দান করার দুটি দিক রয়েছে- একটি পাপের ও অপরটি পুণ্যের, একটি কল্যাণের ও অপরটি অকল্যাণের। একটির মাধ্যমে মানবকল্যাণ, সমাজকল্যাণ ও সৃষ্টিকল্যাণ হয়ে থাকে। আর অপরটির মাধ্যমে অকল্যাণ হয়ে থাকে। শুধু সেই দান উপকারী হয় ও পুণ্য নিয়ে আসে, যা আল্লাহর পথে প্রদান করা হয়, কল্যাণের পথে ব্যয় করা হয় ও পুণ্যের পথে প্রদত্ত হয়। পক্ষান্তরে পাপের পথে দান করা হলে তা উপকারের পরিবর্তে অপকার বয়ে আনে। দানকৃত অর্থ অনর্থ সৃষ্টিতে সহায়ক হয়। তাই দান দ্বারা আল্লাহর পথে, পুণ্যের পথে ও কল্যাণের পথের দানই উদ্দেশ্য।
দানে রিজিক বৃদ্ধি পায় : আল্লাহর পথে দান করা দাতার রিজিক বৃদ্ধির কারণ। যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে প্রচুর প্রতিদান প্রদান করেন। তার রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। সম্পদে ভরপুর বরকত দান করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৬)। মকোনো ব্যক্তিকে ধার দেওয়া হলে সেই ব্যক্তি অনুরূপ বস্তু ফিরিয়ে দেয়। অনেক সময় ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা ও কালক্ষেপণ করে। কিন্তু আল্লাহতায়ালাকে ধার দেওয়া হলে অর্থাৎ তার পথে ব্যয় করা হলে তিনি দাতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। তার সম্পদ বিপুল পরিমাণে বর্ধিত করে ইহ বা পরকালে ফিরিয়ে দেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এমন কে আছে, যে আল্লাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ। অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন এবং তিনিই প্রশস্ততা দান করেন। আর তাঁরই কাছে তোমরা ফিরে যাবে।’ (সুরা বাকারা : ২৪৫)।
বিপদ হতে মুক্তি মেলে : মানুষের অন্যায়, অনাচার ও পাপাচারের কারণে আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন। আর পরাক্রমশালী আল্লাহর অসন্তুষ্টি হতে নিষ্কৃতি পাওয়া ছাড়া উপায় নেই। তা ছাড়া প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করি, দুঃসংবাদ শুনে থাকি ও বিপদাপদের শিকার হই। আল্লাহর অসন্তুষ্টি, বিপদাপদ ও মন্দ মৃত্যু হতে পরিত্রাণ পাওয়ার কার্যকর উপায় হলো সুমহান আল্লাহর পথে দান করা। দান-খয়রাতের মাধ্যমে বিপদাপদ ও বালা-মসিবত দূর হয়। সঙ্গে সঙ্গে অকাল মৃত্যুও রোধ হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দান-খয়রাত আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং মন্দ মৃত্যু রোধ করে।’ (তিরমিজি : ৬৬৪)।
পাপ মোচন হয় : প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের অন্যায়-অপরাধ, ভুল-ভ্রান্তি ও পাপ-পঙ্কিলতা হয়েই যায়। এসব পাপের ক্ষতি ও পরিণতি হতে নিষ্কৃতি পাওয়ার এবং সব ধরনের গোনাহ মোচন করার অন্যতম উপায় হলো, আল্লাহর পথে দান করা।
আল্লাহর পথে দান করা হলে অন্যায়-অপরাধ ও পাপ-পঙ্কিলতা মোচন হয়ে যায়। অনাচার ও দুরাচার ক্ষমা করে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে করো এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। আল্লাহ তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দেবেন। তিনি তোমাদের কাজকর্মের খবর রাখেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭১)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা নেক আমলগুলো খেয়ে ফেলে, যেমন আগুন জ্বালানি কাঠ খেয়ে ফেলে। দান-খয়রাত গোনাহগুলো বিলীন করে দেয়, যেমন পানি আগুন নেভায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪২১০)।
দানের প্রতিদান সাতশ’ গুণ : আল্লাহর পথে এক টাকা দান করা হলে ৭০০ টাকা দান করার সওয়াব পাওয়া যায়। এমনকি আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কোরআন-হাদিসে উচ্চারিত হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো; যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে ১০০ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : ২৬১)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোনো কিছু দান করবে, তার জন্য ৭০০ গুণ সওয়াব লেখা হবে।’ (সুনানে নাসাঈ : ৩১৮৬)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে লোক তার হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণও দান করে, আল্লাহ তা তাঁর ডান হাত দ্বারা কবুল করেন। আর পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া আল্লাহর কাছে কোনো কিছু পৌঁছে না। তারপর এটি তার মালিকের জন্য লালন-পালন ও পরিচর্যা করতে থাকে, তোমরা যেমন ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন-পালন করতে থাকো। অবশেষে তা পর্বতের মতো বিরাট আকার ধারণ করে।’ (বোখারি : ৭৪৩০)।
আল্লাহর ছায়ায় আশ্রয় লাভ : দানকারী ব্যক্তি সবচেয়ে বড় যে পুরস্কার পাবে, তা হলো- আল্লাহতায়ালার ছায়াতলে অবস্থান করার সুযোগ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহতায়ালা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন।
তার একজন সেই ব্যক্তি, যে গোপনে এমনভাবে দান করে যে, তার ডান হাত যা দান করে, বাম হাত তা জানতে পারে না।’ (বোখারি : ১৪২৩)। রাসুল বলেন, ‘দান অবশ্যই কবরবাসীর কবরের উত্তাপ ঠান্ডা করে দেবে এবং মোমিন ব্যক্তি কেয়ামতে আল্লাহর ছায়ায় অবস্থান করবে।’ (সুনানে বায়হাকি : ৩৩৪৭)।