প্রশ্ন : জামে মসজিদ নিয়ে বিবাদ হওয়ায় আমরা এক মহল্লার মুসল্লি একটি বিল্ডিংয়ের দোতলায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেছি। এ বিল্ডিংয়ের ওপর আমরা জুমার নামাজ আদায় করতে পারব?
উত্তর : জুমার নামাজ সহিহ হওয়ার জন্য মসজিদ হওয়া শর্ত নয়; তাই (জুমার নামাজ সহিহ হওয়ার অন্যান্য শর্ত পাওয়া গেলে) উক্ত বিল্ডিংয়ে জুমার নামাজ আদায় করলে নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। (আল হালবিল কাবির : ১১৫)।
প্রশ্ন : ঈদ ও জুমার নামাজে ভুল হলেও সাহু সেজদা দেয়া লাগে না?
উত্তর : ঈদ ও জুমার নামাজে যদি মুসল্লি এত বেশি হয় যে, সাহু সেজদা দিলে ইমামকে সরাসরি না দেখার কারণে পেছনের মুসল্লিদের নামাজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলেই শুধু সাহু সেজদা দেওয়া মাফ হয়ে থাকে। যদি এত বড় জামাত না হয়, তাহলে সাহু সেজদা দেওয়া জরুরি। সুতরাং ঈদ ও জুমার নামাজে সাহু সেজদা লাগে না, এ কথা সাধারণভাবে বলা ঠিক নয়। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১২৮, হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকিল ফালাহ : ৪৬৫-৪৬৬)।
প্রশ্ন : বাংলায় খুতবাদানকারী ইমামের পেছনে জুমার নামাজ সহিহ হবে? সহিহ না হলে আদায়কৃত নামাজের কাজা করতে হবে?
উত্তর : জুমার খুতবা আরবি ভাষায় হওয়া সুন্নাতে মুতাওয়ারাসা তথা যুগ পরম্পরায় চলে আসা অনুসৃত আমল। রাসুল (সা), খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন ও আইম্মায়ে মুজতাহিদিনের যুগে আরবিতেই খুতবা প্রদান করা হতো। অনারবি ভাষায় খুতবা দেয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই আরবিতে খুতবা দেয়া হয়, এমন কোনো মসজিদেই জুমার নামাজ পড়া উচিত। অবশ্য বাংলা ভাষায় যে খুতবা দেয়া হয়, তার শুরুতে বা মাঝে হামদণ্ডসানা ও আয়াত তেলাওয়াতের কারণে খুতবার ফরজ আদায় হয়ে যায়। তাই বিগত দিনের নামাজগুলোর কাজা করতে হবে না। তবে ভবিষ্যতে এমন ইমামের পেছনে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করতে হবে, যিনি সুন্নাহ অনুযায়ী নামাজ পড়ান। তবে কোথাও যদি এ রকম ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে এমন খতিবের পেছনে জুমা পড়লেও নামাজ আদায় হয়ে যাবে। (আল বাহরুর রায়েক : ২/৩০৭, রদ্দুল মুহতার : ১/৪৮৫, মুসাফফা শরহুল মুআত্তা : ১/১৫৪, আহকামুন নাফাহিস : ৪৩-৪৯)।
প্রশ্ন : বুঝমান নাবালেগ ছেলে খুতবা পাঠ করলে এবং খতিব সাহেব জুমা আদায় করলে তা জায়েজ হবে?
উত্তর : ছেলেটি নাবালেগ হলেও যেহেতু বুঝমান, তাই উক্ত খুতবা আদায় হবে। তবে জুমার খুতবা এবং নামাজ পড়ানো একই ব্যক্তি দ্বারা হওয়া উত্তম। উল্লেখ্য, জুমার খুতবা গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। তা বালেগ ও যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারাই হওয়া উচিত। (আল মুহিতুল বোরহানি : ১/৪৫৮, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২০৫, আল বাহরুর রায়েক : ২/১৪৭, রদ্দুল মুহতার : ২/১৪১)।
প্রশ্ন : জুমা ও ঈদের সময় খতিব সাহেব ডান-বাম দিকে চেহারা ফিরিয়ে খুতবা দেবেন নাকি মুসল্লিদের দিকে ফিরে খুতবা দেবেন?
উত্তর : খতিব সাহেব খুতবার সময় ডানে বামে চেহারা না ঘুরিয়ে সামনের দিকে ফিরে খুতবা দেবেন। এভাবেই খুতবা দেয়া সুন্নত। (আল মুগনি লিইবনি কুদামা : ৩/১৭৮, কিতাবুল উম্ম : ১/২৩০, মাআরিফুস সুনান : ৪/৩৬৫, উমদাতুল কারি : ৬/২২১, রদ্দুল মুহতার : ২/১৪৯)।
প্রশ্ন : খুতবা চলাকালে খতিব সাহেব শ্রোতাদের কথা বলতে দেখে সতর্ক করতে পারবেন কী?
উত্তর : খুতবা চলা অবস্থায় উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য চুপ থেকে মনোযোগসহ খুতবা শোনা ওয়াজিব। এ সময় শ্রোতাদের জন্য দ্বীনি-দুনিয়াবি কোনো ধরনের কথা বলা নাজায়েজ। কাউকে কথাবার্তা বলতে দেখলে তাকে মৌখিকভাবে বারণ করাও নিষেধ। মুসল্লিদের জন্য এ সময় শরিয়তের হুকুম হলো, চুপ থাকা এবং মনোযোগসহ খুতবা শোনা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় তুমি যদি পাশের ব্যক্তিকে বল- চুপ থাক, তবে তুমি তা একটি অনর্থক কাজ করলে।’ (বোখারি : ৯৩৪)। সুতরাং খুতবা চলা অবস্থায় শ্রোতাদের জন্য মৌখিকভাবে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য ফিকহবিদরা বলেন, ‘প্রয়োজনে মুখে নিষেধ না করে হাত বা মাথার ইশারা-ইঙ্গিতে পাশের ব্যক্তিকে কথাবার্তা বলা বা অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা যাবে।’ (হালবাতু মুজাল্লি : ২/৫৪৬, আদ্দুররুল মুখতার : ২/১৫৯)। কেননা, ইশারা-ইঙ্গিতে নিষেধ করার বিষয়টি একাধিক সাহাবি-তাবেয়ির আমল ও আসার দ্বারা প্রমাণিত আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.), আবদুর রহমান ইবনে আবী লায়লা (রা.), যায়েদ বিন সুহান (রা.), সুফিয়ান সাওরি (রহ.), আলকামা (রহ.) ও ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.)-সহ প্রমুখ। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৫২৫৯-৫২৬৩)।