বল্গাহীন বাজারব্যবস্থায় জনতার হাহাকার

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মূল্য সন্ত্রাসী, মুনাফাখোর, মজুতদার, সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে আজ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। নকল, ভেজাল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্যে নাগরিক জীবন বেশ অতিষ্ঠ। স্বাভাবিক জীবন-জীবিকার অধিকার হুমকির সম্মুখীন। একশ্রেণির নীতি আদর্শহীন, অতি মুনাফালোভী, অসাধু ব্যবসায়ীর দিনে দিনে কোটিপতি হওয়ার বাসনা। ইচ্ছেমতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ-সংকট সৃষ্টি করছে তারা। দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অচল করে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ দুরূহ হয়ে পড়ছে। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বাড়াচ্ছে। অথচ ওই পণ্যের আন্তর্জাতিক মূল্য কমলেও তারা আর দাম কমায় না। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে গুটিকয়েক অসৎ ব্যবসায়ীর স্বার্থ সংরক্ষণে যাবতীয় রীতিনীতি প্রণয়ন করে। ফলে সাধারণ মানুষের নৈতিক স্বার্থ বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম ইচ্ছামতো বাড়ায়, কমায়। সরবরাহসহ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে জনগণকে জিম্মি করে। কোটি কোটি টাকা নিজেদের পকেটস্থ করে। রিকশা, সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলার, বাড়িভাড়া, বাসভাড়া থেকে শুরু করে নগরীর সেলুন, ফটোস্ট্যাট, বিস্কুট, পাউরুটি, কাঁচাবাজার, ফলমুল, ফার্মেসিসহ সব ক্ষেত্রে ইচ্ছামতো পণ্য ও সেবার মূল্য নির্ধারণ করছে। এসবে সরকারি সমন্বয় সাধন দূরের কথা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো খবরই রাখছে না।

দাম বাড়লেও শ্রমের মূল্য বাড়ে না : নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্য নতুন খবর নয়। সারা বছরই ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয় না; বরং দিন দিন বাড়তেই থাকে পণ্যের মূল্য। বর্তমানে যেসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে, সেগুলোর পেছনে নেই যৌক্তিক কারণ। আগের দিন এক দামে কেনা পণ্য রাত পোহালেই কেজিতে কয়েক টাকা বেড়ে যায়। এ বিষয়ে দোকানির সহজ ও কমন যুক্তি, চাহিদার চেয়ে পণ্যের জোগান কম। আবহাওয়া খারাপ, এমন যুক্তিও মাঝে মাঝে দেখানো হয়। পাইকারি বাজারের সঙ্গে নেই খুচরা মূল্যের সামঞ্জস্য। বাজার থেকে সাধারণ ক্রেতা যে দামে পণ্য কিনছে, উৎপাদক সে দাম কল্পনাও করতে পারে না। এর সুফল নিচ্ছে একশ্রেণির প্রতারক মধ্যস্বত্বভোগী। যারা সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করছে, জিম্মি করছে কৃষকদেরও। কিন্তু যারা নিজেদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে পণ্য উৎপাদন করছে, সেই কৃষকশ্রেণি বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্যমূল্য থেকে। এ ক্ষেত্রে শুধু লাভবান হচ্ছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী, আর ঠকছে কৃষক ও সাধারণ ক্রেতা। আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত। সেই ভাতের চালের দামও বাড়ছে কোনো কারণ ছাড়াই। এ ছাড়া নাভিঃশ্বাস উঠেছে ভোজ্যতেল, মসলা, ডালসহ নিত্যপণ্যের সবকিছুর দাম বৃদ্ধিতে। এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেন গা-সওয়া সাধারণ ঘটনা। কিন্তু পণ্যের মূল্য বাড়লেও সাধারণ মানুষের শ্রমের মূল্য না বাড়ায় ক্রয়ক্ষমতাও বাড়েনি।

সিন্ডিকেটগুলো বীরদর্পে মুনাফা নিচ্ছে : সিন্ডিকেট আমাদের দেশে কমন বিষয়। এর কাছেই এক প্রকার জিম্মি বাজার, জিম্মি সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ সময়ে আমাদের দেশে মূলত রাজনৈতিক কারণে আমদানির অনুমতি মেলে। বর্তমানেও তাই হচ্ছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের সরাসরি হস্তক্ষেপে সিন্ডিকেটগুলো বেশি মুনাফালোভী হয়ে উঠছে দিন দিন। সিন্ডিকেটগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এটি হচ্ছে সবার চোখের সামনেই। কিন্তু এ নিয়ে সরকার সেভাবে ভাবছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্যের প্রধান কারণ হলো, একশ্রেণির আমদানিকারক ও পাইকারি পর্যায়ের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যারা মূলত তাদের স্বার্থের জন্য বাজার কারসাজি করছে। জিম্মি করছে ক্রেতাকে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এ সুযোগে সিন্ডিকেটরা তাদের পুঁজি বাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও দীর্ঘ হচ্ছে। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্যদ্রব্য ঢাকা বা অন্যান্য জায়গায় যাওয়ার সময় চাঁদাবাজির ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়ায় বাড়ছে পণ্যের দাম। সিন্ডিকেটগুলো ভাঙার ব্যবস্থা করার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না; বরং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটগুলো তাদের মুনাফা করে যাচ্ছে বীরদর্পে।

