নামাজ দ্বীনের খুঁটিগুলোর অন্যতম। আল্লাহর পছন্দনীয় ইবাদত। বান্দা যখন সেজদা করে, তখন সে আল্লাহর কাছাকাছি হয়। নামাজ রবের সঙ্গে মোমিনের যোগাযোগের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। রাসুল (সা.) নামাজের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের কথা বলেছেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.), ওলি-আউলিয়ায়ে কেরামসহ ধর্মীয় মনীষীরা নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে সব প্রয়োজনে সাহায্য প্রার্থনা করতেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।’ (সুরা বাকারা : ৪৫)। তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশোভন ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত : ৪৫)। হাদিসেও বহু স্থানে নামজের গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঈমান ও কুফরির মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ ছেড়ে দেওয়া।’ (মুসলিম : ৮২, তিরমিজি : ২৬২০, সুনানে ইবনে মাজাহ : ১০৭৮)।
নামাজ শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত
নামাজ শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, অজু। তাই অজু শুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে থাকা চাই একান্ত একনিষ্ঠতা ও সতর্কতা। পবিত্র পানি দিয়ে অজু সম্পন্ন করা চাই। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অজু ছাড়া নামাজ হয় না এবং আত্মসাতের সম্পদ থেকে সদকা হয় না।’ (মুসলিম : ১/১১৯)। অজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য পানির পবিত্রতা রক্ষা করা একান্ত আবশ্যকীয়। খালবিল, নদীনালার পানি পবিত্র, যার স্বাদ, গন্ধ ও তরলতা ঠিক থাকে। বিপরীতে অল্প পানি তথা বালতি, কলসি, বড় গামলা ও এ জাতীয় পাত্রের পানি অপবিত্র হওয়ার জন্য উপরোল্লিখিত পানির তিনটি গুণ পরিবর্তিত হওয়া শর্ত নয়। তাই সামান্য নাপাক পড়ার মাধ্যমে পানি নাপাক হতে পারে।
পানি সংরক্ষণে বিশেষ সতর্কতা
আমাদের অনেকেই অজু, গোসলসহ নানা কাজের জন্য ব্যবহৃত গোসলখানায় ঢাকনাহীন বালতি ও গামলায় পানি সংরক্ষণ করে থাকি। অধিকাংশ গোসলখানায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার স্থান থাকে। তাই গোসলখানা ব্যবহারের সময় অসতর্কতাবশত সংরক্ষিত পানিতে নাপাকের ছিটেফোঁটা মেশে। এসব নাপাক সব সময় আমাদের চোখে পড়ে না। ফলে নষ্ট হয় সংরক্ষিত পানির পবিত্রতা। অসতর্কতাবশত সে পানি দিয়ে অজু করে নামাজ আদায় ও অন্যান্য ইবাদত করা হয়। যে কারণে নামাজ ও অন্যান্য আমলের শুদ্ধাশুদ্ধিতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে যায়। এ কারণেই রাসুল (সা.) সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘যখন তোমরা ঘুম থেকে ওঠ, তখন পাত্রে হাত দেওয়ার আগে তিনবার হাত ধুয়ে নেবে। কেননা, তোমাদের জানা থাকে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তোমাদের হাত কোথায় কোথায় স্পর্শ করেছে।’ (মুসলিম : ১/১৩৬)। তাই যেখানে হাতের সঙ্গে নাপাকির সামান্য স্পর্শ হওয়ার কারণে পানির পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) সতর্ক করছেন, সেখানে নাপাকির ছিটেফোঁটা পড়ার দ্বারা পানি নাপাক হওয়ার কথা বলাই বাহুল্য। তাই আমাদের নামাজ বিশুদ্ধ করার জন্য অজুর পানির পবিত্রতা রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য।
অজু ছাড়া নামাজ তলাহীন পাত্রে পানি সংরক্ষণ
অজুর অশুদ্ধতার জন্য আমাদের নামাজ হয় না। আমরা সে নামাজে কোনো তৃপ্তি অনুভব করি না। হৃদয় স্পন্দিত হয় না। এর বহু কারণ আছে। অন্যতম কারণ হলো, নামাজ আরম্ভ করার কাজ অজু সঠিক না হওয়া। অজু ছাড়া নামাজ পড়া তলাহীন পাত্রে পানি সংরক্ষণের মতো। তাই অজুর ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উত্তমরূপে অজু করার ব্যাপারে হাদিসে রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে সুসংবাদ রয়েছে। নুয়াইম মুজমির বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি অজু করলেন। বললেন, আমি নবীজি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে, তাদের অজুর অঙ্গগুলো ঝলমল করতে থাকবে। তাই তোমাদের কেউ যদি তার উজ্জ্বল স্থানকে দীর্ঘ করতে চায়, সে যেন উত্তমরূপে অজু করে।’ (বোখারি : ১/২৫, মুসলিম : ১/১২৬)।