ঢাকা ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যে লেনদেনে আল্লাহর অভিশাপ

নিয়ামুল ইসলাম
যে লেনদেনে আল্লাহর অভিশাপ

আল্লাহর খাঁটি বান্দা হতে চাইলে গোনাহমুক্ত জীবন গড়ে তুলতে হবে। গোনাহ অনেক রয়েছে। এর মধ্যে মারাত্মক দুটি গোনাহ হলো- সুদ এবং ঘুষ। সুদ একটি কবিরা গোনাহ। এ গোনাহ থেকে জীবনকে মুক্ত রাখা চাই। ঘুষও কবিরা গোনাহ। এ গোনাহ থেকেও জীবনকে মুক্ত রাখা চাই। সুদণ্ডঘুষমুক্ত জীবন গড়া চাই। শুধু সুদণ্ডঘুষের গোনাহ নয়, বরং সব রকম গোনাহ থেকেই জীবনকে মুক্ত রাখা চাই। তবে সুদ ও ঘুষ এমন গোনাহ, যা থেকে মুক্ত থাকা বর্তমানে বেশ কঠিন। সমাজের অনেকেই নানাভাবে এ দুটো গোনাহের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। কোরআনে কারিমে স্পষ্টভাবে সুদ সম্বন্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেও না। আল্লাহকে ভয় করো; যেন সফলকাম হতে পার।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩০)।

ইসলামে সুদের বিধান : শরিয়তে সুদ হারাম; যে কোনো ধরনের সুদ হোক, তা হারাম। বিশ্বব্যবস্থায় সুদ যত ব্যাপকই হয়ে থাকুক না কেন, তবু সুদ হারাম। সুদ থেকে বিরত থাকা যত কঠিনই হোক না কেন, তবু সুদ হারাম। তবে আজকাল কেউ কেউ বলতে শুরু করেছে, কোরআনে যে সুদ নিষেধ করা হয়েছে, তা হলো- চক্রবৃদ্ধি সুদ। অতএব, চক্রবৃদ্ধিহারে যদি না হয়, বরং সরল সুদ হয়, তাহলে সে সুদ গ্রহণ করা যেতে পারে। হাদিসে সুদ গ্রহণ করলে যে আল্লাহর লানত বা অভিশাপের কথা বলা হয়েছে, সেখানে সাধারণভাবেই সুদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বোঝা যায়, সব ধরনের সুদই নির্দিষ্ট, চাই তা চক্রবৃদ্ধিহারে হোক বা সরল সুদ হোক। আজ পর্যন্ত উম্মতের সর্বস্তরের ওলামা ও ফোকাহা এ রকমই বুঝে আসছেন। নতুন করে এসব আয়াত ও হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে উম্মতকে গোমরাহ করার অবকাশ নেই।

সুদ সংক্রান্ত ইসলামি নীতি : আজকাল অনেকে বলে থাকেন, বিশ্বব্যবস্থায় সুদ এত ব্যাপক হয়ে গেছে যে, সুদ থেকে মুক্ত থেকে কোনো বড় ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করা সম্ভব নয়। তাই সুদের ব্যাপারে নরম নীতি হওয়া চাই। তাহলে কি তারা বলতে চান, বিশ্বের অর্থব্যবস্থা সুদভিত্তিক হয়ে যাওয়ায় শরিয়তে যে সুদ হারাম ছিল, তা হালাল হয়ে গেছে? বিশ্বের কোনো ব্যবস্থা গোনাহভিত্তিক হলে কি সেই গোনাহ আর গোনাহ থাকবে না? তাহলে তো নাচণ্ডগান, অশ্লীলতা, ছবি ইত্যাদি গোনাহ এত ব্যাপক হয়ে গেছে যে, এসব থেকে বিরত থাকা এখন অনেক অসম্ভব। তাহলে কি এগুলোকেও এখন জায়েজ বলে দিতে হবে? ঘরে ঘরে রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদিতে শত রকম গোনাহের অনুষ্ঠান মানুষ উপভোগ করছে। তাই বলে কি তা জায়েজ হয়ে যাবে? কখনোই তা হবে না। কোনো গোনাহ দুনিয়ার সবাই করলেও তা গোনাহ থাকবে, তার পাপের মাত্রা একটুও কমবে না।

সুদে আল্লাহর অভিশাপ : যারা সুদ বা অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করে, তাদের সম্পদকে আল্লাহ বরকতহীন করে দেন। সম্পদ দ্বারা যে উদ্দেশ্য- সুখ-শান্তি অর্জন করা, তা তাদের ভাগ্যে জোটে না। দেখা যায়, সব সময় তাদের পেরেশানি লেগে আছে, টেনশনের পর টেনশন লেগে আছে, তাদের সম্পদ কাজে লাগে না। অতএব, সুদি কারবারে বাহ্যিক লাভ দেখা গেলেও তাতে প্রকৃত লাভ নেই। কারণ, তাতে বরকত নেই। আর শুধু দুনিয়াবি লাভ দেখলেই শরিয়তের ওপর চলা যাবে না। সুদি কারবারে যদি বাহ্যিক লাভ দেখাও যায়, তবু একজন মোমিন তা করতে পারে না। কারণ, শরিয়তে সুদ হারাম। শুধু হারাম নয়, বরং কঠিন হারাম। সুদ এত কঠিন হারাম, যারা সুদের সঙ্গে জড়িত, তারা আল্লাহর অভিশপ্ত। শুধু যারা সুদ নেয়, তারাই যে অভিশপ্ত, তা নয়; বরং সুদের সঙ্গে যে কোনোভাবে যারাই জড়িত, সবাই আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত। যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয়, সবার প্রতি রাসুল (সা.) লানত করেছেন। (তিরমিজি : ১২০৬)।

সুদে আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ : যারা সুদ নেয় এবং সুদ দেয়, সবাইকে আল্লাহ অভিশপ্ত করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা সুদ খায়, তারা জিনে ধরা পাগল ব্যক্তির মতো হাশরের মাঠে দাঁড়াবে। তাদের এ অবস্থার কারণ, তারা বলেছে, ব্যবসা তো সুদের মতোই।’ (সুরা বাকারা : ২৭৫-২৭৯)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত