ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জীবনযাপনে মধ্যপন্থার গুরুত্ব

গোলাম রাজ্জাক কাসেমী
জীবনযাপনে মধ্যপন্থার গুরুত্ব

মহানবী (সা.) চাটাইয়ে বসতেন, শুতেন। তিনি বিলাসপরায়ণ ছিলেন না। এটিই হচ্ছে সমৃদ্ধ অর্থনীতি ও সুন্দর জীবনের পথ। একদিনের ঘটনা। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) মহানবী (সা.)-এর কামরায় ঢুকলেন। এ সময় তিনি একটা চাটাইয়ের ওপর শুয়েছিলেন। চাটাই ও রাসুল (সা.)-এর মাঝে আর কিছুই ছিল না। তার মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার একটি বালিশ; পায়ের কাছে ছিল সল্ম গাছের পাতার একটি স্তূপ; মাথার ওপর লটকানো ছিল চামড়ার একটি মশক। ওমর (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর এক পাশে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললাম।’ তিনি বললেন, ‘তুমি কাঁদছ কেন?’ বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কিসরা ও কায়সার পার্থিব ভোগ-বিলাসে ডুবে আছে; অথচ আপনি আল্লাহর রাসুল।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তারা দুনিয়া লাভ করুক, আর আমরা আখেরাত লাভ করি?’ (বোখারি : ৪৯১৩, মুসলিম : ১৪৭৯)।

যাবতীয় কর্মে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ : আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যে বিছানায় নিদ্রায় যেতেন, তা ছিল চামড়ার। এর ভেতরে খেজুর গাছের আঁশ ভরা থাকত।’ (শামায়েলে তিরমিজি : ২৫৩)। কার্পণ্যও নয়, অপব্যয়ও নয়; বরং সুচিন্তিতভাবে যেখানে যা প্রয়োজন, তা ব্যয় করাই ইসলামের নির্দেশ। এর নামই মধ্যমপন্থা। এভাবে চললে উপার্জনে বরকত হয় ও অর্থকষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে, সে নিঃস্ব হয় না।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪২৬৯)। রাসুল (সা.) ব্যাপকভাবে খাদ্য ও পোশাকসহ যাবতীয় কর্মে মিতব্যয়ী হতে বলেছেন। অপব্যয় ও অপব্যবহার থেকে বারণ করেছেন। এ ব্যাপারে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জীবদ্দশায় রাসুল (সা.) একই দিনে দুবার রুটি ও জায়তুন দ্বারা পরিতৃপ্ত হননি।’ (মুসলিম : ২৯৭৪)। রাসুল (সা.) প্রার্থনা করেছেন, ‘হে আল্লাহ! দারিদ্র্যতা ও ধনাঢ্যতার ব্যাপারে মধ্যমপন্থার প্রার্থনা করছি।’ (সুনানে নাসায়ি : ১৩০৫)। অপর এক হাদিসে আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.)-সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসুল (সা.) সাদ (রা.)-কে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি অজু করছিলেন। তিনি বললেন, ‘অপচয় করছ কেন?’ সাদ (রা.) বললেন, ‘অজুতে কি অপচয় হয়?’ নবীজি (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ। প্রবহমান নদীতে বসেও যদি তুমি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করো, তাও অপচয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪২৫)।

মধ্যমপন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দেয় ইসলাম : অপব্যয়ের ছিদ্রপথেই সংসারে আসে অভাব-অনটন। সমাজে আসে অশান্তি। অশান্তি আর অনটন হতে রক্ষা পেতে হলে মিতব্যয়ী হওয়া উচিৎ। কৃপণতা এবং অপব্যয় কোনোটাই কাম্য নয়। এ দুয়ের মধ্যবর্তী পথই হচ্ছে উত্তম পথ। অর্থাৎ মিতব্যয়ীতাই উত্তম পথ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারাই আল্লাহর নেক বান্দা, যারা অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে না অপচয় ও বেহুদা খরচ করে, না কোনোরূপ কৃপণতা করে; বরং তারা এ উভয় দিকের মাঝখানে দৃঢ় হয়ে চলে।’ (সুরা ফোরকান : ৬৭)। তিনি আরো বলেন, ‘(কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখ না এবং (অপব্যয়ী হয়ে) তা সম্পূর্ণ খুলেও রেখ না। যদ্দরুণ তোমাকে নিন্দাযোগ্য ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ২৯)। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি ত্যাগ করে ভারসাম্য ও মধ্যমপন্থা অবলম্বনের শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এমনিভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থি সম্প্রদায় করেছি।’ (সুরা বাকারা : ১৪৩)। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে তার বান্দাদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করে বলেন, ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না, কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এ দুয়ের মাঝামাঝি।’ (সুরা ফোরকান : ৬৭)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত