কেনাকাটা : মহিমান্বিত ঈদকে বরণ করে নিতে ও উপভোগ্য করে তুলতে ঈদের বেশ আগ থেকে মুসলমানদের মাঝে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়। নেওয়া হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। এর একটি অংশ হলো, ঈদের কেনাকাটা। এ দিনকে উপলক্ষ্য করে ছোট-বড় সবাই বাহারি পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজপণ্য কিনে থাকে।
এটা নিছক কোনো রেওয়াজ নয়, সুন্নতও বটে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত আছে, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল, এমন একটি রেশমি জুব্বা নিয়ে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এটি কিনুন। ঈদ উপলক্ষ্যে এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন।’ (বোখারি : ৯৪৮)।
ঈদবাজারকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয় অর্থনীতির এক বিশাল চক্র। ঈদের দিন সবাই সাধ্যমতো নতুন পোশাক পরেন। এ দেশে প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে কোটি টাকার লেনদেন হয় শুধু নতুন পোশাক ও বিশেষ খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কাছে অতীতের হিসাবমতে, সারাদেশে প্রায় ২৫ লাখ দোকান (মুদি দোকান থেকে কাপড়ের দোকান) রয়েছে। এসব দোকানে বছরের অন্য সময় প্রতিদিন ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও রোজার মাসে ঈদ উপলক্ষ্যে সেটি তিনগুণ বেড়ে হয় ৯ হাজার কোটি টাকা। ওই হিসেবে রোজার এক মাসে এই ২৫ লাখ দোকানে ঈদের পোশাক থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য বিক্রি হবে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার। এবারের ঈদে চাকরিজীবীরা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ঈদবোনাস তুলেছেন। এর প্রায় পুরোটা ব্যয় হবে ঈদবাজারে। এই ঈদবাজারকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিশাল কর্মস্থান। যেটা অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব রাখে।
পরিবহন : ঈদ উপলক্ষ্যে সবাই আপন কর্মস্থান ছেড়ে নাড়ির টানে গ্রামে ফেরে। ঈদ উদযাপন শেষে আবার ফিরে আসে শহরে। এই আগমন-প্রস্থানে পরিবহন সেক্টরে অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ঈদ বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখছে।
ফেতরা : ঈদুল ফিতরের অন্যতম প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় সদকাতুল ফিতর। নির্দিষ্ট নেসাব পরিমাণ মালের মালিককে ঈদগাহে যাওয়ার আগে তা আদায় করতে হয়। এর মাধ্যমে পুঞ্জিভূত সম্পদ সর্বসাধারণের মাঝে বণ্টিত হয়। দারিদ্র্য বিমোচনে এটি বেশ প্রভাব রাখে। এর মাধ্যমে তৈরি হয় ধনী-গরিবের মাঝে সম্প্রীতি ও সাম্য। দূর হয় অর্থনৈতিক বৈষম্য। সুতরাং বলা যায়, বিশ্বঅর্থনীতির সমৃদ্ধতায় ঈদের গুরুত্ব অপরসীম।