ইবাদতের সুসময়
শীতকালীন এ সময়ে ইবাদতের বড্ড বেশি সুযোগ মেলে। রাত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। দিন নেমে আসে সংক্ষিপ্ত আকারে। নির্জনতম ইবাদত আল্লাহর পছন্দ। এটি শীতের রাতেই করা যায় বেশি সময় ধরে। দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে বেগ পেতে হয় না। আবহাওয়া আর্দ্র থাকে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয় না। ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘শীতকে স্বাগত জানাও। কারণ, এ সময়ই তো বরকত নেমে আসে। নামাজ আদায়ের জন্য রাত দীর্ঘ হয়, রোজা রাখার জন্য দিন ছোট হয়ে আসে।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ : ৩২৭)।
শীতল গনিমত
আবু হুরায়রা (রা.) শীত এলেই খুব উদ্যমী হয়ে উঠতেন। দেহমনে বিপ্লব নামত যেন। সোৎসাহে বলতেন, ‘শীতল গনিমতের ব্যাপারে তোমাদের কিছু বলব কী?’ উপস্থিত লোকজন আগ্রহী হয়ে উঠত। বলত, ‘অবশ্যই।’ তারপর তিনি বলতেন, ‘শীতকাল।’ (মাসদারে সাবেক : ৩২৬)।
শীতের অজু
পানি ছুঁতে গেলেই বেঁকে বসে শরীর। বিদ্রোহ করে ওঠে মন। তবু উপেক্ষা করে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় ইবাদতের জন্য। এরশাদ হচ্ছে, ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে- সংকটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোজা আর শীতের অজু।’ (আদ দোয়া লিত তাবারানি)। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) সাহাবিদের বললেন, ‘কীসে তোমাদের পাপ মোচন হয় আর মর্যাদা বাড়ে, তা কী জানিয়ে দেব?’ সাহাবিরা সমস্বরে বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল!’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘শীতের কষ্ট সত্ত্বেও ভালোভাবে অজু করা।’ (মুসলিম)।
শীতে আর্তমানবতা
চলতি পথে লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, সারি সারি মানুষ শুয়ে আছে পথজুড়ে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই যাদের। শরীরে নেই প্রয়োজনীয় কাপড়। আমরা যখন আরেকটু ফ্যাশেনবল শীতের কাপড় খুঁজি, তখন তারা এক টুকরো কাপড়ের হাহাকারে ডুকরে কেঁদে ওঠে। হৃদয় মলিন হয় তাদের। এ সময়টা হতে পারে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মোমিনরা আল্লাহর প্রেমাসিক্ত হয়ে খাদ্য দান করে গরিব, এতিম ও বন্দিদের।’ (সুরা দাহর : ৮)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে মোমিন অন্য বস্ত্রহীন মোমিনকে কাপড় পরিয়ে দেয়, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন।’ (তিরমিজি : ২৪৪৯)।
শীতে ভিন্ন চিত্র এক
আবু যর গিফারি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) একদিন বেরুলেন। শীতকাল তখন। গাছের পত্রপল্লব ঝরে পড়ছে চারদিকে। তিনি গাছের দুটি ডাল ধরলেন। ফলে পাতাগুলো আরও বেশি ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, ‘হে আবু যর!’ আমি বললাম, ‘জি হে আল্লাহর রাসুল!’ তিনি বললেন, ‘কোনো মুসলমান বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে নামাজ আদায় করে, তখন তার পাপগুলো এই গাছের পাতার মতো ঝরে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২১৫৯৬)।