ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

তাবাসসুম মাহমুদ
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

ভাষা আল্লাহর এক অনুপম নিদর্শন। বর্ণ, শব্দ, বাক্য উচ্চারণে নানা বৈচিত্র্য বিদ্যমান। যা মুসলমানের জন্য শিক্ষণীয়। ভাষায় আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব ফুটে ওঠে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাঁর নির্দেশনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা রুম : ২২)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘দয়াময় আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃজন করেছেন মানুষ। শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা।’ (সুরা আর রহমান : ১-৪)। আমাদের মহানবী (সা.)-এর ভাষা ছিল সর্বাধিক সুফলিত। তিনি বলতেন, ‘আরবদের মধ্যে আমার ভাষা সর্বাধিক সুফলিত। তোমাদের চেয়েও আমার ভাষা অধিকতর মার্জিত ও সুফলিত।’ (সহিহুল জামে)। তাই মাতৃভাষার চর্চা, বিশুদ্বভাবে বলা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত।

মাতৃভাষা দ্বীন প্রচারের অন্যতম মাধ্যম

ইসলামের প্রসারে দ্বীনের দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম ভাষা। সুন্দর, শুদ্ধ ভাষায় মানুষকে বোঝানো সম্ভব। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে বিজ্ঞানসম্মত ও উত্তম ভাষণ দ্বারা আহ্বান করো এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে আলোচনা কর।’ (সুরা নাহল : ১২৫)। স্বজাতির ভাষায় ভাষাভাষী করে আল্লাহতায়ালা নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। এতেই বোঝা যায়, মাতৃভাষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ (সুরা ইবরাহিম : ৪)। ঈসা (আ.)-এর ওপর ইনজিল কিতাব তার মাতৃভাষা হিব্রুতে নাজিল হয়েছিল। তাওরাত সুরিয়ানি ভাষায় নাজিল হয়। কারণ, সুরিয়ানি ছিল মুসা (আ.)-এর মাতৃভাষা।

ইসলামের প্রসারে অন্যান্য ভাষা শেখা

শুধু মাতৃভাষাই নয়, অন্য ভাষাও শেখা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। প্রখ্যাত সাহাবি যায়েদ বিন সাবেত আনসারি (রা.) ইহুদি, খ্রিস্টানদের ভাষা শিখেছেন। তাকে দিয়ে রাসুল (সা.) ইহুদি, খ্রিস্টানদের প্রতি চিঠি লেখাতেন। আবার ইহুদি, খ্রিস্টানদের চিঠি তিনি পড়ে শোনাতেন। (বোখারি : ২৬৩১)। দ্বীনের দাওয়াতের জন্য ভাষা শিক্ষা জরুরি। মুসা (আ.) তার ভাষিক জড়তা দূর করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, ‘হে আমার রব, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। হে আমার রব, আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন; যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা তহা : ২৫-২৮)। হারুন (আ.) খুব সুন্দর স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতেন। মানুষকে বোঝাতে পারতেন। যখন মুসা (আ.) ফেরাউনকে ইসলামের দাওয়াত দিতে যান, এ কারণে মুসা (আ.) তাকে সঙ্গী হিসেবে আল্লাহর কাছে চাইলেন। সে ঘটনা কোরআনে এভাবে এসেছে, ‘(মুসা বলল), হে আমার রব! আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে সুন্দর ও স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে। সুতরাং তাকে আমার সঙ্গে সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন।’ (সুরা কাসাস : ৩৪)।

উত্তম ভাষার ব্যবহার সময়ের দাবি

খারাপ, কদর্য ভাষা মোনাফিকের লক্ষণ। তারা যখন ঝগড়া-বিবাদ করে, তখন কদর্য ভাষা ব্যবহার করে। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন সে বিবাদে লিপ্ত হয়, সীমালঙ্ঘন করে, কদর্য ভাষা ব্যবহার করে।’ (বোখারি : ২৩২৭)। কারও সঙ্গে মতের অমিল হতেই পারে, তাই বলে নোংরা ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ। এটি কোনো মোমিনের কাজ হতে পারে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মোমিন কখনও দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালাগালকারী হয় না।’ (তিরমিজি : ২০৪৩)। মুসলমানদের গালি দেয়া স্পষ্ট ফাসেকি কাজ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি (আল্লাহর অবাধ্যাচরণ) এবং তার সঙ্গে লড়াই-ঝগড়া করা কুফরি।’ (বোখারি : ৬০৪৫, ৭০৭৬, তিরমিজি : ১৯৮৩)। যত যা-ই হোক, ভাষা সংযত রাখতে হবে। এমন না যে, নোংরা ভাষায় কথা বললে মর্যাদা বাড়বে, তর্কে জিতবেন; বরং খারাপ ভাষা মর্যাদা কমায়। মাতৃভাষার চর্চা অবশ্যই ইসলাম সমর্থিত একটি ভালো কাজ। তাই ঘরে-বাইরে সর্বত্র ভাষার ব্যবহারে যত্নবান হওয়া সময়ের দাবি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত