অপবাদ একটি জঘন্য অপরাধ

মুফতি সফিউল্লাহ

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

অপবাদ আরোপ একটি জঘন্য অপরাধ। অপরাধের কারণে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়। নষ্ট হয় সামাজিক-পারিবারিক সংহতি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতীয় ঐক্য। অপবাদ ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। অপবাদের মাধ্যমে ব্যক্তি অপরের ক্ষতি করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেরও ক্ষতি করে। নিজেকে কবিরা গোনাহে লিপ্ত করে। অপবাদ ইসলামে যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি সামাজিকভাবেও একটি ঘৃণিত অপরাধ। অপবাদের কারণেই একজন আরেকজনের মান-মর্যাদা বিনষ্ট করে ফেলে। বর্তমানে আমাদের সমাজে শুধু অনুমানের ভিত্তিতে অপবাদের ঘটনা হরদম ঘটছে। অপবাদ রীতিমতো মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গল্পগুজব, আড্ডা যত যা-ই হোক, সর্বত্রই অন্যের দোষচর্চা; অন্যের দুর্নাম, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।

গল্পগুজবে যা বলা রীতিমতো অভ্যাস

অমুক লোক পুলিশের চাকরি করে, তার বাড়ি-গাড়ি সব ঘুষের টাকার, অমুক বন বিভাগে চাকরি করে, তার সব ঘুষের টাকা, অমুক ব্যাংকে চাকরি করে, তার সব সুদের টাকা। গল্পগুজবে এসব বলা রীতিমতো আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অপবাদ কখনও কখনও কুফরি পর্যন্ত নিয়ে যায়। কেউ রাসুল (সা.)-এর ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ রটালে সে মুরতাদ হয়ে যায়। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বলেছেন, ‘যদি কেউ রাসুল (সা.)-কে গালি দেয় অথবা তাকে মিথ্যারূপ করে বা তার ব্যাপারে অপবাদ রটালে সে মুরতাদ হয়ে যাবে এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।’ (আহকামুল কোরআন : ৪/২৭৫)।

ব্যভিচারের অপবাদ গুরুতর অপরাধ

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা সচ্চরিত্রবান সরলমনা মোমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখেরাতে) আছে মহাশাস্তি।’ (সুরা নুর : ২৩)। অপবাদ একটি জঘন্য অপরাধ। সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে তুলে ধরে। অপবাদ মানুষকে কোনো কারণ ছাড়াই অপরাধী হিসেবে তুলে ধরে এবং সম্মান ও ব্যক্তিত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আল্লাহ ব্যভিচারের অপবাদকে গুরুতর অপরাধ বলে সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছ; অথচ তা আল্লাহর কাছে খুবই গুরুতর অপরাধ।’ (সুরা নুর : ১৫)। অপবাদের মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তির চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়। সচ্চরিত্রবান নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া কঠিন অপরাধ। এজন্য এর শাস্তিও কঠিন।

প্রত্যেক অপরাধের অপবাদের জন্য দণ্ডমূলক শাস্তি

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা সতী-সাধ্বী নারীকে অপবাদ দেয়, তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না। তাদের আশিটি চাবুক মারবে। তাদের সাক্ষ্য কখনও গ্রহণ করবে না। তারা নিজেরাই তো ফাসেক।’ (সুরা নুর : ৪)। উল্লিখিত এ শাস্তি শুধু এ অপবাদের জন্যই নির্দিষ্ট। অন্য কোনো অপরাধের অপবাদ আরোপ করলে বিচারকের বিবেচনা অনুযায়ী প্রত্যেক অপরাধের অপবাদের জন্য দণ্ডমূলক শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। (আহকামুল কোরআন : ৫/১১১)।

কারও সম্মানহানির অধিকার নেই

অহেতুক একে অপরকে দোষারোপ করা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া যেন এর প্রথম কারণ। একটা বিষয় সত্যায়ন না করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে। এভাবে একটা ভিত্তিহীন কথা ভাইরাল হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা জরুরি। মূলত অজ্ঞতা ও সন্দেহের বশে অপবাদ দেওয়ার ঘটনাই সবচেয়ে বেশি ঘটে। মিথ্যা অপবাদে মানুষের সম্মানহানি ঘটে। কারও সম্মানহানি করার অধিকার অন্যের নেই। যে অপর ভাইয়ের ইজ্জত খাটো করে, তার সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে যদি এমন স্থানে লাঞ্ছিত করে, যেখানে তার সম্মানহানি হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করবেন, যেখানে তার সাহায্যপ্রাপ্তির আশা ছিল।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৮৮৪)।

অপবাদ থেকে বাঁচার উপায়

অপবাদ থেকে বাঁচার উত্তম উপায় হলো, সন্দেহ বা ধারণার ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে কোনো দোষ চাপিয়ে না দেওয়া। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কিছু ধারণা গোনাহ।’ (সুরা হুজরাত : ১২)। তা ছাড়া অপবাদ বান্দার হক। কারও ব্যাপারে অপবাদ দেওয়া হলে সে ক্ষমা না করলে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া যাবে না।