উপার্জনে নির্দেশনা

দারিদ্র্যতা ঈমানি চেতনা ও তাকওয়ার পরিপন্থি। সঠিকভাবে ইসলামি জীবনযাপন করতে চাইলে অবশ্যই অর্জনক্ষম হতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে হবে। নিজেকে দারিদ্র্যতার অভিশাপমুক্ত করতে হবে। ইসলামে উপার্জনের গুরুত্ব নিয়ে লিখেছেন- আশরাফুল হুদা চৌধুরী

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষ নবী ও রাসুল। তারা কোনো না কোনো পেশা অবলম্বন করেছেন, শ্রম দিয়েছেন। আদি পিতা আদম (আ.) কৃষক ছিলেন। নুহ (আ.) কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। দাউদ (আ.) কর্মকার ছিলেন। ইদরিস (আ.) দর্জি ছিলেন। ইবরাহিম (আ.) রাজমিস্ত্রি ছিলেন। ইসমাঈল (আ.) রাজমিস্ত্রির জোগালি ছিলেন। আমাদের প্রিয়নবী (সা.) ছাগল চরিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারও পক্ষে এক বোঝা জ্বালানি সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নিয়ে আসা অন্যের কাছে কিছু চাওয়া অপেক্ষা উত্তম। কেন না, অনেক সময় চাইলে সে দিতেও পারে, না-ও দিতে পারে।’ (বোখারি : ২০৭৪)।

প্রাত্যহিক কাজকর্ম সওয়াব ও পুণ্যের : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নামাজ শেষে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ করো।’ (সুরা জুমা : ১০)। একবার এক সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে আর্থিক সাহায্য চাইলে তিনি তার শেষ সম্বল বাটি ও কম্বল বিক্রি করে তা দিয়ে কুঠার কিনতে বলেন। রাসুল (সা.) নিজ হাতে কুঠারের হাতল লাগিয়ে দেন। সেই সাহাবিকে জঙল থেকে কাঠ কেটে তা বাজারে বিক্রি করার নির্দেশ দেন। এভাবে কর্মমুখী জীবন নির্বাহের ব্যবস্থা করে দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিজ হাতের শ্রমে উপার্জিত জীবিকার চেয়ে উত্তম আহার কেউ কখনও গ্রহণ করেনি। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।’ (বোখারি : ২০৭২)।

নবীযুগে নিজ হাতে কাজকর্ম : প্রিয়নবী (সা.) নিজে কর্মব্যস্ত থাকতেন। সাহাবিদেরও কাজ করে জীবিকা উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করতেন। এমনকি কাজ করার কারণে রাসুল (সা.)-এর হাতে ফোসকা পড়ে যেত। সে হাত দেখিয়ে তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এরূপ শ্রমাহত হাত খুবই পছন্দ করেন।’ সাহাবিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তাদের শরীর ঘেমে যেত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত আছে, সাহাবিরা নিজেদের কাজ-কর্ম নিজেরা করতেন। ফলে তাদের শরীর ঘেমে যেত। এ জন্য তাদের বলা হলো, ‘যদি তোমরা গোসল করে নাও (তবে ভালো হয়)।’ (বোখারি : ২০৭১)।

কর্মসংস্থান তৈরিতে ইসলাম : ইসলাম বেকার যুবকদের কর্মমুখী করা ও অনাবাদি জমির সঠিক ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব জমিনই আল্লাহর এবং সবাই আল্লাহর বান্দা। কাজেই যে ব্যক্তি কোনো অনাবাদি জমিন আবাদ করবে, সে তার মালিক হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৩০৭৬)। কর্মের প্রতি উৎসাহদানের পাশাপাশি ইসলাম কর্মজীবীদের কর্মঘণ্টা, কর্মপরিবেশ ও পারিশ্রমিক প্রাপ্তির নিশ্চয়তাসহ তাদের সব অধিকার বাস্তবায়নেরও তাগিদ দিয়েছে। সুতরাং হালাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অবলম্বন করে ব্যক্তি ও পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করা ইসলামের আদর্শ।