ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যবসায় সততার পুরস্কার

মিজান ইবনে মোবারক
ব্যবসায় সততার পুরস্কার

আল্লাহর ইবাদতের জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ইবাদত করতে প্রয়োজন হয় দৈহিক শক্তি-সামর্থ্যরে। তাই মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করে। কেউ চাকরির মাধ্যমে, কেউ বা ব্যবসা ইত্যাদির মাধ্যমে আয়ের জোগান দিয়ে থাকে। আল্লাহর প্রতিনিধি নবীগণও কাজকর্ম করতেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। সে ব্যবসা ছিল সৎ ও সততার, ন্যায় ও নিষ্ঠার। যারা নবীদের মতো সৎ ব্যবসায়ী হবে, হাদিসের ভাষায় তারা পরকালে নবীদের সঙ্গী হবে। সৎ ব্যবসায়ী হতে হলে কিছু গুণের অধিকারী হওয়া আবশ্যক।

ভালো পণ্য দেওয়া : একজন সৎ ব্যবসায়ী ক্রেতাকে পণ্য দেওয়ার সময় কখনও ধোঁকা দেয় না। নিজের জন্য যেমন ভালো জিনিস পছন্দ করে, ক্রেতাকে দেওয়ার সময়ও ভালো জিনিসটা দিতে পছন্দ করে। প্রকৃত মোমিন এমন গুণে গুণান্বিত হয়। মানুষ এমন ব্যবসায়ীদের দ্বারা উপকৃত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সেই সত্তার কসম! যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ। তোমাদের কেউ পূর্ণ মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজের ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে থাকে।’ (নাসায়ি : ৫০১৭)।

সঠিক পরিমাপ করা : সৎ ব্যবসায়ীরা আল্লাহকে ভয় করে। তারা অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করে না। অন্যায়ের পথে পা বাড়ায় না। ওজনে কারচুপি করে মানুষকে প্রতারিত করে না। যারা মাপের ক্ষেত্রে মানুষকে প্রতারিত করে, তাদের দুর্ভোগ সীমাহীন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে; আর যখন তাদের মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি বিশ্বাস করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে। এক মহাদিবসে, যেদিন সমস্ত মানুষ সৃষ্টিকুলের রবের সামনে দাঁড়াবে।’ (সুরা মুতাফফিফিন : ১-৬)।

প্রতারণামূলক কসম না করা : অনেক বিক্রেতা ক্রেতার বিশ্বাস অর্জনের জন্য অনর্থক কসম করে। ইসলাম এটা পছন্দ করে না। এতে ব্যবসার বরকত উঠে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা সৎ কাজ, তাকওয়া ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহর নামের শপথকে অজুহাত করো না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা : ২২৪)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বিক্রয়কালে অত্যধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা, এতে মাল কেটে যায় (পণ্য বিক্রি হয়); কিন্তু আয় কমিয়ে দেয়।’ (নাসায়ি : ৪৪৬১)।

বিক্রীত পণ্য ফেরত নেওয়া : বেচাকেনা হয় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতিতে। কখনও ক্রেতা ক্রয়কৃত জিনিসটি কোনো কারণে ফেরত দিতে পারে। ইসলামের পরিভাষায় এটাকে ইকালা বলে। বিধানটি এসেছে মানুষের উপকার, সাহায্য, সহানুভূতির উদ্দেশ্যে এবং জটিলতা বা অসুবিধা দূর করার জন্য। সৎ ব্যবসায়ীদের মাঝে এ গুণটিও বিদ্যমান থাকে। তারা বিক্রীত পণ্য সাদরে ফেরত নেয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের (অনুরোধে তার) সঙ্গে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করবে, আল্লাহ তার গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৪৬০)।

নমনীয় হওয়া : সৎ ব্যসায়ীরা ক্রেতাদের প্রতি নমনীয় হয়। তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে। এমন বিক্রেতাকে ক্রেতারাও পছন্দ করে। আল্লাহর রহমত তার প্রতি বর্ষিত হয়। কেননা, উত্তম আখলাকের মানুষ আল্লাহর প্রিয় পাত্র। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিক্রয়কালে উদারচিত্ত, ক্রয়কালেও উদারচিত্ত এবং পাওনা আদায়ের তাগাদায়ও উদারচিত্ত, আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি দয়া করেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২০৩)। অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা এমন এক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যে ক্রয়-বিক্রয়কালে, ঋণ প্রদান ও আদায়কালে লোকদের সঙ্গে কোমল ব্যবহার করত।’ (নাসায়ি : ৪৬৯৬)।

আল্লাহর প্রশংসার পাত্র : সৎ ব্যবসায়ীরা আল্লাহর হুকুম পালনে সর্বদা সজাগ থাকে। তাদের কেনাবেচা আল্লাহর হুকুম পালনে প্রতিবন্ধক হয় না। এমন ব্যবসায়ীদের প্রশংসা করে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এমন বহু লোক রয়েছে, ব্যবসা ও কেনাবেচা যাদের আল্লাহর স্মরণ, সালাত কায়েম ও জাকাত আদায় থেকে বিরত রাখতে পারে না।’ (সুরা নুর : ৩৭)।

কেয়ামতের ভয়াবহতা হতে নির্ভীক : কেয়ামতের দিন সবাই যখন ভয়ে ভীত থাকবে। সৎ ব্যবসায়ীদের অবস্থা হবে তখন নির্ভয়ের। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা কেয়ামতের দিন উপস্থিত হবে পাপাচারী হিসেবে। তবে সেসব ব্যবসায়ী ছাড়া, যারা আল্লাহভীরু, সৎকর্মশীল ও সত্যবাদী। কেয়ামতের দিন তাদের কোনো ভয় নেই।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ২৭৯৯)।

জান্নাতের পথে অগ্রসর : সৎ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে যেভাবে দুনিয়ায় এগিয়ে যায়, তেমনি আখেরাতের জীবনেও তারা জান্নাতের পথে অগ্রসর হতে থাকে। কেননা, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য হয় সত্যের। আর সত্যের পরিণাম জান্নাত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সত্য নেকির দিকে পরিচালিত করে আর নেকি জান্নাতে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের ওপর কায়েম থেকে অবশেষে সিদ্দিকের মর্যাদা লাভ করে।’ (বোখারি : ৬০৯৪)।

পরকালে নবী ও সিদ্দিকদের সঙ্গী : সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে পরকালে মহাপুরস্কার। তারা পরকালে নবী ও শহিদদের সঙ্গী হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা (আখেরাতে) নবী, সিদ্দিক ও শহিদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি : ১২০৯)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত