ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মাদকের ক্ষতি ও প্রতিকার

শায়খ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ
মাদকের ক্ষতি ও প্রতিকার

আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সবচেয়ে সুন্দর আকৃতি দান করেছেন। ঈমানের আলোয় আলোকিত করেছেন। বিবেক-বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি দানের মাধ্যমে সম্মান, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আকলের কারণে শরয়ী বিধান পালন আবশ্যক করেছেন। আকল মানুষকে কুপ্রবৃত্তি, অনিষ্টতা ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে ফিরিয়ে রাখে। তাই আকলকে আকল বলা হয়। আকলই মানবতার ভিত্তি এবং চরিত্রের চাবিকাঠি। ফলে এর দ্বারা কেউ কুফরি গ্রহণ করে, আবার কেউ একত্ববাদের ইবাদত করে। আকল বড়ই মূল্যবান বস্তু। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘যদি মানুষের মাঝে আকলের কেনাবেচা হতো, তাহলে আকলই সবচেয়ে মূল্যবান পণ্য হতো। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, মানুষ তার সম্পদ দিয়ে এমন জিনিস কেনাবেচা করে, যা তার আকল ও চিন্তাশক্তিকে ধ্বংস করে দেয়।’

মাদক চিন্তাশক্তি বিনষ্টকারী বস্তু : চিন্তাশক্তি বিনষ্টকারী অন্যতম বিষয় হলো মাদকদ্রব্য; যা শুধু মানুষের চিন্তা-চেতনাকেই নস্যাৎ করে দেয় না, বরং মনুষ্যত্বকেও ধ্বংস করে দেয়। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা মাদককে তার নামের কারণে হারাম করেননি, বরং তার পরিণামের কারণে হারাম করেছেন। অতএব, যেসব পানীয় নেশাদ্রব্যের পরিণামে নিয়ে যায়, তা সবই মাদকের মতো হারাম হবে।’ (দারাকুতনি)। নবীজি (সা.) আরো বলেন, ‘নেশা সৃষ্টিকারী প্রত্যেক বস্তুই মদ। আর প্রত্যেক মদই হারাম।’ (বোখারি : ৪৩৩)। এ কারণে ওলামায়ে কেরাম নেশাদ্রব্য বস্তু হারামের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। পাশাপাশি মাদক চাষাবাদ করা, পরস্পর আদান-প্রদান করাকেও হারাম সাব্যস্ত করেছেন।

মাদকের ভয়াবহতা : মাদকের অনিষ্টতা বড়ই ভয়াবহ। সব অনিষ্টের মূল মাদক। বর্তমান বিশ্বে একটি ব্যাপক ফেতনা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদক। মাদক মানুষের মাঝে শত্রুতা সৃষ্টি করে, সম্মান বিনষ্ট করে, মানুষকে আল্লাহবিমুখ করে, আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, জীবন ভস্ম করে দেয়, আত্মমর্যাদা বিলীন করে, মানবতা নিশ্চিহ্ন করে। মাদকের ফলে কত ঘর বিলীন হয়েছে, কত আশা অপূর্ণ থেকেছে, কত সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, কত মানুষ চুরি-ডাকাতি ও দুর্নীতির পথ অবলম্বন করেছে, তার ইয়ত্তা নেই।

নেশাগ্রস্ত লোকের পরিস্থিতি : মাদক যুবসমাজের ধ্বংস ডেকে এনেছে। যে যুবক রবের আদেশ পালনে মগ্ন ছিল এবং পিতামাতার বাধ্যগত ছিল, উত্তম আদর্শের অধিকারী ছিল, লেখাপড়ায় অনন্য ছিল, সুন্দর জীবনযাপন করে যাচ্ছিল; হঠাৎ কোনো এক অসৎ বন্ধুর সংস্পর্শে তার জীবন এলোমেলো হয়ে গেল। জীবনের আলো নিভে গেল। এখন সে হয়ে গেল আল্লাহ ও পিতামাতার অবাধ্য। তার অভিভাবক এসব পেরেশানি নিয়ে বেঁচে থাকবে নাকি জমিনে দেবে যাবে, কূল-কিনারা পায় না। মাদকে অভ্যস্ত ব্যক্তির সঠিক বুদ্ধিমত্তা লোপ পায়। সে রক্তখেকো ব্যবসায়ীর খেলনার পাত্র হয়। মাদক ব্যবসায়ী এদিকে অবৈধভাবে মাদক বিক্রি করে গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়, অন্যদিকে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি নিজের জীবন-যৌবন সবই ধ্বংস ও নষ্ট করে ফেলে যাপন করছে এখন দুর্বিষহ জীবন।

আল্লাহর মনোনীত দ্বীন পালন : নেশাগ্রস্ততা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অবশ্যই সর্বাগ্রে দ্বীনকে আঁকড়ে ধরতে হবে। মানবিক গুণাবলী নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। শরয়ী বিধান পালনে সর্বোচ্চ সোচ্চার হতে হবে। আল্লাহ যা নির্দেশ করেছেন, তা পালন করতে হবে এবং যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। পারিবারিক শাসন ও শিক্ষাদীক্ষা সন্তানকে সব ধরনের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে বাঁচিয়ে রাখে। পারিবারিক শিক্ষাই আগামী প্রজন্মকে বাইরের দুনিয়ার খারাপ জগৎ থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে। এ জন্য পরিবারের কর্তাব্যক্তির কর্তব্য হচ্ছে, তাদের পেছনে শিক্ষার জন্য সময় দেয়া, সন্তানদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা, তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শোনা ও গুরুত্ব দেয়া, তাদের কঠিন ও জটিল বিষয়ের সমাধান করা, তাদের ভালোবাসায় ভরপুর করে তোলা, যথাসম্ভব তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট না দেয়া, কঠোরতা আরোপ না করা, তবে বাইরে যেসব বন্ধুদের সঙ্গে সে মেলামেশা করছে, তার ব্যাপারে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা চাই। অসৎ বন্ধুর সঙ্গ থেকে তাকে ফিরিয়ে রাখা চাই।

দেশ ও দশের দায়িত্ব : মাদককে না বলা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা মাদক সেবন করব না, করতেও দেব না- এটা আমাদের কাজ। সমাজের কোথাও মাদক কর্মকাণ্ড দেখলে তাতে সরাসরি বাধা দেয়া এবং প্রয়োজনে প্রশাসনের সহায়তা গ্রহণ আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাগ্রে দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরের মতো সোচ্চার। মসজিদণ্ডমাদ্রাসার ইমামণ্ডখতিব থেকে শুরু করে শিক্ষক সবাই ‘মাদককে না বলুন’ ¯ে¬াগানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বুদ্ধিজীবি, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিদসহ কমপক্ষে যারা দ্বীন ও দেশকে ভালোবাসেন এবং যারা দেশকে উত্তরোত্তর উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে চান, তারা অবশ্যই ‘মাদককে না বলুন’ ¯ে¬াগানের দায়িত্বশীল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনগণ! নিশ্চয় মদণ্ডজুয়া, প্রতিমার বেদি ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানি কাজ। সুতরাং এসব পরিহার কর; যাতে সফলতা অর্জন কর। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজ বপণ করতে চায়। সে চায়, তোমাদেরকে আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং তোমরা কি (ওসব জিনিস থেকে) নিবৃত হবে?’ (সুরা মায়িদা : ৯০-৯১)।

অনুবাদ : মুহাম্মাদুল্লাহ ইয়াসিন

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত