মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সহকারী মুফতি, মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানি মানিকনগর, ঢাকা

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশ্ন : জিপিএফ ফান্ডে জমানো টাকার ওপর জাকাত ফরজ হবে?

উত্তর : জিপিএফ ফান্ডে চাকরিজীবি টাকা রাখতে বাধ্য নয়; বরং সে ইচ্ছে করলে রাখতে পারে। যেহেতু বেতনের টাকা নিজের ইচ্ছায় জমা রাখা হয়, তাই এ অর্থের ওপর উল্লিখিত ফান্ডের মালিকের মালিকানা থাকায় জাকাত আবশ্যক হয়। আর যদি বাধ্যও হয়, কিন্তু বেতন হিসেবে টাকা গ্রহণ করার পর সেখান থেকে উল্লিখিত ফান্ডে জমা দিতে হয়, তবুও মালিকানা চাকরিজীবির কাছে চলে আসায় তার ওপর জাকাত আসবে। তবে জাকাত এখনই আদায় করা আবশ্যক নয়; বরং যেদিন টাকা হস্তগত হবে, তখন পেছনের বছরের জাকাত আদায় আবশ্যক হয়। টাকা উত্তোলনের আগে আদায় করা আবশ্যক হয় না; কিন্তু আদায় করে দিলে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যদি টাকা চাকরিজীবীর হাতে হস্তান্তর না করেই বাধ্যতামূলকভাবে বেতন থেকে উল্লিখিত ফান্ডে রেখে দেওয়া হয়, তাহলে তার ওপর চাকরিজীবির কোনো জাকাত আসবে না। কারণ, তখন তার মালিক চাকরিজীবী হয়নি। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৭৫, আল বাহরুর রায়েক : ২/২০৭, আন নাহরুল ফায়েক : ১/৪১৬)।

প্রশ্ন : যে ডিপিএসের টাকা ৬ বছর পর তোলা যাবে, এর আগে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে?

উত্তর : ৬ বছর পর যখন টাকা হাতে আসবে, তখন পেছনের ৬ বছরের জাকাত আদায় করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার : ১৩/১৮৪, হেদায়া : ১/১৮৬)।

প্রশ্ন : কোনো ব্যক্তি যদি দোকানের সিকিউরিটি বাবদ ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে টাকা নেয়, তাহলে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে?

উত্তর : আমাদের দেশে প্রচলিত অ্যাডভান্স পদ্ধতি শরিয়তসম্মত নয়। কারণ, যে অ্যাডভান্স নেয়া হয়, তা মূলত জামানত হয়। আর জামানতের টাকা গ্রহীতার জন্য খরচ করা বৈধ নয়। অথচ যিনি জামানত গ্রহণ করেন, সেই বাড়ি বা দোকানের মালিক সেই টাকা খরচ করে ফেলেন। এভাবে চুক্তিটি নাজায়েজ হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে চুক্তিটি জায়েজ হতে পারে। তা হলো, দীর্ঘমেয়াদি ভাড়া চুক্তি সম্পাদন; অর্থাৎ ভাড়া চুক্তি সম্পাদনের সময় প্রতি মাসের নির্দিষ্ট ভাড়ার কথা উল্লেখ করা হবে। তারপর আগত মাসের ভাড়া অগ্রীম পরিশোধ করার নামে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করা হবে। প্রতি মাসে ভাড়াটিয়া নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করতে থাকবে। আর যে মাসে উল্লিখিত স্থান থেকে ভাড়াটিয়া চলে যাবে, তার কয়েক মাস আগ থেকে ভাড়াদাতার কাছে জমাকৃত টাকা থেকে ভাড়া পরিশোধ করে নেয়া হবে। আর যদি কোনো অর্থ তারপরও বেঁচে যায়, তাহলে মালিক তা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। যদি এ সুরত অবলম্বন করা হয়, তাহলে চুক্তিটি এবং অতিরিক্ত টাকা প্রদান হবে একটি জায়েজ চুক্তি। তাই উল্লিখিত অতিরিক্ত টাকার মালিক হয়ে যাবে বাড়ির মালিক। এতে মৌলিকভাবে ভাড়াটিয়ার কোনো মালিকানা বাকি থাকবে না। যেহেতু ভাড়াটিয়া উল্লিখিত টাকার মালিক থাকছে না, তাই তার ওপর জাকাত আবশ্যক হওয়ার প্রশ্নই আসে না। পক্ষান্তরে যেহেতু বাড়ির মালিক ওই টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, তাই ওই টাকা খরচ করা তার জন্য জায়েজ হবে।

