ব্যবসায়ীরা বেশি সোয়াব কামাতে পারেন রোজায়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

পৃথিবীর অন্যসব দেশে মাহে রমজান শুরু হলে নিত্যপণ্য এবং দ্রব্যসামগ্রী মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার ভেতরে রাখার প্রতিযোগিতা লেগে যায়। কীভাবে রোজারদের সেবা করা যায়, সাহরি ও ইফতারকে আরও বর্ণিল করা যায়Ñ এসব কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্য দ্রব্যসামগ্রীর ওপর বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকেন। মধ্যম আয়ের মানুষ রমজান এলে একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলেন। এ মাসে সুন্দরভাবে চলার পরও কিছু সঞ্চয় করা যাবে, কিছু দান করা যাবেÑ এ ভেবে তাদের প্রশান্তি আরও বেড়ে যায়। এর ঠিক উল্টো চিত্র বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশখ্যাত আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের। এখানে রমজান যেন এক বিভীষিকার নাম। আমাদের মতো নিম্নমধ্যম আয় ও উচ্চমধ্যম আয়ের মানুষের জন্য মাহে রমজান এক বড় আতঙ্ক। রমজান মানেই অতিরিক্ত খরচ। অন্য মাসে কোনোরকম চললেও রমজানে এসে হোঁচট খেতে হয় মাসের শুরুতেই। দেড়-দুই মাস আগে থেকেই হু হু করে বাড়তে থাকে নিত্যপণ্যের দাম। রমজান যত কাছে আসে, বাজারের আগুন তত ছড়িয়ে পড়ে শহর-গঞ্জের সীমা ছাড়িয়ে মানুষের ঘরে ঘরে। কত মানুষ যে, ঠোঁট কামড়ে গোপনে অশ্রু ফেলে খোদার কাছে প্রার্থনা করেনÑ ‘হে আল্লাহ! এবারের রমজানটা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোরকম পার করার ব্যবস্থা করে দিন।’

এতক্ষণ যা বললাম, এসব আমার বানানো কথা নয়। রমজানকে কেন্দ্র করে একদল অসাধু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর কারণে সুন্দর রমজানযাপন আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষের জন্য স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেই বোঝা যাবে, রমজানের আনন্দের চেয়ে বেদনার ছাপই বেশি তাদের চোখে-মুখে। এ বেদনা অন্য কিছু নয়। অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক কৃত্রিমভাবে বাজার অস্থিতিশীল করার বেদনাবোধ। জাতীয় দৈনিকগুলো এ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। চলবে রমজান পর্যন্ত। ‘মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লাগামহীন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবসামগ্রী। ছোলা-বেগুন-চিনির দাম লাগাম ছাড়া’Ñ এসবই পবিত্র রমজান ও রমজানের আগে সংবাদমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই বাজার মিনিটরিংয়ের উদ্যোগ থাকে; কিন্তু এত বড় সমস্যা তো সরকার একার পক্ষে সামলান সম্ভব নয়। তাই সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

মুনাফখোর ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মরোধে ইমাম-খতিবদের জোরালো বয়ান রাখতে হবে মসজিদে মসজিদে। পবিত্র কোরআন এবং রাসুল (সা.) এর সহিহ হাদিসে মুনাফাখোরদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে, মানুষের জীবন কষ্টের মধ্যে ফেলে দেওয়ার শাস্তি কী, আবার মানুষের জন্য একটু সহজ করে দেওয়ার পুরস্কার কী এসব বেশি বেশি বলতে হবে বয়ানে। আল্লাহ চাইলে আমাদের ব্যবসায়ী ভাইদের মন হেদায়াতের দিকে, ঘুরে যেতে পারে।

প্রিয় আমার ব্যবসায়ী ভাই! রমজানে বেশি মুনাফার লোভে দয়া করে আখেরাত নষ্ট করবেন না। আপনি কী জানেন, আপনার একটু বেশি লাভ, ক্রেতার জন্য কত পেরেশানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধার-কর্জ করেও সাধারণ মানুষ রমজান পার করতে হিমশিম খেয়ে যায় আপনার জন্যই। মানুষের কষ্ট দেখে আমাদের নবীজি বলেছেন, ‘হে আমার উম্মত জেনে রাখ! মানুষের খাদ্যসামগ্রী অবৈধভাবে মজুদকারী আমার ও আমার আল্লাহর দৃষ্টিতে বড় গোনাহগার।’ অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘উম্মতসব শোন মজুতদারির মতো নিকৃষ্ট মানুষ কি আর আছে এ পৃথিবীতে? আল্লাহ তায়ালা যখন তার বান্দাদের অঢেল রিজিক দেন, তখন সে অসন্তুষ্ট হয়। আর আল্লাহ যখন রিজিক একটু সংকীর্ণ করে দেন, তখন সে আনন্দিত হয়।’ ইবনে মাজা শরিফে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের সুবিধার কথা ভেবে যে আমদানি করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে রহমত-বরকতের সাগরে ভাসিয়ে রাখবেন। আর যে মানুষকে অসুবিধায় ফেলার উদ্দেশে খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে, তাকে আল্লাহ নিজে অভিশাপ দেবেন কেন সে তার বান্দাদের কষ্টের কারণ হলো।’ এমনিভাবে অনেক হাদিস পাওয়া যায় মজুতদার সম্পর্কে। ব্যবসায়ী ভাইদের বলছি, ভাই! খাদ্যদ্রব্য মানুষের জন্য সহজ করে দিন। আল্লাহ তায়ালা আপনার জীবন সহজ করে দেবেন। ভাই! একটু লাভের জন্য কোটি কোটি রোজাদারের আত্মার অভিশাপের ভাগী কেন হচ্ছেন। আপনি চাইলেই কোটি কোটি মানুষের আত্মার শান্তি কামাতে পারেন। একটিবার মানুষের জন্য, পরের জন্য করেই দেখুন না আল্লাহপাক আপনার জীবনে কত বড় নেয়ামত দেন তা নিজেই বুঝতে পারবেন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি, পীর সাহেব আউলিয়ানগর

www.selimayadi.com