুদামজাত করা নাজায়েজ। আর যদি খাদ্য ও পণ্যসামগ্রী জমা করে রাখার বিষয়টি স্বাভাবিক পর্যায়ের হয়, মানুষের ক্ষতি ও অনটনের আশঙ্কা না থাকে এবং বাজারে ওই পণ্যের সংকট দেখা না দেয়, তাহলে এ জাতীয় সাধারণ গুদামজাত করাতে অসুবিধা নেই। (আল জামিউস সাগির : ৪৮১, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/৩০৯, আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৪২২)।

প্রশ্ন : ফার্মেসির লোকের কাছে কোনো কোনো রোগী ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে আমার কাছে পরামর্শ চায়। ফার্মেসির লোকটি যে ডাক্তারের কাছে রোগীদের পাঠায়, সেই ডাক্তার তাকে তার ফি’র পাঁচ শতাংশ দিয়ে থাকে। এভাবে কমিশনের টাকা গ্রহণ করা যাবে?

উত্তর : রোগীকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়াটা বিনিময়যোগ্য কাজ নয়। তাই আপনার জন্য কোনো রোগীকে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে বিনিময়ে কোনো কমিশন বা অন্য কিছু গ্রহণ করা জায়েজ নয়, বরং তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যে তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণকামিতা থাকা ইসলামের শিক্ষা ও দ্বীনের পরিচায়ক। (শরহুল আশবাহ : ৩/১২৯, ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়া : ৫/৪৮, রদ্দুল মুহতার : ৬/৯৫, আল মুহিতুল বোরহানি : ১১/৩৫৩)।

প্রশ্ন : এক ব্যক্তিকে আমার একটি জায়গা বিক্রি করার দায়িত্ব দিয়ে বলি, আমাকে কাঠা প্রতি ৩০ হাজার টাকা দামে ১০ কাঠায় ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করে দাও। সে আমাকে তিন লাখ টাকাতেই ওই জায়গাটি বিক্রি করে দেয়। কিছুদিন পর জানতে পারি, জমিটি সে কাঠা প্রতি ৩৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। বিষয়টি আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, আপনি যা চেয়েছেন, তা তো পেয়েছেন; তাহলে আমি বেশি দামে বিক্রি করলে আপনার সমস্যা কী? জানার বিষয় হলো, এভাবে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা জায়েজ হয়েছে? এই টাকার হকদার সে নাকি আমি?

উত্তর : জমিটি যে দামে বিক্রি করেছে, তা যদি ন্যায্যমূল্য হয়ে থাকে, তবে আপনার চাওয়া দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করা অন্যায় হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে বেশি মূল্যে বিক্রি করলেও পুরো মূল্যই আপনার প্রাপ্য। অতিরিক্ত অংশটা তার নিয়ে নেওয়া জায়েজ হয়নি। কেননা, তার পারিশ্রমিক তো নির্ধারিত আছে। সেটাই তার পাওনা। সুতরাং অবশিষ্ট টাকাগুলো আপনাকে দিয়ে দেওয়া লোকটির কর্তব্য। (আল মুহিতুল বোরহানি : ১৫/৮১, বাদায়েউস সানায়ে : ৫/২৬, মাজাল্লাতুল আহাকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা : ৫৭৮, দুরারুল হুক্কাম : ১/৬৬২)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত