ঢাকা শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হজের কেনাকাটা

সৈয়দা মাদীহা আয়েশা
হজের কেনাকাটা

আমাদের দেশের অনেকের হজের সফরই প্রথম বিদেশ সফর। এটি বিশেষ ধরনের ধর্মীয় সফর। তাই হজের সফরের উপকরণগুলো সংগ্রহের ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার। হজের সময় কোন কোন জিনিস সংগ্রহ করা উচিত, তা অনেকেরই অজানা। হজে যাওয়ার আগে সংগ্রহ করার মতো প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণের তালিকা দেয়া হলো-

বড় ট্রলি ব্যাগ : অনেক ক্ষেত্রে হজ কাফেলা সম্মানিত হাজি সাহেবদের বাংলাদেশের পতাকা চিহ্নিত ও হজ কাফেলার ঠিকানা সংবলিত ব্যাগ সরবরাহ করে। তাই মোয়াল্লিমকে না জানিয়ে বড় কোনো ব্যাগ কিনলে অর্থের অপচয় হতে পারে।

সহজে বহনযোগ্য ব্যাগ : সহজেই কাঁধে বা হাতে বহন করা যায়, এমন একটি ছোট হালকা চামড়া বা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে যাওয়া ভালো। এ ব্যাগটি যাত্রাপথে বিশেষ করে হজের মূল সফরে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ) বিশেষ দরকার হবে। কারণ, ওই সময় বড় ব্যাগ হাজিদের কাছে রাখা সম্ভব হয় না। তাই সে দিনগুলোতে একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সঙ্গে রাখতে ছোট ব্যাগটি খুব দরকার।

ইহরামের কাপড় : হজের সফরের জন্য একাধিক সেট ইহরামের কাপড় সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উত্তম। কমপক্ষে দুই সেট ইহরামের কাপড় সঙ্গে নিয়ে যাওয়া জরুরি। হজের সময় মা-বোনদের স্বাভাবিক কাপড় পরা বৈধ। তবে মুখের পর্দা রক্ষার জন্য নারী হাজিদের জন্য কিছু বিশেষ সানক্যাপ পাওয়া যায়। যেগুলোতে যুক্ত বিশেষ পর্দা নারী হাজিদের মুখের পর্দা যথাযথভাবে রক্ষা করে। আবার ইহরামেরও কোনো সমস্যা হয় না।

হালকা ওজনের আয়রন মেশিন : মক্কা-মদিনায় কাপড় ইস্ত্রি করা খুব ব্যয়বহুল। তাই সমমনা পাঁচণ্ডছয়জন মিলে একটি হালকা আয়রন সঙ্গে নিলে বেশ উপকার হবে। একইভাবে কয়েকজন মিলে একটি মাল্টিপ্লাগ নিয়ে গেলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।

একান্ত ব্যক্তিগত উপকরণ : ছোট আয়না, চিরুনি, কেচি, রেজার, ব্লেড, সুই-সুতা, নাইলনের দড়ি ইত্যাদি। তবে নেয়ার সময় অবশ্য হাতব্যাগে রাখা যাবে না; বরং এগুলো বড় ব্যাগে দিতে হবে। ধাতব পদার্থ ও দড়ি হ্যান্ডব্যাগে বহনে বিমানের নিষেধাজ্ঞা আছে। ব্যাগ গোছানোর সময় নাইলনের দড়ির অর্ধেকটা বাইরে রাখতে হবে। যাতে তা দিয়ে বড় ব্যাগটা যাত্রার আগে ভালো করে বাঁধা যায়।

ব্যক্তিগত প্রসাধনী : সাবান দুটি, সাবানের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, নীলের ছোট কৌটা একটি, ব্যবহারের তেল পরিমাণমতো, পেট্রোলিয়াম জেলি মাঝারি সাইজের একটি, টয়লেট পেপার তিনটি, টুথপেস্ট একটি, ব্রাশ ও মেসওয়াক দুটি, ছোট তালা-চাবি এক সেট নেয়া ভালো।

দুই ফিতার জুতা : ইহরাম অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য দুই ফিতার স্যান্ডেল বা জুতা দুই জোড়া। হালাল অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য স্যু বা চামড়ার জুতা এক জোড়া। মা-বোনদের জুতায় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারা দুই-তিন জোড়া আরামদায়ক জুতা সঙ্গে নিতে পারেন।

জুতার ব্যাগ : মসজিদে জুতা বহনের জন্য কাপড়ের ছোট ব্যাগ দুটি নিন।

পাথর বহনের ব্যাগ : এটা না হলেও চলে। তবে ইচ্ছা করলে সংগ্রহে রাখতে পারেন।

শুকনো খাবার : সুবিধার জন্য অল্প চিড়া ও গুড়, দুই-তিন প্যাকেট বিস্কুটও সঙ্গে রাখা যেতে পারে। যাত্রাপথে বিশেষ করে আরাফা ও মিনায় খাবার পৌঁছাতে বিলম্ব হলে এগুলো কাজে আসবে। কারণ, হজে এসব জায়গায় দোকানের অনুমতি দেয়া হয় না।

