সুদকে আপাতদৃষ্টিতে বর্ধনশীল মনে হলেও তা মূলত ক্ষয়-লয়যোগ্য ও ধ্বংসশীল। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ সুদকে বিলুপ্ত করার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৬)। বাহ্য দৃষ্টিতে যে সুদকে বর্ধনশীল মনে হয়, প্রকৃতার্থে তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।’ (সুরা রুম : ৩৯)। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, সুদ গ্রহণ করে অনেকেই সাময়িকভাবে সম্পদশালী হয়; কিন্তু পরবর্তী সময়ে সে এমন কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয় কিংবা এমন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, যার ফলে তার সব সম্পদ চলে যায়। যদি সম্পদ না গেলেও তাতে বরকত পায় না কিংবা শান্তি অর্জিত হয় না। সুদি সম্পদ বিনাশপ্রাপ্ত হওয়ার ঘোষণা হাদিসেও এসেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুদের দ্বারা সম্পদ বাড়িয়েছে, পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৭৯)।
সুদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা : মহাক্ষমতাধর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) সুদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এ এক অসম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। যারা সুদভিত্তিক লেনদেন করবে, তারা শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হয়ে ধ্বংস হবে। সুদখোরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যেসব বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো। আর যদি তোমরা পরিত্যাগ না করো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও।’ (সুরা বাকারা : ২৭৮-২৮৯)।
সুদখোরের ভয়াবহ পরিণাম : সুদখোরের ইহকালীন পরিণতি ও পরকালীন পরিণাম নিতান্ত ভয়ংকর। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালীন লাঞ্ছনা ও পরকালীন নরক যন্ত্রণা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা সুদ খায়, তারা কেয়ামতে এমনভাবে উঠবে, যেভাবে দাঁড়ায় ওই লোক, যাকে শয়তান স্পর্শ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাদের এ অবস্থার কারণ হলো, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেওয়ারই মতো।’ (সুরা বাকারা : ২৭৫)। রাসুল (সা.) একবার বললেন, রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, দুই ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছুলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে দাঁড়ানো। তার সামনে বহু প্রস্তর পড়ে আছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বেরিয়ে আসতে চায়, তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথরখণ্ড নিক্ষেপ করে স্বস্থানে ফিরিয়ে দেয়। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায়, ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে, আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই লোক কে?’ সে বলল, ‘যাকে আপনি রক্তের নদীতে দেখেছেন, সে সুদখোর।’ (বোখারি : ২০৮৫)।
সুদের অপর নাম অভিশাপ : দেশের অধিকাংশ ব্যাংক চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণ করার নীতি অবলম্বন করার কারণে এবং পুঁজিপতিদের সিংহভাগ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণে অভ্যস্ত হওয়ায় সমাজের দরিদ্র শ্রেণি দিন দিন সর্বহারা হচ্ছে। তাদের জীবনে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ও অভিশাপ নেমে এসেছে। আল্লাহতায়ালা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩০)। রাসুল (সা.) সুদের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষীদ্বয় ও সুদের চুক্তি বা হিসাব লেখককে অভিসম্পাত করেছেন।’ (তিরমিজি : ১২০৬)।
সুদ এক ঘৃণ্যতর পাপ : সুদ এক ঘৃণ্য, কদাকার, কুৎসিত ও জঘন্য পাপ। এ এক অরুচিকর ও হেয়তর অপরাধ। সুদ গ্রহণ করার গুরুতরতা ও কদর্যতা সম্পর্কে জানার পর সুস্থ রুচিবোধসম্পন্ন কেউ সুদ গ্রহণ করতে পারে না। সুদের এক টাকা খাওয়া ৩৩বার ব্যভিচার করার অপরাধের চেয়েও বেশি ঘৃণ্যতর। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সুদের গোনাহের ৭০টি স্তর রয়েছে। এর সবচেয়ে নিম্নস্তর হলো, আপন মাকে বিয়ে করা।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৭৪)।