শেষ নবীর সেরা সুপারিশ
নিয়ামুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, একবার রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে এক দাওয়াতে ছিলাম। তাকে সামনের পায়ের একটি রান তুলে দেওয়া হলো। তিনি এ রান বড় পছন্দ করতেন। তা থেকে তিনি দাঁতে কেটে খেলেন। এরপর বললেন, কেয়ামতের দিন আমি হব সব মানুষের নেতা। তোমরা কি জান, কি কারণে? কেয়ামতের দিন পূর্বাপর সমগ্র মানবজাতি একই ময়দানে সমবেত হবে। সে ময়দানটি এমন হবে যে, সেখানে দর্শক তাদের দেখতে পাবে এবং আহ্বানকারী নিজ আহ্বান তাদের শোনাতে পারবে। সূর্য একেবারে কাছে এসে যাবে। মানুষ এতই দুঃখ-কষ্টে পড়বে যে, ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতাই তাদের থাকবে না। তারা বলবে, ‘দেখ, তোমাদের সবার কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, তোমাদের কি বিপদ এসে পৌঁছেছে! এমন কোনো ব্যক্তির খোঁজ কর, যিনি আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারেন।’
লোকেরা বলবে, ‘চল আদম (আ.)-এর কাছে যাই।’ এরপর তারা আদম (আ.)-এর কাছে এসে বলবে, ‘আপনি তো মানবজাতির পিতা, আল্লাহতায়ালা নিজ হাতে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং ফুঁক দিয়ে তাঁর রুহ আপনার মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন। তাঁর নির্দেশে ফেরেশতারা আপনাকে সেজদা করেছিলেন। আপনাকে জান্নাতে স্থান দিয়েছিলেন। সুতরাং আপনি কি আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন না? আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি কষ্টে আছি? আমরা কি যন্ত্রণা ভোগ করছি?’ আদম (আ.) বলবেন, ‘আমার প্রতিপালক আজ ভীষণ ক্রুদ্ধ আছেন, এমন ক্রুদ্ধ তিনি আর কোনোদিন হননি আর কখনও হবেনও না। তা ছাড়া তিনি আমাকে একটি গাছের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি তাঁর নির্দেশ অমান্য করেছিলাম। আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত! তোমরা বরং নুহ (আ.)-এর কাছে যাও।’
এরপর তারা নুহ (আ.)-এর কাছে এসে বলবে, ‘হে নুহ! আপনি তো পৃথিবীর বুকে প্রথম প্রেরিত রাসুল। আল্লাহতায়ালা আপনাকে শোকরগুজার বান্দা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আপনি কি আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন না? আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি কষ্টে আছি? আমরা কি যন্ত্রণা ভোগ করছি?’ নুহ (আ.) বলবেন, ‘আমার প্রতিপালক আজ ভীষণ ক্রুদ্ধ আছেন, এমন ক্রুদ্ধ তিনি আর কোনোদিন হননি আর কখনও হবেনও না। তা ছাড়া আমার একটি দোয়া ছিল, যার দ্বারা আমার জাতির ওপর বদদোয়া করেছি। আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত! তোমরা বরং ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে যাও।’
এরপর তারা ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে এসে বলবে, ‘হে ইবরাহিম! আপনি তো আল্লাহর নবী ও পৃথিবীবাসীর মধ্য থেকে তাঁর বন্ধু। আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি যন্ত্রণায় আছি?’ তিনিও তাদের বলবেন, ‘আমার পালনকর্তা আজ ভীষণ রাগান্বিত হয়েছেন, এমন রাগান্বিত তিনি আর কোনোদিন হননি আর কখনও হবেনও না। তা ছাড়া দুনিয়াতে আমি তিনটি সত্য কথা আড়াল করে বলেছি। সুতরাং আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত! তোমরা বরং মুসা (আ.)-এর কাছে যাও।’
এরপর তারা মুসা (আ.)-এর কাছে এসে বলবে, ‘হে মুসা! আপনি তো আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ আপনাকে তাঁর রেসালাত দিয়ে এবং আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমগ্র মানবজাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি দুর্ভোগ পোহাচ্ছি?’ তিনি বলবেন, ‘আজ আমার প্রতিপালক এত ক্রুদ্ধ হয়ে আছেন, এমন ক্রুদ্ধ তিনি এর আগে কখনও হননি এবং আগামীতেও আর কোনোদিন হবেন না। তা ছাড়া আমি তো পৃথিবীতে একটি প্রাণ হত্যা করেছিলাম, যাকে হত্যা করার কোনো নির্দেশ আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত! তোমরা বরং ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও।’
এরপর তারা ঈসা (আ.)-এর কাছে এসে বলবে, ‘হে ঈসা! আপনি তো আল্লাহর রাসুল। আপনি আল্লাহর সেই কালিমা, যা তিনি মারইয়ামের প্রতি প্রক্ষেপ করেছিলেন। আপনি হচ্ছেন তাঁর রুহ, আপনি জন্ম নেওয়ার পর শিশুকালে দোলনায় শুয়েই মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। অতএব, আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি যন্ত্রণায় আছি?’ তিনি তাদের বলবেন, ‘আমার পালনকর্তা আজ ভীষণ রাগান্বিত হয়েছেন, এমন রাগান্বিত তিনি আর কোনোদিন হননি আর কখনও হবেনও না।’ (এখানে তিনি তার কোনো অপরাধ উল্লেখ করবেন না)। আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত! তোমরা বরং মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যাও।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, এরপর তারা সবাই আমার কাছে এসে বলবে, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি তো আল্লাহর রাসুল। আপনি শেষ নবী। আল্লাহ আপনার পূর্বাপর যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন। অতএব, আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কি ভয়াবহ দুঃখ ও যন্ত্রণা ভোগ করছি।’ তখন আমি চলে যাব এবং আরশের নিচে আমার প্রতিপালকের জন্য সেজদাবনত হব। এরপর আল্লাহ তাঁর প্রশংসা ও গুণগানের জন্য আমার হৃদয়কে এমন উন্মুক্ত করে দেবেন, যেমন এর আগে আর কারও জন্য করেননি। এরপর তিনি বলবেন, ‘হে মুহাম্মদ! মাথা তোল। চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’
তখন আমি মাথা তুলে বলব, ‘আমার উম্মতকে রক্ষা করুন হে আমার প্রতিপালক!’ প্রতিত্তোরে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হবে, ‘হে মুহাম্মদ! তোমার উম্মতের মধ্যে যাদের কোনো হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদের ডান দিকের দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাও। এ দরজা ছাড়া তারা অন্য সব দরজাতেও সব মানুষের শরিক।’ এরপর তিনি বললেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! জান্নাতের একটি দরজার প্রশস্ততা হচ্ছে মক্কা ও (বাহরাইনের) হাজারের মধ্যবর্তী দূরত্ব অথবা মক্কা ও (সিরিয়ার) বসরার মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান।’ (বোখারি : ৩৩৪০ ও ৩৩৬১)।