ট্রাস্টে জাকাত দেওয়ার বিধান

বিন ইয়ামিন সানিম

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের দেশে বর্তমানে শত-শত এনজিও, ট্রাস্ট, দাতব্যসংস্থা ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যেগুলো নিঃস্বার্থে মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। আর সমাজের উল্লেখযোগ্য একটি শ্রেণি এসব প্রতিষ্ঠানে নিজেদের দান-সদকা ও জাকাতের সম্পদ দিয়ে থাকেন। অবশ্য এসব এনজিওর মাধ্যমে জাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে ভালো-খারাপ দুটো দিকই রয়েছে। কারণ যদি শরঈ দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জাকাত আদায় করা না হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল গোনাহগার হবেন। যারা জাকাত দিয়েছেন, তাদের জাকাতও আদায় হবে না। দাতাগ্রহীতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পক্ষান্তরে সবকিছু শরিয়া মেনে হলে জাকাত সর্বোত্তম খাতে ব্যয় হবে বলে আশা করা যায়। প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরাও সমপরিমাণ জাকাত দানের সওয়াব লাভ করবে। তাই জাকাত দেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠান পরিপূর্ণ শরিয়া মেনে তা আদায় করে কি-না, সে বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।

আফসোস, অনেক প্রতিষ্ঠানে জাকাতের সম্পদ পরিপূর্ণ শরিয়া অনুযায়ী খরচ করে না। কখনও দেখা যায়, জাকাতের সম্পদ অনুপোযুক্ত ব্যক্তি তথা ধনী ও অমুসলিমদেরও দিয়ে দেয়। আবার নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক বিল্ডিং নির্মাণসহ কর্মকর্তাদের বেতন পর্যন্ত দিয়ে থাকে। মোটকথা, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় শরঈ বিধানের বহির্ভূত বহু কাজ করে ফেলে। যার কারণে জাকাত সঠিকভাবে আদায় হয় না। অথচ জাকাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে তা দেওয়া আবশ্যক। আর কাউকে জাকাতের সম্পদের মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অতএব, যদি কোনো হকদারকে জাকাতের সম্পদ দেওয়া হয়, কিন্তু মালিক বানানো না হয়, তাহলে জাকাত আদায় হবে না। মালিক বানানোর প্রসিদ্ধ দুটি পদ্ধতি রয়েছে- এক. সরাসরি মালিক বানানো, দুই. ওকালতের মাধ্যমে মালিক বানানো। সুতরাং কোনো এনজিওকে জাকাত দেওয়ার সময় সর্বপ্রথম দেখতে হবে, তারা জাকাত গ্রহণ করে কি-না। তারপর নিশ্চিত হতে হবে, জাকাতের অর্থগুলো তারা উপযুক্ত ব্যক্তিদের দেয় কি-না। হকদারদের মালিক বানিয়ে দেয় কি-না।

কিছু এনজিও সরাসরি উপযুক্তদের জাকাতের মালিক বানিয়ে দেয়। যেমন- কোনো গরিব ব্যক্তিকে টাকা বা অন্য কোনো সম্পদের মালিক বানিয়ে দিল। আর কিছু এনজিও আছে, যারা বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মসজিদণ্ডমাদ্রাসা, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নির্মাণ করে। গরিবদের বিভিন্ন সেবামূলক কাজ তথা পড়ালেখা, চিকিৎসা ও খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির আঞ্জাম দেয়। কিন্তু তাদের হাতে টাকা দেয় না। প্রথম প্রকারের প্রতিষ্ঠানে জাকাত দেওয়া মোটামুটি ঝুঁকিমুক্ত।

জাকাত বিশুদ্ধভাবে আদায় হওয়ার জন্য উল্লিখিত শর্তদুটি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুটি ফরম ব্যবহার করা জরুরি-

১. পর্যালোচনা ফর্ম (Assessment form)। যাতে প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধাভোগীকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করে (যেমন, সে মুসলিম কি-না, কোরআনে বর্ণিত জাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তি কি-না, সাইয়্যিদ কি-না, নেসাবের মালিক কি-না ইত্যাদি) সে জাকাতের অর্থ খাওয়ার উপযুক্ত কি-না, এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফলে এখানে প্রথম শর্তটি তথা উপযুক্ত সাব্যস্ত হয়ে যায়।

২. ওকালতনামা (Agency Agreement)। এ ফর্মে উপযুক্ত ব্যক্তির পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানকে উকিল হয়ে জাকাত উসুল করা ও তাদের কল্যাণে খরচ করার অনুমতি দেওয়া হবে।

অতএব, জাকাতের দ্বিতীয় শর্তও তথা মালিক বানানো পাওয়া গেল। আর অবশ্যই এ ফর্মগুলোতে স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করতে হবে। কেউ পড়তে না পারলে তাকে পড়ে শোনাতে হবে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর করালে হবে না। যখন এ কর্যক্রম সম্পন্ন হবে, তখন কেউ যদি ওই প্রতিষ্ঠানে জাকাত দেয়, তাহলে ধরা হবে, সে যেন ওই গরিবকেই জাকাত দিলো। আর টাকা গরিবের হাতে দেওয়াও তখন জরুরি নয়; বরং তার কল্যাণে খরচ করলেই হবে।

তবে সর্বসাধারণের ওসব প্রতিষ্ঠানে জাকাত দেওয়া উচিত, যারা কোনো নির্ভরযোগ্য মুফতি সাহেবের মাধ্যমে নিজেদের শরঈ মাসআলাগুলোর অডিট করিয়ে নেয় বা কোনো নির্ভরযোগ্য মুফতি সাহেব কোনো সংস্থার অ্যাডভাইজর হন। তিনি রীতিমতো ওই প্রতিষ্ঠানকে সার্টিফিকেট দেন যে, উক্ত প্রতিষ্ঠান শরিয়ামতে জাকাত উসুল ও খরচ করে।

দ্বীনিপ্রতিষ্ঠান তথা মাদ্রাসায় জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রেও এমন হওয়া উচিত। অর্থাৎ জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ছাত্ররা ফর্মে লিখিত আকারে মাদ্রাসা পরিচালককে তাদের পক্ষ থেকে জাকাত উসুল ও খরচ করার উকিল বানিয়ে নেবে। পরিচালক সাধারণ মানুষ থেকে জাকাত গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তা ছাত্রদের মালিকানায় আসার দ্বারা জাকাত আদায় হয়ে যাবে। ওকালতনামায় দেওয়া অধিকার অনুযায়ী তা তিনি ছাত্রদের কল্যাণে খরচ করবেন।