মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সাবেক সহকারী মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা), টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশ্ন : অজু করা অবস্থায় সালামের আদান-প্রদান করা যাবে কী?

উত্তর : অজু করা অবস্থায় দোয়া পড়তে থাকলে সালাম দেওয়া বা সালামের উত্তর না দেওয়া উত্তম। (রদ্দুল মুহতার : ১/৬১৬-৬১৭)।

প্রশ্ন : অজুর সময় দ্বীনি বা দুনিয়াবি কথাবার্তা বললে অজুর সওয়াব হবে?

উত্তর : অজুর সময় দুনিয়াবি কথাবার্তা বলা মাকরুহ। তবে কোনো কথা ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে কিংবা কেউ এসে কথা বললে, তার আত্মতুষ্টির জন্য প্রয়োজন পরিমাণ বলার অবকাশ রয়েছে। প্রয়োজনের বেশি বলা মাকরুহ। অবশ্য দ্বীনি কোনো কথা হলে মাকরুহ হবে না। (আল বাহরুর রায়েক : ১/২৯)।

প্রশ্ন : অজুর পর আকাশের দিকে শাহাদত আঙুল তুলে দোয়া করা কী প্রমাণিত?

উত্তর : অজুর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে কালিমায়ে শাহাদত পড়া মুস্তাহাব। তাই এমনটা করতে কোনো অসুবিধা নেই। আর আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাই তা কেউ করলেও সুন্নত মনে করা যাবে না। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/১২৮)।

প্রশ্ন : ভোট দেওয়ার পর আঙুলে যে কালি দেওয়া হয়, তা নিয়ে অজু করলে অজু হবে?

উত্তর : ভোটের সময় আঙুলে যে কালি লাগানো হয়, তা সাধারণ কালির মতো। তাতে কোনো ধরনের শক্ত আবরণ পড়ে না। তাই এর কারণে অজু-গোসলের কোনো সমস্যা হবে না। তবে কারও হাতে শক্ত আবরণে পরিণত হয়ে গেলে কেবল তার জন্য কালি তোলা ছাড়া অজু হবে না। (মাজমাউল আনহুর : ১/২১)।

প্রশ্ন : ইচ্ছাকৃতভাবে সতর খুললে অজু ভেঙে যায় কী?

উত্তর : ইচ্ছাকৃতভাবে সতর খোলার কারণে অজু ভঙ্গ হবে না। কেননা শরীর থেকে নাপাক বের হওয়ার কারণে অজু ভঙ্গ হয়। (ফতোওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ : ১/১৩৫)।

প্রশ্ন : ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত নিলে অজু ভঙ্গ হবে কী?

উত্তর : হ্যাঁ, ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবাহিত হতে পারে, এ পরিমাণ রক্ত নিলে অজু ভেঙে যাবে; অন্যথায় ভাঙবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ১/১৪৩)।

প্রশ্ন : ডাক্তার অসুস্থ ব্যক্তির লজ্জাস্থান দেখলে বা স্পর্শ করলে অজু করতে হবে কী?

উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অসুস্থ ব্যক্তির লজ্জাস্থান দেখা বা স্পর্শ করার কারণে তার প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বেরুলে অজু ভেঙে যাবে। শুধু লজ্জাস্থান দেখা বা স্পর্শ করার কারণে অজু ভঙ্গ হবে না। তবে নতুন করে অজু করে নেওয়া উত্তম। (রদ্দুল মুহতার : ১/১৩৬)।

প্রশ্ন : মদপান করলে কী অজু ভেঙে যায়?

উত্তর : মদপান করা হারাম। নেশা হলে এর দ্বারা অজু ভেঙে যাবে। তবে কোনো ধরনের নেশা না হলে অজু ভঙ্গ হবে না। (সুরা মায়িদা : ৯০, হালাবি কাবির : ১৪১)।

প্রশ্ন : গোসল করার সময় যে অজু করা হয়, এর দ্বারা নামাজ পড়া যাবে কী?

উত্তর : গোসলের জন্য যে অজু করা হয়, তা দ্বারাই নামাজ পড়া যাবে। আলাদা করে নতুন অজুর প্রয়োজন নেই। (তিরমিজি : ১০৭, আল আশবাহ ওয়ান নাজায়ের : ১৯৯)।

প্রশ্ন : স্ত্রী সহবাস করার জন্য কী অজু-গোসল জরুরি?

