মোমিনের সমাপ্তি যেমন

আবদুল্লাহ সরদার

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ডিসেম্বরের শেষ দিনেই মানুষের বয়স যেন বেড়ে যায়। জীবনের একটি বসন্ত মিলিয়ে যায় অধরায়। মন খারাপের প্রচণ্ড বৃষ্টি নামে হৃদয়ের মাটিতে। শুরু হয় পূর্ণ-অপূর্ণের হিসাব-নিকাশ। একজন মোমিনকেও ঠিক তা-ই করতে হয়। বসতে হয় গত হয়ে যাওয়া বছরটির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খেরোখাতা খুলে। কষে নিতে হয় হারানো দিনগুলোর জমা-খরচের অঙ্ক। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! ভয় কর আল্লাহকে। আর প্রতিটি মানুষই যেন সামনের জন্য যা পাঠিয়েছে, তার অপেক্ষা করে।’ (সুরা হাশর : ১৮)। তাই বছরের এ শেষ সময়ে মোমিনের রয়েছে কিছু করণীয়। যেমন-

তওবা

সারা বছরে কত-শত পাপে জড়িয়ে পড়ি আমরা। কলুষিত হয় আমাদের মন-মনন। আঁধারের ভয়াল থাবা যেন গ্রাস করে নেয়। তবু এ পাপিষ্ঠ মন নিয়ে দাঁড়াতে হবে রবের সামনে। চেয়ে নিতে হবে ক্ষমার ফুল। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, এ পাপকর্ম ফের না করার। এটাই হতে পারে মোমিনের সফলতার মাপকাঠি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সবাই প্রত্যাবর্তন কর আল্লাহর দিকে, তাহলে সফল হবে।’ (সুরা নুর : ৩১)। বছরের এ শেষ সময়ে নিজেকে তাই জড়িয়ে নিতে হবে শুভ্রতার চাদরে।

মানুষের জন্য দোয়া

হারিয়ে গেছে কত প্রিয়মুখ। ছিঁড়ে গেছে মায়ার বাঁধন। কত মানুষ খুইয়েছে বাসস্থান। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই তাদের। তাদের জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করা চাই। দিন শেষে দোয়াই একজন মোমিনের সফল হাতিয়ার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ডাক আমায়, সাড়া দেব।’ (সুরা মোমিন : ৬০)।

অতীতের জন্য হা-হুতাশ করা বারণ

সময়ে-অসময়ে কত কিছুই তো হারাই আমরা। কিছু কপালের লিখন, আর কিছু নিজ হাতের কামাই। এর জন্য হা-হুতাশ করা যাবে না। ভরসা রাখতে হবে মহান আল্লাহর ওপর। আগামী দিন আরও সুন্দর হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা যুমার : ৫৩)।

প্রাপ্তির জন্য শোকর করা

অনেকেই মন্তব্য করে, অপূর্ণতা ছাড়া জীবনে কিছু নেই। এটা কী আসলেই উচিত! এই যে একটা জীবন পার করছি, এর চেয়ে সুন্দর এবং মোহনীয় বিষয় আর কী হতে পারে! হাজারো অপূর্ণতার ভিড়ে আমাদের প্রাপ্তিরও খামতি নেই। শুধু দরকার, একটু চোখ মেলে তাকানোর, রবের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। অকৃতজ্ঞ হলে জেনে রাখ, আমার শাস্তি বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম : ৭)।

আগামীর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া

পেছনের সব হতাশা ধুয়ে-মুছে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আগামীর জন্য। ঈমান-আমলে পৌঁছাতে হবে উন্নতির দ্বারপ্রান্তে। খেয়াল রাখতে হবে, আগামী বছরটা যেন এ বছরের মতে না কাটে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির দুইটি দিন একই রকম কাটল, সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’ (দায়লামি)। অর্থাৎ আজকের দিনটি যেন গতকালের চেয়েও আমাদের ভালো কাটে, উন্নতির আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারি।

মানুষের প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়া

এটা মূলত বান্দার হক। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কত মানুষের কাছ থেকে ধার নিই। তার ঋণ শোধ করা চাই। কারও মনে কষ্ট দিলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে যারা কষ্ট দেয়, দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তাদের অভিশাপ দেন এবং তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন লাঞ্ছনাকর শাস্তি। আর যারা মোমিন নর-নারীকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বয়ে বেড়াবে।’ (সুরা আহযাব : ৫৭-৫৮)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে প্রকৃত নিঃস্ব সে ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন অনেক নামাজ, রোজা ও জাকাতের নেকি নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু তার অবস্থা এমন যে, কাউকে গালি দিয়েছে। কারও প্রতি দিয়েছে মিথ্যা অপবাদ। অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছে কারও সম্পদ। রক্তপাত ঘটিয়েছে। হত্যা করেছে কাউকে। তারপর অত্যাচারিত ব্যক্তিকে দেওয়া হবে তার নেকিগুলো। অন্যদের দাবি পূরণের আগেই নেকি শেষ হলে তাদের পাপের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে তার ওপর। অতঃপর নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে।’ (মুসলিম : ২৫৮১, তিরমিজি : ২৪১৮)।