কৃষক পণ্য উৎপাদন করলেও পাচ্ছে না ন্যায্য মূল্য : কৃষকশ্রেণি কষ্ট করে তার পণ্য উৎপাদন করলেও পাচ্ছে না ন্যায্য মূল্য। এসব ক্ষেত্রে সেই উৎপাদক শ্রেণিই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়। অথচ তারাই অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। এদের সহায়ক হিসেবে রয়েছে ব্যবসায়ী শ্রেণি। ব্যবসায়ী ও উৎপাদক শ্রেণি হচ্ছে অর্থনীতির সহযোগী শক্তি। এদের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় প্রয়োজন। বিশেষ করে, উৎপাদক শ্রেণির মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা সবার আগে জরুরি। বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে, তারা যে পণ্য উৎপাদন করবে, তার সঠিক ও ন্যায্য মূল্য পাবে। কোনো সিন্ডিকেটের কাছে তাদের প্রাপ্য মূল্য চলে যাবে না। থাকবে না জিম্মি হয়ে। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জরুরি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি ঠিকমতো বাজার মনিটরিং করা হয়, তবে অনেকাংশে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রমজান মাসে শুধু কিছু অভিযান দেখি।

রমজান মাসে শুধু নয়, সারা বছরই নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যারা বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যাদের পক্ষে অধিক মূল্যে পণ্য কেনা কষ্টসাধ্য। মাসে নির্দিষ্ট যে আয় হয়, তা দিয়ে নিত্যদিনের পণ্য কেনা তাদের জন্য রীতিমতো কষ্টকর। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে খেয়ে-পরে বাঁচার সুযোগ তৈরি করে দেয়া জরুরি। অদৃশ্য সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে বিচারের আওতায় এনে এ ক্ষেত্রে উদাহরণ তৈরি করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটগুলো ভেঙে দিতে হবে। তবেই নিয়ন্ত্রণে আসবে বাজার।

ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ দরকার : দেশে ন্যায্য ব্যবসার প্রসার ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থধারা প্রবর্তনের স্বার্থে ব্যবসায়ী সংগঠন, বিশেষ করে- ফেডারেশন অব চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন চেম্বারগুলোকে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, তাদের সদস্য সংগঠনগুলোর দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি অনুদান ছাড়াও জিএসপি সুবিধা, কর রেয়াত, বিভিন্ন প্রণোদনা, ট্রেড ফর এইড, ভর্তুকিসহ নানা প্রকারের নগদ সহায়তা প্রদান করে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিগত অর্থবছরের এফবিসিসিআই ও অন্যান্য চেম্বারগুলোকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনুদান ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বহুজাতিক ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে বিশেষ অনুদান ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভোক্তা আন্দোলন শুধু স্থানীয় জনগণের দান-অনুদান, মুষ্টিমেয় বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। এটি অনেকটা স্থানীয় জনগণের চাহিদার কারণে চ্যারিটি আকারে জনকল্যাণে পরিচালিত হচ্ছে।

আমাদের জানামতে, ভোক্তা সংগঠনগুলো সমগ্র জেলা-উপজেলা, মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে, পৌরসভাগুলোয় শাখা কমিটি গঠন করে ভোক্তাদের সংগঠিত ও সচেতনতা বিস্তারে কাজ করছে। এ জন্য সদস্যদের চাঁদা, স্থানীয় জনগণের অনুদান, সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রম নিয়েই যাবতীয় কর্মযজ্ঞগুলো সম্পন্ন করতে হয়। আর্থিক সংকট, প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল, লজিস্টিক ও অন্যান্য সুবিধার অভাবে ভোক্তা সংগঠনগুলো জনগণের বিপুল চাহিদা মেটাতে পুরোপরি সক্ষম হয়ে উঠতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশে ব্যবসায়ী সংগঠন ও ভোক্তা সংগঠনগুলোর মাঝে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা, কারিগরি সক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে বিশাল আকারের পার্থক্য রয়ে গেছে। যেটি বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থধারার বিকাশে বড় প্রতিবন্ধক।