উত্তর : স্ত্রী সহবাসের জন্য অজু-গোসল করা জরুরি নয়। অজু-গোসল ছাড়াই সহবাস জায়েজ। তবে অজু বা গোসল করে নেওয়া উত্তম। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১৬)।

প্রশ্ন : অজু-গোসল ও ইস্তেঞ্জার জন্য জমজমের পানি ব্যবহার করা যাবে কী?

উত্তর : বরকতের জন্য জমজমের পানি দিয়ে অজু-গোসল করা জায়েজ। এটা শিষ্টাচার পরিপন্থিও নয়। তবে তা দিয়ে ইস্তেঞ্জা করা মাকরুহ ও আদবের পরিপন্থি। (হাশিয়াতুত তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ : ৭৩১)।

প্রশ্ন : একটি প্রতিষ্ঠানে সরকারি বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার করে পানি তোলা হয়। এ পানি দিয়ে অজু করে নামাজ আদায় করতে হয়। প্রশ্ন হলো, এ অজুতে নামাজ পড়লে নামাজে কোনো সমস্যা হবে কী?

উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এ পানি দিয়ে অজু করলে নামাজে কোনো সমস্যা হবে না। তবে সরকারি বিদ্যুৎ অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা জায়েজ নয়। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল এ কারণে গোনাহগার হবে। আর যত বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে, তা সরকারি সংশ্লিষ্ট খাতে পরিশোধ করতে হবে। (নিজামুল ফতোয়া : ৪/৮৩)।

প্রশ্ন : অনেক সময় মসজিদে কিছু মুসল্লি ভাইকে দেখা যায়, তারা এমন খাটো শার্ট-প্যান্ট বা গেঞ্জি-ট্রাউজার পরে নামাজ পড়তে আসে যে, রুকুণ্ডসেজদায় গেলে পেছনের দিকে নিম্নাংশের কাপড় সরে গিয়ে শরীর দেখা যায়। এমন কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়ার হুকুম কী? এতে পেছনের মুসল্লিদের নামাজের কোনো সমস্যা হবে?

উত্তর : যে কাপড় পরলে সতর খুলে যায়, এমন পোশাক ব্যবহার করা জায়েজ নয়। এ ধরনের পোশাকে নামাজ আদায় করাও নাজায়েজ। আর নামাজে যদি সতরের কোনো অঙ্গের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ খুলে যায় এবং তা এক রোকন (অর্থাৎ তিন তাসবিহ) পরিমাণ সময় খোলা থাকে, তাহলে সে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এ ধরনের পোশাক পরা থেকে (বিশেষত নামাজের সময়) বিরত থাকা আবশ্যক। (খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/৭৩, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৪০৮, ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৫৮)।

প্রশ্ন : বড়দের জামাতে কাতারের ফাঁকে ছোট বাচ্চারা দাঁড়ালে বড়দের নামাজের কোনো ক্ষতি হবে? যদি ক্ষতি হয়, তবে বাচ্চারা কোথায় দাঁড়াবে? বিশেষ করে, যখন বড় কোনো জামাতে বাচ্চাদের অভিভাবকের সঙ্গেই দাঁড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন কী করবে?

উত্তর : নামাজের জ্ঞান রাখে, এমন নাবালেগ ছেলেকে বড়দের সঙ্গে দাঁড় করানো মাকরুহ নয়। এতে বড়দের নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না; বরং কোনো কোনো ফকিহ বলেছেন, ছোট বাচ্চারা বড়দের কাতারের পেছনে দাঁড়ালে যদি তাদের দুষ্টুমি করার আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে তাদেরকে বড়দের সঙ্গে কিংবা বড়দের ফাঁকে ফাঁকে দাঁড় করানোই শ্রেয়। তবে সাধারণ নিয়ম হলো, বাচ্চাদেরকে পেছনের কাতারে দাঁড় করানো ভালো। উল্লেখ্য, নামাজের জ্ঞান নেই বা অন্যের নামাজে বিঘ্ন ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে, এমন নাবালেগ বাচ্চাকে মসজিদে না আনা উচিত। (মুসলিম ১/১৮১, তিরমিজি : ১/৫৩, আল বাহরুর রায়েক : ১/৩৫৩, বাদায়েউস সানায়ে : ১/৩৯২, ইলাউস সুনান : ১/২৬৪, তোহফাতুল মুহতাজ : ৩/১০৬-১০৭)।