ঢাকা বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যুগে যুগে রোজা

সিয়াম সাধনা ফরজ। এটি যেমন এ যুগে ফরজ, তেমনি অতীতেও আবশ্যক ছিল। যদিও এর সময়, নিয়ম ও ধারায় ভিন্নতা ছিল। কোন নবীর যুগে রোজা কেমন ছিল, তা জানাচ্ছেন- ইলিয়াস মশহুদ
যুগে যুগে রোজা

আদম (আ.)-এর যুগ : প্রথম নবী আদম (আ.)-এর ধর্মে রোজার বিধান দেয়া হয়েছিল বলে তাফসির গ্রন্থগুলোতে উল্লেখ পাওয়া যায়।

অবশ্য সেই রোজার ধরন ও প্রকৃতি কেমন ছিল, তা জানা যায় না। এ বিষয়ে বাইবেল, কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের কিতাবেও কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে কেউ কেউ বলেছেন, আগের যুগের প্রত্যেক নবীর শরিয়তেই চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিধান ছিল। যাকে আমরা আইয়ামে বিজের রোজা নামে জানি।

নুহ (আ.)-এর যুগ : নুহ (আ.) থেকে শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবীর যুগেই প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখার বিধান ছিল। পরে তা রমজানের রোজার বিধানের মাধ্যমে রহিত হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/৪৯৭, তাফসিরে কুরতুবি : ২/২৭৫)। এক বর্ণনায় এসেছে, নুহ (আ.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ছাড়া পুরো বছর রোজা রাখতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৭১৪)।

ইবরাহিম (আ.)-এর যুগ : মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর যুগে ৩০টি রোজা ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর প্রতি রমজানের প্রথম তারিখ সহিফা অবতীর্ণ হতো। এজন্য তিনি রমজানের এক তারিখ রোজা রাখতেন। তার অনুসারীদের জন্য ১, ২ ও ৩ রমজান রোজা রাখা ফরজ ছিল। এ ছাড়া নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তির স্মরণে ১০ মোহাররম তার উম্মতের জন্য রোজা রাখা ফরজ ছিল। আর কোরবানির স্মরণে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজসহ মোট সাত দিন ইবরাহিম, ইসমাঈল ও ইসহাক (আ.)-এর উম্মতের জন্য রোজা ফরজ ছিল।

দাউদ (আ.)-এর যুগ : আসমানি কিতাব জবুরপ্রাপ্ত নবী দাউদ (আ.)-এর সময়ও রোজার প্রচলন ছিল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা দাউদ (আ.)-এর রোজা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, আরেকদিন খেতেন।’ (মুসলিম : ১১৫৯)।

মুসা (আ.)-এর যুগ : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করে ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা রাখতে দেখলেন। তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ তোমরা কীসের রোজা রাখছ?’ তারা বলল, ‘এটা সেই মহান দিন, যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। ফলে শোকরিয়াস্বরূপ মুসা (আ.) ওই দিনে রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরাও তার অনুস্মরণে এ দিন রোজা রাখি।’ এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি তোমাদের চেয়ে মুসা (আ.)-এর অধিক আপনজন।’

এরপর তিনি এ দিন রোজা রাখলেন। সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (বোখারি : ২০০৪, মুসলিম : ১১৩০)। এ ছাড়া মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে আল্লাহর কাছ থেকে তাওরাতপ্রাপ্তির আগে ৪০ দিন পানাহার ত্যাগ করেছিলেন বলে জানা যায়। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে বিষয়টি বর্ণিত আছে। ইহুদিরা সাধারণভাবে এ ৪০টি রোজা রাখা ভালো মনে করলেও ৪০তম দিনে রোজা রাখা তাদের জন্য ফরজ ছিল। ওই দিনটিকেই আশুরা বা দশম দিন বলা হয়। এ ছাড়া ইহুদিদের জন্য প্রতি শনিবারসহ বছরের অন্যান্য সময় রোজার বিধান ছিল।

ঈসা (আ.)-এর যুগ : আসমানি কিতাব ইনজিলপ্রাপ্ত নবী ঈসা (আ.)-এর যুগেও রোজার প্রমাণ পাওয়া যায়। ঈসা (আ.)-এর অনুসারী খ্রিষ্টানরা রোজা রাখত। বর্তমানে তাদের মধ্যে দু’ধরনের রোজা প্রচলিত আছে : প্রথমটি হলো, তাদের পিতার উপদেশে নির্দিষ্ট কয়েক দিন খাদ্যপানীয় থেকে বিরত থাকা; আর ইফতার হবে নিরামিষ দিয়ে, তাতে মাছ-মাংস ও দুগ্ধজাত জিনিস খাওয়া যাবে না।

যেমন- বড় দিনের রোজা, তাওবার রোজা, যা ৫৫ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। এমনিভাবে সপ্তাহে বুধ ও শুক্রবারের রোজা। দ্বিতীয়টি হলো, খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। তবে শুধু মাছ খাওয়া যেত। এ রোজার মধ্যে ছোট রোজা বা জন্মদিনের রোজা; যা ৪৩ দিন দীর্ঘায়িত হয়; দূতদের রোজা; মারইয়ামের রোজা ইত্যাদি। তবে খ্রিষ্টধর্মে ফরজ বলতে কোনো রোজা ছিল না। (তাফসিরে তাবারি : ৩/৪১১)।

লেখক : সম্পাদক, কালান্তর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত