ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সাবেক সহকারী মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম (গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা), টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
মুফতি মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : মসজিদ-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোরআনের আয়াত ও হাদিস লিখিত ওয়ালমেট, ক্যালেন্ডার, শোপিস ইত্যাদির কোনোটির মধ্যে সরাসরি আরবি লেখা থাকে, কোনোটির মধ্যে তরজমা, কোনোটির মধ্যে ক্যালিওগ্রাফির মাধ্যমে আয়াত বা হাদিস লেখা থাকে। এগুলো ব্যবহার জায়েজ? এ ধরনের ক্যালেন্ডার দিয়ে কিতাব ও বইপুস্তক বাঁধাই করা, পড়ার টেবিলে বিছিয়ে ব্যবহার করা এবং বিভিন্ন স্থানে সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে লাগানো যাবে?

উত্তর : কোরআনুল কারিম আল্লাহর কালাম। এটি প্রদর্শনের বস্তু নয়। তাই শুধু প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কোরআন-হাদিস লিখিত বা ক্যালিওগ্রাফি করা ওয়ালমেট বা শোপিস ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে কেউ যদি এ উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করে যে, এর দ্বারা আল্লাহতায়ালার কথা স্মরণ হবে, এতে লিখিত বাণীর হেদায়েত ও শিক্ষা গ্রহণ করা যাবে, তাহলে শর্ত সাপেক্ষে তা করা যেতে পারে। সে শর্তগুলো হলো, আয়াত ও হাদিসের মর্যাদার প্রতি খেয়াল রাখা; যেন তা নিচে পড়ে না যায় বা নাপাক কিছুর সঙ্গে স্পর্শ না হয়, আর ধুলাবালি থেকে নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। কোরআন-হাদিস লিখিত ক্যালেন্ডারের ক্ষেত্রেও একই বিধান। কোরআন-হাদিসের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। বাতাসে যাতে ওড়াউড়ি না করে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। তবে ক্যালেন্ডারে কোরআনের আয়াত বা হাদিস না লেখাই উচিত। কারণ, মানুষ এটিকে সেভাবে মর্যাদা দিয়ে ব্যবহার করে না এবং মাস ও বছর শেষে তা হেফাজত করে না; যেখানে-সেখানে তা ফেলে দেয়। কোরআন-হাদিস লিখিত ক্যালেন্ডার দ্বারা কিতাব বা বইপুস্তক বাঁধাই করা মাকরুহ। এটা কোরআন-হাদিসের মর্যাদা পরিপন্থি। এ ধরনের ক্যালেন্ডার প্রয়োজন শেষে হেফাজত করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পুড়িয়ে ছাইগুলো কোনো পবিত্র স্থানে দাফন করে দেবে। (ফতোয়ায়ে খানিয়া : ৩/৪২৪, আল বাহরুর রায়েক : ২/৩৭, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ১৮/৬৭ ও ৬৯, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/১০৯ ও ৫/৩২২, আদ্দুররুল মুখতার : ৪/১৩০)।

প্রশ্ন : প্রতিবেশী হিন্দুদের হিন্দু ও বিধর্মীদের কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, ফলমূল নেওয়া ও খোঁজখবর নেওয়া যাবে?

উত্তর : প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও তার সঙ্গে সদাচরণ করা, বিপদাপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা, অসুস্থ হলে খোঁজখবর নেওয়া ও সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা। এটিও প্রতিবেশীর হকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা : ৮)। আনাস (রা.) বলেন, এক ইহুদি বালক রাসুল (সা.)-এর খেদমত করত। একবার সে অসুস্থ হলো। রাসুল (সা.) তাকে দেখতে গেলেন। তাকে বললেন, ‘তুমি ইসলাম গ্রহণ কর।’ ফলে সে মুসলমান হয়ে গেল। (বোখারি : ৫৬৫৭)। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হিন্দুকে দেখতে যাওয়া ও আর্থিক সহযোগিতা করা অন্যায় নয়; বরং প্রতিবেশীর হক আদায়ের কারণে তা প্রশংসনীয়। তবে অসুমলিমদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়া নিষেধ। কোরআনুল কারিমে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। (ফাতহুল বারি : ৩/২৬২ ও ১০/১২৫, উমদাতুল কারি : ২১/২১৮, আল বাহরুর রায়েক : ৮/২০৪, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩৪৮, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৮৮)।

প্রশ্ন : কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করে মারা গেলে সেই মৃতের জন্য তার আত্মীয়-স্বজন দোয়া করতে পারবে?

উত্তর : আত্মহত্যাকারীর জন্য দোয়া করা যাবে। কেননা, যত বড় গোনাহগারই হোক, তার জন্য ইস্তিগফার করা জায়েজ। তাই আত্মহত্যা কবিরা গোনাহ হলেও ওই ব্যক্তির জন্য দোয়া করা যাবে। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমরা কবিরা গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তিদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতাম না। পরে রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে যখন শুনলাম, ‘আল্লাহতায়ালা তার সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করবেন না। শিরক ছাড়া যে কোনো গোনাহ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করে দেবেন। আর আমি উম্মতের মধ্যে কবিরা গোনাহে জড়িয়ে যাওয়া লোকদের জন্য আমার সুপারিশের ক্ষমতাকে জমা করে রেখেছি।’ এরপর থেকে আমরা তাদের জন্য দোয়া করতাম। (মুসনাদে বাজ্জার : ৫৮৪০, মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১৭৬০১)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত