রজব থেকে রমজানের প্রস্তুতি
আবদুল্লাহ হাসান কাসেমি
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন, প্রতিটি মাস বান্দার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা কোরআনের বিভিন্ন সুরা ও আয়াতে সময়ের শপথ করেছেন। মূলত সময়ের সৎ ও অসৎ ব্যবহারের মাধ্যমেই একজন মানুষের পরকালে অনন্ত অবিনশ্বর জীবনের সফলতা কিংবা বিফলতা নির্ধারিত হয়। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত, আগত প্রতিটি মুহূর্তকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয়ে নিমগ্ন থাকা, কোনোভাবেই অর্থহীন কাজে তার অপচয় না করা। কেননা, হেলায়-খেলায়, গাফলত ও উদাসীনতায় সময়ের বরবাদ করলে একদিকে যেমন পস্তাতে হবে, তেমনি অপরদিকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন কোনো বান্দা সেই পর্যন্ত কদম হটাতে পারবে না, যতক্ষণ না তাকে চারটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে- ১. জীবন কোন কাজে ব্যয় করেছে, ২. যৌবন কোন পথে শেষ করেছে, ৩. সম্পদ কোন পথে উপার্জন করেছে এবং কোন কাজে ব্যয় করেছে, ৪. ইলম অনুপাতে কতটুকু আমল করেছে।’ (তিরমিজি : ২৪১৬)।
রজব মাসের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য
অবশ্য কোনো কোনো দিন কোনো কোনো দিনের মোকাবিলায় এবং কোনো কোনো মাস কোনো কোনো মাসের মোকাবেলায় মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বে অনন্য হয়ে থাকে। মর্যাদামণ্ডিত ও মাহাত্ম্যপূর্ণ সময় ও মাসসমূহের অন্যতম হচ্ছে রজব মাস। ইসলামি বর্ষপঞ্জির এ সপ্তম মাসটি আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত চার মাসের অন্যতম। কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা যার উল্লেখ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে আল্লাহর কিতাবে (অর্থাৎ লওহে মাহফুজে) মাসের সংখ্যা বারোটি সেদিন থেকে, যেদিন আল্লাহ আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটাই সহজ সরল দ্বীন (-এর দাবি)। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর ব্যাপারে নিজেদের প্রতি জুলুম কোরো না।’ (সুরা তওবা : ৩৫)। রাসুল (সা.) মাস চারটির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন যেভাবে সময় নির্ধারিত ছিল, তা ফিরে এসেছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চার মাস নিষিদ্ধ ও সম্মানিত। তিন মাস পরপর- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং মুজারের মাস রজব; যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (বোখারি : ৩১৯৭)।
রজব মাসে করণীয় ও বর্জনীয়
রজব মাসের জন্য বিশেষ কোনো নামাজ, বিশেষ কোনো রোজা এবং বিশেষ ধরনের কোনো আমলের কথা ইসলামের প্রমাণপঞ্জিগুলোতে আসেনি। তাই এ মাস উপলক্ষে বিশেষ নামাজ, রোজা ও শবেমেরাজের আমল সম্পর্কে যেসব কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, সবই ভিত্তিহীন। এ ধরনের মনগড়া পদ্ধতিতে আমল ও ইবাদত করে রজব মাসের ফজিলত ও বরকত হাসিল করা সম্ভব নয়। ফজিলত ও বরকত হাসিল করতে হলে অন্যান্য মাসে যেভাবে আমরা ইবাদত-বন্দেগি করি এবং আল্লাহতায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলি, এ মাসেও ঠিক সেভাবেই আমল করতে হবে এবং ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে সাধারণ ও স্বাভাবিক নিয়মে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে। রজবসহ সম্মানিত মাসগুলোর এ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে, এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতেও ইবাদতের তৌফিক হয়। আর কষ্ট করে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্যান্য মাসেও গোনাহ পরিহার করে চলা সহজ হয়। (আহকামুল কোরআন লিল জাসসাস : ৩/১১১)।
রজবের সবচেয়ে বড় করণীয়
সবচেয়ে বড় করণীয় হলো, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সজ্জিত ডালি নিয়ে আগমনকারী পবিত্র রমজানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে অবসর হওয়ার চেষ্টা করা। কেননা, যে কোনো মহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিখুঁতভাবে আঞ্জাম দেওয়ার পূর্বশর্ত হলো, তার পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ। পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজই নিখুঁত ও সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হয় না। সঙ্গে সঙ্গে কায়মনো বাক্যে আল্লাহতায়ালার দরবারে প্রার্থনা করতে থাকা; যেন তিনি আপন দয়া ও করুণায় ইবাদত-বন্দেগির মৌসুমে পৌঁছে দেন এবং রমজানের সওগাত লাভের ভরপুর তৌফিক নসিব করেন। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) রজব মাস থেকেই অধিক পরিমাণে এ দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রমাদান। (অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমজান মাসে পৌঁছে দিন)।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৩৪৬)।