রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মাহে রমজান মানুষকে দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা ও মহত্বের শিক্ষা দেয়। কোনো প্রকার অপচয় না করে রোজার মাসে মানুষের সেবায় দান-সদকা করলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণ হয়; মানবতা উপকৃত হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনও ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরও বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী।’ (সুরা ফাতির : ২৯-৩০)।

রমজান এলে রাসুল (সা.) অত্যধিক দান-সদকা করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তার দানশীলতা (অন্য সময় থেকে) অধিকতর বেড়ে যেত। জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন। তারা পরস্পর কোরআন শোনাতেন। রাসুল (সা.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল হতেন।’ (মুসলিম : ২৩০৮)। রাসুল (সা.) উম্মতকেও এ মাসে দান ও বদান্যতার হাত সম্প্রসারিত করতে শিখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা গোপনে দান করবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন।’ (বোখারি : ৬৬০)।

দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু। আর তার পুরস্কার বিশেষভাবে একমাত্র তিনিই দেবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা : ২৭৪)। রমজানের অন্যতম আমল এই দান-সদকা। তাই রোজাদার ব্যক্তিকে ইবাদতে মগ্ন থেকে সহানুভূতি, সদয় আচরণ, দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

দানশীলতা ও বদান্যতা একটি মহৎ গুণ। রমজানে রোজাদারগণ রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, তবে তা কতই না উত্তম; আর যদি গোপনে করো এবং অভাবীকে দাও, তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। এতে তিনি তোমাদের গোনাহ মোচন করে দেবেন। আর তোমরা যে আমল করো, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা বাকারা : ২৭১)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম।

যারা তোমার অধীন আছে, তাদের থেকেই দান আরম্ভ করো। উত্তম দান হচ্ছে, যা প্রাচুর্য থেকে প্রদান করা হয়।’ (তিরমিজি : ১৯৫২)।

দানকারীর পুরস্কারের ব্যাপারেও রাসুল (সা.)-এর সুসংবাদ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহশতের নিকটতম এবং মানুষের নিকটতম হয়ে থাকে; আর জাহান্নাম থেকে দূরে থাকে।

অপরদিকে কৃপণ ব্যক্তি দূরে অবস্থান করে আল্লাহ থেকে, বেহেশত থেকে এবং মানুষের কাছ থেকে; আর কাছাকাছি থাকে জাহান্নামের। অবশ্যই একজন জ্ঞানহীন দাতা একজন কৃপণ ইবাদতকারীর তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।’ (বোখারি : ১৮১৩)। তাই সাধ্যানুযায়ী অনাথ, আর্ত, সহায়-সম্বলহীন ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দানের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রত্যেক রোজাদারের উচিত।