মক্কা শরিফের জুমার খুতবা
ইসলাম সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম
শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আওয়াদ আল জুহানি
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আল্লাহতায়ালা মোমিনদের জন্য ইসলামকে দ্বীন ও জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন। এটি মোমিনদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টির প্রমাণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের জন্য আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকেই দ্বীনরূপে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়িদা : ৩)। অবতীর্ণ হওয়ার দিক দিয়ে এটি কোরআনের সর্বশেষ আয়াত। আল্লাহতায়ালা এখানে উত্তম পুরুষ কর্তা ব্যবহার করে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন, উম্মতে মুহাম্মদির জন্য তিনি দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছেন। তাদের প্রতি তাঁর নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন। তিনি ইসলামকে মোমিনদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছেন। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছেন। তাঁর নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন। কাফেররা দ্বীনের ক্ষতি সাধন করা, তাতে বিকৃতি ঘটানো ও দ্বীনকে ত্রুটিপূর্ণ সাব্যস্ত করা থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। আল্লাহতায়ালা এ দ্বীনের জন্য পরিপূর্ণতা নির্ধারণ করে রেখেছেন। এ দ্বীনের স্থায়িত্ব চূড়ান্ত করেছেন। তিনি নিজেই এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমিই এ কোরআন নাজিল করেছি এবং আমিই এর হেফাজত করব।’ (সুরা হিজর : ৯)।
ইসলাম পরিপূর্ণ ও ব্যাপক ধর্ম
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ইসলাম পরিপূর্ণ, ব্যাপক। এটি সর্বশেষ আসমানি বার্তা। এমন এক রাসুলের মাধ্যমে ইসলামকে জগৎবাসীর সামনে উপস্থাপন করেছেন, যাকে তিনি পবিত্র করেছেন, নির্বাচন করেছেন, নৈকট্যশীল বানিয়েছেন। তাকে প্রেরণ করেছেন মানব-দানব উভয় জাতির কাছে। প্রেরণ করেছেন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, জগৎবাসীর জন্য রহমতরূপে। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আলোকজ্জ্বল প্রদীপ। তাকে দান করেছেন এমন এক কিতাব, যা পূর্ববর্তী কিতাবগুলোকে সত্যায়নকারী। তিনি এমন প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছেন, যা মানুষের বুদ্ধি-বিবেককে স্পর্শ করেছে। তাতে জীবনের সব ক্ষেত্রের জন্য দিকনির্দেশনা রয়েছে। ব্যক্তিজীবন, পরিবারিক জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনসহ সব অঙ্গনের জন্য রয়েছে সুবিন্যস্ত বিধিমালা। ইসলাম সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার সম্পর্ককে সুশৃঙ্খল করেছে। এক মুসলমানের অপর মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে, মুসলমানের অমুসলিমের সঙ্গে, এমনকি প্রাণিকুলসহ সবাক-নির্বাক পৃথিবীর তাবৎ বস্তুনিচয়ের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, তাও ইসলাম শিখিয়ে দিয়েছে। ইসলামে সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। ছোট-বড় সব বিষয়ের বিধান রয়েছে। এমনকি মানুষ প্রকৃতির ডাকে কীভাবে সাড় দেবে, তাও ইসলাম শেখাতে বাদ দেয়নি।
মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য
যিনি সর্বশেষ আসমানি বার্তা অবতীর্ণ করেছেন, যিনি তাকে পূর্ববর্তী সব ধর্মের জন্য রহিতকারী সাব্যস্ত করেছেন, তিনিই এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং বিশ্বজগতে কী ঘটেছে, ভবিষ্যতে কী ঘটবে, পৃথিবীতে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, মানব জীবনের কী কী নতুন নতুন চাহিদা সৃষ্টি হবে, এর সবই তিনি জানেন। অতএব, আদল-ইনসাফ ও তাকওয়া-পরহেজগারির মূলনীতিকে সামনে রেখে তিনি সব সম্ভাবনাময় পরিস্থিতির বিধান পৃথিবীবাসীকে উপহার দিয়েছেন। ‘এ দ্বীন পরিপূর্ণ নয়, এতে কোনো ধরনের সংস্কার, সংযোজনের প্রয়োজন আছে’, কোনো মুসলমানেরই এমনটি মনে করার সুযোগ নেই। এটি একটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি; ইসলামের প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে পরিপূর্ণ বিরোধপূর্ণ। মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য হচ্ছে, এমন সুন্দর দ্বীনকে নেয়ামত হিসেবে যিনি দান করলেন, তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের চেষ্টা করা; নিজের সর্বশক্তি ব্যয় করে রবের হক আদায়ে সচেষ্ট হওয়া। আল্লাহতায়ালা যে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে নির্বাচন করলেন, এর যথাযথ মূল্যায়ন করা। তিনি যেই দ্বীনকে তাদের জন্য মনোনীত করেছেন, দৃঢ়ভাবে তা আঁকড়ে ধরতে হবে। এ দ্বীনের ওপর অটল ও অবিচল থাকার পেছনে সব চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যয় করতে হবে।
ইসলামই একমাত্র দ্বীন
আল্লাহর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের মাঝেই আল্লাহতায়ালা বান্দার পূর্ণ সৌভাগ্য নিহিত রেখেছেন। ঈমান-আকিদা ও বিধিবিধানসহ ইসলামের যাবতীয় বিধানকে তাই অবনত মস্তকে গ্রহণ করে নিতে হবে। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীনের অনুসরণ সর্বত পরিতাজ্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অন্বেষণ করে, তার থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ৮৫)।
২৪ শাবান ১৪৪৪ (১৭ মার্চ ২০২২) তারিখে মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন- মুইনুল ইসলাম