নবীজি (সা.)-এর হাদিসের আলোকে একটি মূলনীতি হলো, অন্যের জন্য তা-ই পছন্দ করা চাই, নিজের জন্য মানুষ যা পছন্দ করে। সুন্দর, মূল্যবান, চমৎকার এ রীতিটি মেনে চললে অন্যান্য হাজারো সমস্যার মতো পারিশ্রমিক ও বেতন সংক্রান্ত সংকটও নিরসন হয়ে যাওয়ার কথা। সবাই সুখে-দুঃখে, সংকটে নিজেকে অন্যের স্থানে ভাবলে বিনয় ও সদয় হওয়ার গুণ অর্জন করলে সফলতা সুনিশ্চিত। বৈষম্য দূরীকরণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
শ্রমিকের মর্যাদা : ইসলামে বৈরাগ্যতা নেই, নেই কোনো বেকারত্বের প্রশ্রয়। পেশাকে তুচ্ছজ্ঞান করে কর্মবিমুখ হয়ে কথিত তাওয়াক্কুলও নিন্দনীয়। কারণ, কর্ম কখনোই তাওয়াক্কুলের সাংঘর্ষিক বা পরিপন্থি নয়। বৈধপথে যে কোনো পেশা গ্রহণ করে বান্দা স্বচ্ছল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করতে পারে। সব নবী-রাসুল কর্ম-পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। কেউ কেউ ছাগল চরিয়েছেন। আমাদের নবীজিও চরিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম জল-স্থলপথ অতিক্রম করে বাণিজ্যে যেতেন। খেজুর বাগানে কাজ করতেন। তারাই আমাদের আদর্শ। তা ছাড়া হস্তকর্মে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে অন্য কোনো পবিত্র খাবার নেই।
বেতনে কাটছাঁট জুলুম : মানুষের দুটি গুণ আছে- একটি ফেরেশতাগুণ, আরেকটি শয়তানিগুণ। প্রথমটির প্রভাবে বান্দা সদাচারী হয়। দ্বিতীয়টির প্রভাবে হয় দুরাচারী। অধীনস্থ ও চাকরিজীবীদের বেতন আমানত। তাই সঠিকভাবে এ আমানত ফিরিয়ে দেয়া মালিকের ওপর আবশ্যক। অনেককে দেখা যায়, অধীনস্থ চাকরিজীবী শ্রমিককে যথাযথ মূল্যায়ন তো দূরের কথা, উচিত বেতনটাই ঠিকমতো পরিশোধ করে না। কাটছাঁট করে প্রচুর। বাকি রেখে ভোগান্তিতে ফেলাসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করে থাকে। এটা জুলুম। অতীতে যত জাতি ধ্বংস হয়েছে, জুলুমের কারণেই হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনার আগে বহু জাতিকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা জুলুম করেছে।’ (সুরা ইউনুস : ১৩)। কোরআনে আরো এসেছে, ‘হে আমার জাতি! ইনসাফের সঙ্গে ঠিকভাবে পরিমাপ করো ও ওজন দাও। লোকদের জিনিসপত্রে কোনোরূপ ক্ষতি করো না। পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না।’ (সুরা হুদ : ৮৫)।
বেতন নিয়ে টালবাহানা নয় : অনেককে দেখা যায়, ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বেতন নিয়ে টালবাহানা করে থাকে। নিজের অধিকার আদায়ে কত সোচ্চার, কত সচেতন, কিন্তু অন্যের অধিকারকে পাওনা বা ঋণই মনে করে না। এর একমাত্র কারণ, মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ নয়। যেন স্বার্থে পূর্ণ। মালিক তখনই পূর্ণ অধিকার দেয়, যখন মনে করে- শ্রমিকের তার খুব প্রয়োজন। শ্রমিক ও চাকরিজীবীরাও পূর্ণ হক আদায় করে চলে, যখন তাদের খুব মুখাপেক্ষী মনে হয়। স্বার্থ শেষ তো উভয়ের সম্পর্কে গোলমাল। কোনো ক্ষেত্রে তা মারমুখীও পরিলক্ষিত হয়। উভয়েই আপন হক আদায় করে চললে এ সংকট নিরসন করা সম্ভব। কোরআন-সুন্নাহে বেতন নিয়ে গড়িমসি ও টালবাহানার অনেক নিন্দা করা হয়েছে।
সময়মতো বেতন দিন : রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম শ্রমিকের মূল্য, চাকরিজীবীর বেতন সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করতেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, আবু তাইবা (রা.) রাসুল (সা.)-এর শিংগা লাগান (হাজামা চিকিৎসা করেন)। পরে রাসুল (সা.) তার জন্য এক সা খেজুরের আদেশ করেন। এরপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা শ্রমিকের পারিশ্রমিক তার ঘাম শুকানোর আগেই পরিশোধ কর।’ (বোখারি : ২১০২, মুসলিম : ১৫৭৭)।