হারামের পরিণাম

ইসমাঈল হুসাইন

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

হারাম মাল দ্বারা গঠিত শরীর জান্নাতে যাবে না; বরং তা জাহান্নামেরই অধিক উপযুক্ত। হারাম উপায়ে অর্জিত সম্পদ দ্বারা উৎপন্ন প্রত্যেক গোশত জাহান্নামেরই উপযুক্ত। (তাবরানি : ৬২৫)। মানুষ যখন আহার করে, তখন এ আহার্য খাদ্যদ্রব্য থেকে মানুষের শরীরে রক্ত-মাংস বৃদ্ধি পায়। তা গোটা শরীরে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বত্রই এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

খাবার হারাম হলে চোখ দিয়ে হারাম জিনিস দেখে; কান দিয়ে হারাম কথা, গান-বাজনা শোনে; হাত দিয়ে হারাম জিনিস ধরে; পা দিয়ে হারাম জায়গায় গমন করে। আর খাবার হালাল হলে চোখ দিয়ে হালাল জিনিস দেখে; কান দিয়ে ভালো কথা শোনে, জবান দিয়ে ভালো কথা বলে; হাত দিয়ে ভালো জিনিস ধরে; আর পা দিয়ে ভালো জায়গায় গমন করে। এজন্য বলা হয়েছে, উত্তম তাকওয়া হচ্ছে হারাম বর্জন করা, হারাম থেকে রুহ ও দেহকে মুক্ত করা। হারাম খেয়ে দোয়া করলে যেমন দোয়া কবুল হয় না, তেমনি হারাম পোশাক শরীরে থাকাবস্থায় কোনো ইবাদত কবুল হয় না। যে ব্যক্তি দশ দিরহামে একখানা কাপড় কিনল, যার মধ্যে মাত্র একটি দিরহাম হারাম থাকে; তার পরিধানে সে কাপড় থাকা পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা তার নামাজ কবুল করেন না। হারাম উপার্জনের কারণে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

হারামে বরকত কমে যায় : মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন, আর দান-সদকায় বাড়িয়ে দেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৬)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, ‘যে সম্পদের সঙ্গে সুদ মিশ্রিত হয়ে যায়, বেশিরভাগ সময় সেগুলো ধ্বংস হয়। অধিকন্তু আগে যা ছিল, তাও সঙ্গে নিয়ে যায়। সুদ ও জুয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, অজস্র পুঁজির কোটিপতি মালিক দেখতে দেখতে দেউলিয়া ও ফকিরে পরিণত হয়। এভাবে হারাম উপার্জন মানুষের রিজিক কমিয়ে দেয়।

হারামে ধ্বংস অনিবার্য : হারাম উপার্জন মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। মহান আল্লাহ হারাম উপার্জনকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মোমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়া আছে, তা ছেড়ে দাও যদি তোমরা মোমিন হও। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তার রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও।’ (সুরা বাকারা : ২৭৮-২৭৯)।

হারাম উপার্জনে আল্লাহর অসন্তুষ্টি : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য খরিদ করে, আখেরাতে তাদের কোনো অংশ নেই।

আর আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না কেয়ামতের দিন। আর তাদের পরিশুদ্ধও করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান : ৭৭)।

হারামে নবীজির অভিশাপ : যারা সুদভিত্তিক লেনদেনে লিপ্ত, রাসুল (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়ের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। বলেছেন, ‘এরা সবাই সমান অপরাধী।’ (মুসলিম : ৩৯৮৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৩১৩)।

হারামের কারণে কবরের শাস্তি : হারাম উপার্জন মানুষকে যেভাবে দুনিয়াতে শাস্তি দেয়, তেমনি কবরেও তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, দুই ব্যক্তি আমার কাছে আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছালাম। নদীর মধ্যস্থলে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে। তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বেরিয়ে আসতে চায়, তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথরখণ্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায়, ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এ ব্যক্তি কে?’ সে বলল, ‘যাকে আপনি (রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হলো সুদখোর।’ (বোখারি : ২০৮৫)।

হারামে পরকালীন ভয়াবহতা : আখেরাতেও অবৈধ উপার্জনকারী কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। খাওলা আনসারিয়া (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিছু লোক আল্লাহর দেয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কেয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ (বোখারি : ৩১১৮)।

দান-সদকা কবুল হয় না : অনেকে মনে করে, হারাম পথে উপার্জন করে সেখান থেকে কিছু সদকা করে দিলে হয়তো শাস্তি কিছুটা হালকা হবে অথবা আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু ব্যাপারটা এ রকম নয়।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত কবুল করেন না এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের সদকা গ্রহণ করেন না।’ (সুনানে নাসায়ি : ১৩৯)।