দুনিয়ার সব সম্পদের মালিক আল্লাহতায়ালা। তিনি মানুষকে বিভিন্ন পরিমাণে সম্পদ দান করেছেন। কিন্তু তিনি চান ধনী ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ এতিম, গরিব ও মিসকিনদের জন্য ব্যয় করুক। যে ব্যক্তি তার সম্পদকে মানবতার কল্যাণে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, সে দুনিয়া ও আখেরাতে ব্যয় করা সম্পদের প্রতিদান লাভ করবে। আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার জীবনে দানশীল ব্যক্তিকে আরো ধন-সম্পদ দান করবেন। সে কখনও অভাব অনুভব করবে না। নিজের প্রয়োজনের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হবে না। আখেরাতের জীবনে আল্লাহতায়ালা দানশীল ব্যক্তিকে বহুগুণ প্রতিদান দেবেন। সে তার সাফল্যের জন্য খুশি ও গর্বিত হবে। আফসোস, কৃপণ ব্যক্তি যদি তা উপলব্ধি করত!
দানই হবে পরকালের পুঁজি : কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহতায়ালা দানশীলতার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে মোমিনগণ! আমি তোমাদের যে জীবিকা দান করেছি, তা হতে সেদিন আসার আগেই ব্যয় করো, যেদিন কোনো কেনাবেচা, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ নেই। আর অবিশ্বাসীরাই অত্যাচারী।’ (সুরা বাকারা : ২৫৪)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘আমি তোমাদের যে জীবিকা দান করেছি, তোমাদের মৃত্যু আসার আগেই তা হতে ব্যয় কর। অন্যথায় মৃত্যু এলে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কিছুকালের জন্য অবকাশ দিলে আমি দান করতাম এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। কিন্তু নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত।’ (সুরা মোনাফিকুন : ১০-১১)।
দান নেকি বাড়ায় : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে নিজের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি শস্যদানার মতো; তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রত্যেকটি শীষে ১০০ শস্যদানা। আল্লাহতায়ালা? যার জন্য ইচ্ছে আরো বর্ধিত করেন। মূলত আল্লাহ? হচ্ছেন মহাদাতা ও মহাজ্ঞানী। যারা আল্লাহ?র পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং ব্যয় করতে গিয়ে অনুগ্রহ প্রকাশ করে না, আর কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে পুরস্কার। তাদের কোনো ভয় হবে না এবং তারা দুর্ভাবনাগ্রস্তও হবে না।’ (সুরা বাকারা : ২৬১-২৬২)। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে একটি খেজুর পরিমাণও কিছু দান করে, আর আল্লাহ তো বৈধ অর্থ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণই করেন না, তার ওই দানকে আল্লাহ ডান হাতে গ্রহণ করেন। এরপর তা ওই ব্যক্তির জন্য প্রতিপালন করেন; যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন-পালন করে থাকে। পরিশেষে তা পাহাড়সদৃশ হয়ে যায়।’ (বোখারি : ১৩৪৪, মুসলিম : ১০১৪)।
দানের ক্ষেত্রে উদারতা : দানশীলতা আল্লাহর প্রতি অনুরাগবশে এবং তাঁর সৃষ্টির কল্যাণের মনোবাঞ্ছা নিয়ে হওয়া উচিত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও গরিব, অনাথ ও বন্দিদের আহার্য দেয়। আর বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করি।
আমরা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও চাই না।’ (সুরা দাহর : ৮-৯)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমরা তোমাদের বৈধ উপার্জন এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যে শস্য উৎপন্ন করি, তা হতে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় কর। আর এমন কলুষিত বস্তু ব্যয় করতে মনস্থ করো না, যা তোমরা মুদিত চোখ ছাড়া গ্রহণ করো না। জেনে রেখ, আল্লাহ? মহাসম্পদশালী, প্রশংসিত।’ (সুরা বাকারা : ২৬৭)। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তোমরা খরচ করো, তোমাদের জন্য খরচ করা হবে।’ (মুসলিম : ৬৯)।
দানে মেলে মহাসফলতা : মানুষ দুনিয়াতে দানশীল ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা করে এবং তার কল্যণের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করে। আল্লাহতায়ালা দানশীল ব্যক্তিকে ভালোবাসেন। তাই তিনি দানশীল ব্যক্তিকে কেয়ামতের দিন চূড়ান্ত সাফল্য দান করবেন। তার কাজের প্রতিদিন হিসেবে তাকে জান্নাত দেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘দানশীল ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার নিকটবর্তী, মানুষেরও নিকটবর্তী, জান্নাতেরও নিকটবর্তী এবং দোজখ থেকে দূরবর্তী।’ (তিরমিজি : ৬৯৪)।