অপবাসনার বলি হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তারা : উন্নত বিশ্বে ভোক্তারা পণ্যের নিয়ামক হলেও বাংলাদেশে তার পরিস্থিতি উল্টো। এখানে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরাই পণ্যের মূল। তারা যা বাজারজাত করবে, ভোক্তারা তা-ই হজম করতে বাধ্য। কারণ, এখানে ভোক্তাদের পছন্দণ্ডঅপছন্দের কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বব্যাংক ও বহুজাতিক দাতা সংস্থাগুলো যেভাবে বাংলাদেশে পাটশিল্প বন্ধ করতে অর্থ বিনিয়োগ করেছে, পক্ষান্তরে ভারতে পাটশিল্প বিকাশে অর্থ বিনিয়োগ করেছে। একইভাবে এ বহুজাতিক শক্তিগুলো ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করলেও ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি, ক্ষমতায়ন ও তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কোনো অর্থ বিনিয়োগ করছে না। ফলে প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও শিক্ষার অভাবে বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রেতা-ভোক্তা তাদের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন নয়। অধিকন্তু অধিকাংশ ভোক্তারা আসল-নকল চিহ্নিত করে সঠিক পণ্য পছন্দ করার যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হয়নি।

সরকার এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাংলাদেশে ভোক্তা আন্দোলন গতি পায়নি। ফলে ভোক্তারা প্রতি পদে পদে ঠকছে। আর এ জন্য ব্যবসায় সুস্থধারা বিকাশ সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে এখানে ফটকাবাজ, মৌসুমি ব্যবসায়ী, অসৎ ধান্ধাবাজ ব্যবসায়ীর আবির্ভাব ঘটছে প্রচণ্ড হারে। দিনে দিনে কোটিপতি হওয়ার বাসনায় অনেক লোক অনৈতিক ব্যবসায় ঝুঁকছে। তাদের সে অপবাসনার বলি হচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা।

ভোক্তাদের যথাযথ প্রতিনিধিত্বের অধিকার : বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত যে কোনো নীতিনির্ধারণী কথা এলেই সব জায়গায় অসমণ্ডঅংশগ্রহণ এবং সব ক্ষেত্রেই যাদের জন্য নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে, তাদের অংশগ্রহণ থাকে নামমাত্র। যেমন- আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন কমিটি, বাস ভাড়া নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব নেই। এখানে বাস মালিক, শ্রমিক ছাড়া কিছু সরকারি কর্মকর্তা প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। সে কারণে যাত্রীদের প্রকৃত সমস্যা উদ্ঘাটনের পরিবর্তে এখানে বাস-মালিকদেরই স্বার্থ রক্ষা করা হয়। একইভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ, মূল্য নির্ধারণবিষয়ক যে কোনো সভায় শুধু ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট খাতের সরকারি কর্মকর্তারাই অংশ নিয়ে থাকেন। এখানে ভোক্তাদের অংশগ্রহণ নেই।

এসব নীতিনির্ধারণী সভায় শুধু ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব থাকায় সাধারণ ভোক্তা বা জনগণ সমস্যা ও ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরতে পারেন না। ফলে জনগণের স্বার্থ ও অধিকার এখানে পুরোপুরি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। অথচ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। ক্যাব ভোক্তাদের প্রতিনিধি হলেও সরকারের অধিকাংশ নীতিনির্ধারণী ফোরামে ক্যাবকে সে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। যা ভোক্তা অধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন।

সাধারণ ভোক্তারাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি : এখন সরকারের একচেটিয়া ব্যবসায়ী তোষণনীতি পরিহার করে ভোক্তাদের সত্যিকারার্থে ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। ক্রেতা-ভোক্তা হিসেবে নিজেদের ইচ্ছামতো, আসল-নকল পরখ করে পণ্য ক্রয়ের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা বাড়ানো গেলে, ভোক্তা হিসেবে তাদের সচেতনতা ও পণ্যের মান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়া গেলে এ ভোগান্তির মাত্রা অনেকাংশেই লাঘব সম্ভব। কাজেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মাঝে বৈষম্য দূর করতে ভোক্তা সংগঠনগুলোর প্রতি সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো জরুরি। সরকার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ন্যায় ভোক্তা সংগঠন, বিশেষ করে- কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও শাখাগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব ও সমন্বয় সাধনে সক্ষমতা বাড়ানো, ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা ও শিক্ষা প্রদান করে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মাঝে ব্যবধান হ্রাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, সেবা সার্ভিসসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ বিষয়ে সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংগঠনের সমঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলেই ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া আধিপত্য ও প্রভাব খর্ব হবে। তখন জনগণ আর মূল্য সন্ত্রাসীদের দ্বারা সর্বশান্ত হবে না। মনে রাখতে হবে, জনগণ তথা সাধারণ ভোক্তারাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক ও গণমাধ্যমকর্মী