সেই সঙ্গে ওই টাকার জাকাতও তার ওপর আবশ্যক হবে। আর যদি টাকা শুধু জামানত বা আমানত হিসেবে দোকান ও বাড়ির মালিকের কাছে গচ্ছিত রাখা হয়, এ ক্ষেত্রে মূল মালিক যেহেতু যিনি দোকান বা বাসা ভাড়া নিচ্ছেন, তিনিই থাকেন; তাই উপর্যুক্ত টাকার জাকাত দোকান বা বাসা ভাড়াকারী ব্যক্তি তথা টাকা জমাদাতা ব্যক্তির ওপরই আসবে। অন্যভাবে বললে, যিনি সিকিউরিটি হিসেবে টাকা রাখছেন, তার ওপর জাকাত আসবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল : ১/১৪৭-১৪৮, মালে হারাম আওর উসকে মাসারেফ ওয়া আহকাম : ৮৫)।

প্রশ্ন : হারাম টাকার ওপর জাকাত আবশ্যক হয়? হারাম টাকার মালিকের জন্য করণীয় কী?

উত্তর : হারাম টাকার ওপর জাকাত আসে না। হারাম টাকা যার কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, তার কাছে ফেরত পাঠানো আবশ্যক। যদি ফেরত পাঠানো সম্ভব না হয়, তাহলে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সব হারাম টাকা সদকা করে দেয়া আবশ্যক। (ফতোয়ায়ে শামি : ৭/৩১০, বাজলুল মাজহুদ : ১/৩৭)।

প্রশ্ন : একজন সরকারি কর্মচারী এখন চাইলে মূল বেতনের কমপক্ষে ৫% বাধ্যতামূলক এবং সর্বোচ্চ ২৫% টাকা ঐচ্ছিক কর্তন করাতে পারেন। জিপি ফান্ডের সরকার প্রদত্ত অংশ বা সুদ নেওয়া জায়েজ হবে? জিপি ফান্ডের সরকার প্রদত্ত অংশ বা সুদ গ্রহণ না করে এ টাকা দিয়ে সরকারকে ট্যাক্স দেওয়া ঠিক হবে? এ টাকা দিয়ে নিতান্ত অপারগতার কারণে অন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়া যাবে?

উত্তর : সরকারি প্রতিষ্ঠানে জিপি ফান্ডে বেতনের যতটুকু অংশ বাধ্যতামূলক কেটে রাখা হয়, তার সঙ্গে সরকার প্রদত্ত অতিরিক্ত অংশ কর্মচারীর জন্য ব্যবহার করা জায়েজ। সরকার এটাকে সুদ বললেও শরিয়তের দৃষ্টিতে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত জিপি ফান্ডে কর্তন করানো জায়েজ নেই। যদি কেউ অতিরিক্ত কর্তন করে, তাহলে স্বেচ্ছায় জমার ওপর প্রাপ্ত অতিরিক্ত সব টাকা গরিবদের সদকা করে দিতে হবে। আর সুদের টাকা দ্বারা ট্যাক্স দেওয়া বা কাউকে ঘুষ দেয়া জায়েজ হবে না। ওই টাকা গরিবদের সদকা করে দিতে হবে। কারণ, ওই টাকা দিয়ে ট্যাক্স বা ঘুষ দিলে তা নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার হয়ে যায়। (আহকামুল কোরআন লিল জাসসাস : ১/৪৬৭, ইমদাদুল আহকাম : ১/৪৭৯)।