পিতামাতা মহান রবের পক্ষ থেকে এক বিরাট নেয়ামত। পিতা-মাতার হাত ধরেই প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে আগমন করে। তাদের লালন-পালনে বেড়ে ওঠে। চলতে শিখে। এ কারণেই কোরআনের বহু আয়াত ও বহুসংখ্যক হাদিসে পিতা-মাতার হক সম্পর্কে বিভিন্নভাবে ইরশাদ হয়েছে।
পিতা-মাতার মাহাত্ম্য ও মহত্ত্ব : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর (হে নবী) আপনার প্রভু এই মর্মে রায় দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবেন। যদি আপনার নিকট তাদের কেউ বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয় তাহলে তাদেরকে ‘উফ’ বলবেন না এবং তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করবেন না, এবং তাদের উত্তম কথা বলুন। আর তাদের জন্য রহমতের ডানা প্রসারিত করে দিন আর বলুন, ‘হে আমার প্রভু, আপনি তাদের প্রতি তেমনি রহম করুন, যেমন তারা আমাকে শিশুকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনী ইসরাইল : ২৩-২৪)।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমার সর্বোত্তম সাহচর্যের বেশি অধিকারী কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি বলল ‘এরপর কে?’। তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি বলল ‘এরপর কে?’। তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি বলল, ‘এরপর কে?’। তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। (বোখারি)।
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানদের অধিকার : কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব এবং দুনিয়াতে আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টি মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা ও আখেরাতে তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য বহু প্রকার করণীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যের আদেশ এসেছে। সন্তানের ওপর পিতা-মাতার যেমন অধিকার আছে তেমনি পিতা-মাতার ওপরও সন্তানের অধিকার আছে। সন্তানের কিছু অধিকার জন্মের আগে আর কিছু অধিকার জন্মের পরে।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অধিকার
১. জন্মের পরপরই মৃদুস্বরে ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দেয়া। ২. জন্মের সপ্তম দিবসে অর্থপূর্ণ সুন্দর ইসলামি নাম রাখা। ৩. ছেলেসন্তানের জন্য দুইটি এবং মেয়েসন্তানের জন্য একটি ছাগল আকিকা করা। ৪. শিশুকে পুরো দুই বছর বুকের দুধ পান করানো। (সুরা বাকারা : ২৩৩) ৫. সন্তানের লালনপালন ও ব্যয়ভার বহন করা। ৬. কন্যাসন্তানদের ব্যয়ভার বহনে অধিক গুরুত্ব দেওয়া। ৭. ধর্ম শেখানো। (ইবনে মাজাহ : ৩৬৭১)। ৮. সন্তানের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা এবং স্নেহ করা। ৯. সব সন্তানের প্রতি সমতা ও ন্যায় বজায় রাখা। ১০. বিয়ের উপযুক্ত হলে বিয়ের ব্যবস্থা করা। ১১. সন্তানকে ধর্ম পালনের উপযোগী পরিবেশ দেওয়া।
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার হক : কোরআন ও হাদিসের আলোকে সন্তানের ওপর পিতা-মাতার ১৪ টি হক রয়েছে।
জীবিত থাকাকালীন ৭ হক : ১. তাদের সম্মান রক্ষা করা। ২. তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকা। ৩. তাদের আনুগত্য করা। ৪. তাদের খেদমত করা। ৫. তাদের অভাব মোচন করা। ৬. তাদের আরামণ্ডআয়েশের প্রতি যত্নবান থাকা। ৭. সন্তান দূরে থাকলে মাঝেমধ্যে তাদের দেখতে যাওয়া।
মৃত্যুর পর ৭ হক : ১. তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা। ২. তাদের উদ্দেশ্যে সৎকর্মের সাওয়াব প্রেরণ করা। ৩. তাদের বন্ধুমহলের ও নিকটতমদের সম্মান করা। ৪. তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। ৫. তাদের ঋণ ও আমানত পরিশোধ করা । ৬. তাদের শরিয়তসম্মত সকল অসিয়ত কার্যকর করা। ৭. মাঝেমধ্যে তাদের কবর জিয়ারত করা।
লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।