ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুসলিম বিশ্ব পরিচিতি

মুসলিম বিশ্ব পরিচিতি

কাতার মধ্য প্রাচ্যের আরব দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট দেশ; যা পারস্য উপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। কাতারের দক্ষিণে সৌদি আরব এবং পশ্চিমে দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইন অবস্থিত। আরব উপদ্বীপের মতো কাতারও একটি উত্তপ্ত ও শুষ্ক মরু এলাকা। তবে কাতার অর্থনৈতিকভাবে খুবই সমৃদ্ধশালী। পৃথিবীর তৃতীয় প্রাকৃতিক তেল এবং গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ কাতার। মধ্যপ্রাচ্যে কাতারের অন্যতম সহযোগী দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর থেকে দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।

কাতারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : কাতার এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত। প্রাগৌতিহাসিক কালে কাতারে জনবসতির কোনো চিহ্ন না পাওয়া গেলেও সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থেকে বোঝা যায়, মানুষের যাতায়াত ছিল। কাতারে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হতো। ফলে বর্ষাকালে এখানে ‘কান্নানিয়ান’ নামের একটি জেলে সম্প্রদায় মাছ ধরতে আসত। আরবে ইসলামিক যুগ শুরু হওয়ার আগে কাতারও অন্যান্য আরব দেশের মতো ‘শাসানি’ রাজবংশের অধিনস্ত ছিল। তারাই মূলত শাসন করত কাতারসহ অন্য আরব দেশসমূহকে। ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে কাতারে শাসন করতেন বনু তামিম গোত্র। সে সময় সেই এলাকায় বনু তামিম গোত্রপ্রধান ছিলেন মুনজির বিন সাওয়া তামিমি (রহ.)। তিনি ওই অঞ্চলে দ্বীন ইসলাম প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে ঊনবিংশ শতকে কাতার নামক আধুনিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা শেখ জসিম বিন মোহাম্মদ আলে সানি। একসময় কাতার তুরস্কের অটোমান শাসনাধীনে ছিল। ১৯০০ শতকের শেষভাগ থেকে আলে সানি গোত্রের লোকেরা কাতার অঞ্চলটিকে একটি আমিরাত হিসেবে শাসন করে আসছিল।

পরবর্তীতে মোহাম্মদ বিন সানি ব্রিটিশদের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত করে। যার ফলে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কাতার ব্রিটিশ শাসনাধীনে চলে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে দেশটি পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। প্রায় ১৫০ বছরের ইতিহাসে আজও কাতার সানি পরিবার দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে। বিংশ শতাব্দীতেও কাতারের সাধারণ মানুষের জীবিকা ছিল একমাত্র মাছ ধরা। তাই বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত এটি একটি দরিদ্র দেশ ছিল। কাতারের প্রধান ব্যবসা মূলত মাছ ধরা ছড়াও উট ও ঘোড়া পালন, কেনাবেচা ইত্যাদি। ১৯৪০ সালে প্রথম ‘দুখান’ তেলকূপ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে শুরু করে। পরবর্তীতে কাতারে মুক্তার ব্যবসা আন্তর্জাতিক স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে, চীনে কাতারের মুক্তার চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে মাথাপিছু আয়ের হিসেবে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি।

এক নজরে কাতার

দাপ্তরিক নাম : দ্য স্টেট অব কাতার।

আয়তন : ১১,৫৮ বর্গ কিলোমিটার (পৃথিবীতে ১৫৮ তম)।

জনসংখ্যা : প্রায় ২৮ লাখ। (পৃথিবীতে ১৩৯ তম, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি কিলোমিটারে ২৪৮ জন)।

স্বাধীনতা অর্জন : কাতার ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

সরকার পদ্ধতি : আধা-সাংবিধানিক ও রাজতান্ত্রিক।

জাতীয়তা : কাতারি।

রাষ্ট্রপ্রধান : আমির।

রাজধানী : দোহা (সবচেয়ে বড় ও জনবহুল শহর)।

বড় শহর : দোহা, খোর, উম্ম বাব, আবু সামরা ইত্যাদি।

রাষ্ট্রধর্ম : ইসলাম।

সময় : কাতারের সময় থেকে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান ৩ ঘণ্টা। অর্থাৎ কাতারে দুপুর ১২টা বাজলে বাংলাদেশে তখন বিকেল ৩টা বাজে।

ভাষা : সরকারি ভাষা আরবি। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বাংলা, হিন্দি, উর্দু, নেপালি, ফার্সিসহ আরও অন্যান্য ভাষা প্রচলিত রয়েছে।

আবহাওয়া : উত্তপ্ত ও শুষ্ক (সর্বনিম্ন ১৩ক্ক থেকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫০ক্ক সেলসিয়াস)।

মুদ্রা : কাতারি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭.৬৮ টাকা এবং ভারতীয় মুদ্রায় ২২.৫২ রুপি)।

শিক্ষার হার : ৯৭ শতাংশ।

গড় আয়ু : পুরুষ ৭৭, নারী ৮১।

মাথাপিছু আয় : ৯৩,৫০৮ মার্কিন ডলার (পৃথিবীতে চতুর্থ)।

ডায়ালিং কোড : +৯৭৪

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত