প্রশ্ন : আমার একটি সফটওয়্যার ফার্ম আছে। আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার বিক্রি করি এবং সঙ্গে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং ও সাপোর্ট দিয়ে থাকি। একটি ধর্মপ্রচার সংস্থা যারা সারা বাংলাদেশে প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে তাদের ধর্মে ধর্মান্তর করে থাকে। এমনকি মুসলমানদেরও তারা ধর্মান্তর করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের অফিসিয়াল হিসাব রাখার জন্য আমার ফার্ম থেকে অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার কিনতে চায়। সঙ্গে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এবং সাপোর্টও নিতে চায়। এই প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার বিক্রি করা আমার জন্য জায়েজ হবে?
উত্তর : যদি নিশ্চিতভাবে জানা থাকে, এ কাজের জন্যই তারা এ সফটওয়্যার ব্যবহার করবে, তাহলে তা বিক্রি করা জায়েজ হবে না। কেননা, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা কোরো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা মায়িদা : ২)।
প্রশ্ন : বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ঘুষ দেয়া ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে ঘুষ দিয়ে চাকরি করা যাবে? সেই চাকরির বেতন হালাল হবে?
উত্তর : যদি কোনো ব্যক্তির পক্ষে প্রার্থিত পদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে প্রয়োজনে ঘুষ দেয়া জায়েজ আছে। এ ক্ষেত্রে ঘুষদাতা গোনাহগার হবে না, ঘুষগ্রহীতা গোনাহগার হবে। আর পদটির অযোগ্য হলে ঘুষদাতা দুটি গোনাহের ভাগীদার হবে। যথা- ১. ঘুষ দেয়ার গোনাহ, ২. অযোগ্য হয়ে পদ দখল করার গোনাহ। মনে রাখতে হবে, কখনও কখনও বাধ্য ও অপারগ হয়ে ঘুষ দেয়া জায়েজ; কিন্তু ঘুষ নেয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নয়, সর্বাবস্থায় ঘুষ নেয়া হারাম। (মুসনাদে আহমদ : ৬৮৩০, সুনানে আবি দাউদ : ৩৫৮, রদ্দুল মুহতার : ৯/৬০৭)।
প্রশ্ন : আমি একটি জেনারেল (সুদি) ব্যাংকে প্রায় ৯ বছর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। এ সময়ে প্রাপ্ত বেতন-বোনাস দিয়ে গাড়ি-বাড়ি করেছি। পরবর্তীতে এক সময় ‘সুদি ব্যাংকে চাকরি করা বৈধ নয়’ মাসআলাটি জানার পর সুদি কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে নিজের মাঝে অনুশোচনা জাগে। ফলে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য একটি চাকরিতে যোগদান করেছি। জানতে চাচ্ছি, আগের চাকরির বেতন-বোনাস দিয়ে যে গাড়ি-বাড়ি করেছি, তা আমার জন্য বৈধ কি-না? যদি বৈধ না হয়ে থাকে, তাহলে আমার এখন করণীয় কী?
উত্তর : সুদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যে আয় দিয়ে গাড়ি-বাড়ি বা অন্য যে সম্পদ গড়েছেন, তা ভোগ করা জায়েজ হবে না। এখন আপনি যদি এ গাড়ি-বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চান, তাহলে যে পরিমাণ টাকা দিয়ে এ গাড়ি-বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ কিনেছেন, সে পরিমাণ টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। এভাবে যতটুকু সদকা করবেন, ততটুকু সম্পদ আপনার জন্য হালাল বলে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য, গাড়ি-বাড়ি করার পর এগুলো ভাড়ায় দিয়ে থাকলে তা থেকে উপার্জিত টাকাও সদকা করে দিতে হবে এবং অতীতের হারাম উপার্জন ও হারাম ভোগ-ব্যবহারের কারণে আল্লাহতায়ালার কাছে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। (মুসলিম : ১৫৯৮, বাদায়েউস সানায়ে : ৬/১৪৫, ফাতহুল কাদির : ৮/২৫৮, আল বাহরুর রায়েক : ৮/১১৪)।