অর্থনীতির গল্প
বদল
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিয়ামুল ইসলাম
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, একবার রাসুল (সা.)-এর একদল সাহাবি কোনো এক সফরে বের হন। তারা আরবের কোনো এক জনপদে যাত্রা বিরতি করেন। সেখানকার লোকদের কাছে মেহমান হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তারা তাদের মেহমানদারি করতে অস্বীকার করে। ঘটনাক্রমে ওই জনপদের সর্দারকে কোনো এক বিষাক্ত প্রাণী দংশন করে। এলাকার লোকেরা তাকে আরোগ্য করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের কোনো চেষ্টাই সর্দারকে সুস্থ করতে পারে না। তারা পড়ে যায় মহাবিপদে। কী করবে, কিছুই বুঝতে পারছিল না। এমন সময় তাদের কেউ কেউ বলল, ‘তোমরা যদি এখানে যাত্রা বিরতিকারী দলের কাছে যাও, তাহলে হয়তো তোমরা তাদের কারও কাছে এমন কিছু পেতে পার, যা আমাদের সর্দারের উপকারে আসতে পারে।’
তাদের কয়েকজন সর্দারকে নিয়ে সাহাবিদের কাছে এসে বলল, ‘আমাদের সর্দারকে কোনো এক বিষাক্ত প্রাণী দংশন করেছে। তার আরোগ্যের জন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি; কিন্তু কোনো ফল পাইনি। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে তোমাদের কাছে এলাম। এখন বলো, তোমাদের কেউ কি ঝাড়ফুঁক জানো?’ সাহাবিদের থেকে কেউ একজন বললেন, ‘আমি ঝাড়ফুঁক জানি।’ লোকটা বলল, ‘তুমি আমাদের সর্দারকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে দাও।’ সাহাবি বললেন, ‘এ কাজ আমি বিনামূল্যে করতে পারব না। কেন না, আমরা তোমাদের কাছে মেহমান হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলে তোমরা আমাদের মেহমানদারি করতে অস্বীকার করেছ। কাজেই তোমরা যদি আমাকে পারিশ্রমিক দিতে রাজি না হও, তাহলে আমি ঝাড়ফুঁক করব না।’ তারা তাকে কয়েকটি বকরি পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়ার চুক্তি করল।
সাহাবি রোগীর কাছে উপস্থিত হলেন। সুরা ফাতিহা পড়লেন। দংশিত স্থানে মুখের থুথু লাগিয়ে দিলেন। আল্লাহর রহমতে সর্দার রোগমুক্ত হলো। জনপদের লোকেরা পারিশ্রমিক হিসেবে সাহাবিকে তার প্রাপ্য বকরি দিল। বকরিগুলো পেয়ে সাহাবিরা বললেন, ‘এগুলো আমাদের মধ্যে বণ্টন করে দাও।’ ঝাড়ফুঁককারী সাহাবি বললেন, ‘তোমরা এরূপ করো না। কেন না, আমাদের জানা নেই, এগুলো নেওয়া যাবে কি না। তাই আমরা আগে রাসুল (সা.)-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করব। তিনি যা বলবেন তাই করব।’ পরদিন সকালে তারা রাসুল (সা.)-এর কাছে এলেন। তাকে পুরো ঘটনা খুলে বললেন। রাসুল (সা.) সব শুনে বললেন, ‘তোমরা কীভাবে জানলে যে, সুরা ফাতিহা পড়ে ঝাড়ফুঁক করা যায়? তোমরা তো ভালো কাজই করেছ। তোমাদের সঙ্গে আমাকেও শামিল করো। অর্থাৎ আমার জন্যও একটা ভাগ নির্ধারণ করো।’ সাহাবিরা তাই করলেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২১৫৬)।