ব্যক্তিগত ক্রোকারিজ সামগ্রী : চা-কফি পানে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা কফির উপকরণ সঙ্গে নেবেন। সেই সঙ্গে মেলামাইনের থালা একটা, গ্লাস একটি, মগ একটি, চা চামচ একটি, ফল কাটার ছোট চাকু একটি। কোমর বেল্ট, টাকার ব্যাগ, গলায় ঝুলানো ব্যাগ- এগুলো বিভিন্ন সংস্থা প্রচার ও সওয়াবের নিয়তে হাদিয়া দিয়ে থাকে। তাই এগুলো আগে কেনার দরকার নেই।

তাওয়াফ তাসবিহ : তাওয়াফের সময় নির্ভুল হিসেব রাখার জন্য একটি তাওয়াফ তাসবিহ সংগ্রহে রাখা যেতে পারে।

হজ গাইড : নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমের লিখিত হজের মাসআলা-মাসাইল সংক্রান্ত বই।

বৈদেশিক মুদ্রা : কোরবানির খরচ ও হজের ব্যক্তিগত খরচের জন্য প্রয়োজনমতো সৌদি রিয়াল আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা ভালো। কারণ, বিগত বছরগুলোতে যারা হজ করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হলো, শেষ সময়ে রিয়ালের দাম বেড়ে যায়।

সৌদি আরবের সিম : অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারপোর্টে বিভিন্ন কোম্পানি মোবাইলের সৌদি সিম ফ্রি উপহার দেয়। না পেলে মোবাইল সিম মক্কা-মদিনায় কিনতে পাওয়া যায়। আর সিমের রিচার্জ কার্ড সেখানকার মুদি দোকান বা ‘বাকালা’গুলোতে সহজে পাওয়া যায়। অনেক সময় সিম বিক্রেতারা রিচার্জ কার্ড না রাখায় হাজিরা বিড়ম্বনায় পড়ে যান। তবে হজের সফরে পুণ্যভূমিতে একান্ত বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মোবাইলে কথা না বলাই উত্তম। এতে পবিত্র কাবায় মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হয়। কোনো খারাপ সংবাদ পেলে মন উতলা হতে পারে। বিশেষ করে, ইহরাম অবস্থায় এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা দরকার।

হাওয়ার বালিশ : প্রয়োজনীয় তোয়ালে বা গামছা, একটি চাদর, একটি কাঁথা, একটি ছোট বাতাসের বালিশ নেয়া যেতে পারে। এগুলো মুজদালিফায় কাজে আসতে পারে।

অন্যান্য কাপড় : পুরুষরা হজে হালাল অবস্থায় পরার জন্য কমপক্ষে তিনটি পাঞ্জাবি, দুটি পাজামা, দুটি লুঙ্গি, দুটি গেঞ্জি বা ফতুয়া সঙ্গে নিতে পারেন। নারীরা সব সময় পরার জন্য কমপক্ষে চার সেট সেলোয়ার-কামিজ, স্কার্ফ ও দুটি বোরকা, হাতমোজা এবং মোজা সঙ্গে নিতে পারেন। এগুলো আগে থেকে থাকলে নতুন করে কেনার দরকার হবে না। এ ছাড়া কাউন্টিং তাসবিহ, মেসওয়াক ইত্যাদি সাধারণত মানুষের কাছে থাকে। যদি না থাকে, তাহলে সংগ্রহ করা যেতে পারে।

আতর : হালাল অবস্থায় ব্যবহারের জন্য পছন্দমতো আতর সংগ্রহ করা যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় ওষুধ : হজে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত। নিজের দৈনন্দিন ব্যবহারের ওষুধের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বর, ঠান্ডা, পেটের পীড়া ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ভালো। কারণ, সৌদি আরবে ওষুধের দাম তুলনামূলক বেশি।

উল্লিখিত উপকরণগুলো বাইতুল মোকাররম ও হাজি ক্যাম্প এলাকায় সহজে পাওয়া যায়। তাছাড়া এখন বিভিন্ন অনলাইন শপে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো একসঙ্গে পাওয়া যায়। শুধু গুগলে বা ফেসবুকে ‘ইহরাম প্যাকেজ’, ‘হজ প্যাকেজ’ বা ‘হজের উপকরণ’ ইত্যাদি লিখে সার্চ দিলে সহজেই পাওয়া যাবে। প্রডাক্ট লিস্ট, স্থায়ী অফিস ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহের পর তাদের সঙ্গে কথা বলে বিশ্বস্ত মনে হলে তাদের থেকেও সংগ্রহ করা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত