রমজানের অনন্য ফজিলত
সময়ের পাটাতন ঘুরে আগমন করে মোমিনের বহু কাঙ্ক্ষিত ও প্রত্যাশিত মাহে রমজান। মহিমান্বিত এ মাস আল্লাহতায়ালার অশেষ দয়া, করুণা ও বরকতের ঋতুরাজ বসন্তকাল। এ পুরো মাসই রবের অনন্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের ভরপুর মৌসুম। যাদের বুকের সিন্দুকে আছে ঈমানের ধন, এ মাসে আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর মুষলধারে বর্ষণ করেন রহমতের বৃষ্টি। ক্ষমাশীল রব পাপিষ্ঠ বান্দাদের পাপ মোচনের লক্ষ্যে সর্বদা উন্মুক্ত রাখেন ক্ষমার দুয়ার। আর অসংখ্য-অগণিত বনি আদমকে মাগফিরাত করে জারি করেন স্বপ্নিল জান্নাতের মালিক হওয়ার শাহি ফরমান। কোরআন নাজিলের এ মাস গোনাহ বর্জন, তাকওয়া অর্জন এবং নেক আমলে অগ্রগামী হওয়ার মাস। প্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরে সংযম সাধনায় দেহমন শুদ্ধ, পবিত্র ও আলোকিত করার মাস। ভ্রাতৃত্ব চর্চার মাধ্যমে মানবেতর জীবনযাপনকারী গরিব-দুঃখী মানুষদের প্রতি সদয় ও সহানুভূতির মাস। সর্বোপরি সারা বছরের ঈমানি, আমলি এবং পুণ্যের পাথেয় সঞ্চয় করে কবরের রসদ জোগানোর মাস। এ মাসে রোজার কিছু ফজিলত নিয়ে লিখেছেন- আবদুল্লাহ নোমান
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রোজার প্রতিদান দেবেন রাব্বুল আলামিন
প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে। রয়েছে অনন্য পুরস্কার ও নেকি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রোজার বিষয়টি ব্যতিক্রম। এর পুরস্কার রব নিজেই দান করবেন অবারিত ও অগণিতরূপে। বিশ্বজাহানের একচ্ছত্র অধিপতি রাব্বুল আলামিন নিজেই যখন এর পুরস্কার দেবেন, তখন কী পরিমাণ দেবেন, আমরা কি ধারণা করতে পারি? যদিও প্রকৃতপক্ষে সব ইবাদতই একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। তবুও রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। তা হলো, অন্যান্য সব ইবাদতের কাঠামোগত ক্রিয়াকলাপ, আকার-আকৃতি ও নিয়মণ্ডপদ্ধতি এমন যে, তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ছাড়াও ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ বিদ্যমান থাকে। মুখে প্রকাশ না করলেও অনেক সময় তার অন্তরে সৃষ্টি হতে পারে রিয়া তথা লোক দেখানো ভাব। তার অনুভূতির অন্তরালে থাকতে পারে লৌকিকতার আবাস। ফলে সেখানে অবচেতনভাবে এসে যায় নফসের প্রভাব। পক্ষান্তরে রোজা এমন এক পদ্ধতিগত গোপনীয় ইবাদত, যেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। সে মধ্য দুপুরে কাঠফাটা রোদে যখন তৃষ্ণাকাতর হয়ে যায়, চাইলেই তো লোক চোখের আড়ালে ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা পানীয় পান করতে পারে। ড্রয়িং রুমের দরজা বন্ধ করে ইচ্ছেমতো রকমারি খাবার খেতে পারে। কিন্তু সে আল্লাহর ভয়ে এমনটি করে না। তা ছাড়া রোজাদার ব্যক্তি নিজ মুখে রোজার বিষয়টি প্রকাশ না করলে সাধারণত তা আলিমুল গায়েব আল্লাহতায়ালা ছাড়া কারও কাছে প্রকাশিত হওয়ার মতো নয়। তাই রোজার ক্ষেত্রে মাওলার সন্তুষ্টির বিষয়টি একনিষ্ঠভাবে প্রতিভাত হয়। এ কারণেই রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের মাঝে রয়েছে এরূপ বিস্তর ব্যবধান। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকির সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কিন্তু রোজা আলাদা। কেননা, তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।’ (মুসলিম : ২৫৯৭)।
কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন আল্লাহ
আল্লাহতায়ালা রোজাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন। সেই প্রচণ্ড তৃষ্ণাকাতর দিনে তাদের পিপাসা নিবারণ করবেন। তাই দুনিয়াতে সামান্য কষ্ট হলেও তা আখেরাতের দুর্ভোগ থেকে বাঁচার সোনালি সোপান। আবু মুসা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; আল্লাহতায়ালা নিজের ওপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কেয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। (মুসনাদে বাজ্জার : ১০৩৯)। কেয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য থাকবে সুপেয় পানির বিশেষ হাউস। যেখান থেকে অন্যরা পান করার সুযোগ পাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। কেয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউস থাকবে, যেখানে রোজাদার ছাড়া অন্য কারও আগমন ঘটবে না।’ (মুসনাদে বাজ্জার : ৮১১৫, মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৫০৯৩)।
রোজা জান্নাত লাভের উপায়
রোজার শারীরিক উপকারিতা যেমন ভাষাতীত, তেমনি এর পরকালীন কল্যাণও বর্ণনাতীত। রোজা মোমিনের কামনা-বাসনা এবং পরম আরাধ্য জান্নাত লাভেরও উপায়। হুজাইফা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর নবী (সা.)-কে আমার বুকের সঙ্গে মিলিয়ে নিলাম; তারপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি লাইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোজা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো দান-সদকা করে, তারপর তার মৃত্যু হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৩৩২৪)। রোজা জান্নাত লাভের সোনালি পথ। আবু উমামা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে আগমন করে বললাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব।’ তিনি বললেন, ‘তুমি রোজা রাখ। কেননা, এর সমতুল্য কিছু নেই।’ আমি আবার তার কাছে এসে একই কথা বললাম। তিনি বললেন, ‘তুমি রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২১৪৯)।
রোজাদারের জন্য জান্নাতের বিশেষ দরজা
রোজাদাররা ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেটা দিয়ে তারাই মাত্র প্রবেশাধিকার পাবে। এমন মহাসৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া নিঃসন্দেহে হতভাগা হওয়ার পূর্ব সংকেত। সাহল ইবনে সাদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; নবীজি (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। কেয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে, কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোজাদাররা? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। তারা ছাড়া কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। এরপর রোজাদাররা যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বোখারি : ১৮৯৬)। তা ছাড়া এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার পর তারা আর কখনও পিপাসার্ত হবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে একটি বিশেষ দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। রোজা পালনকারীকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য ডাকা হবে। রোজা পালনকারীরা এ দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। আর তাতে যে লোক প্রবেশ করবে, সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না।’ (তিরমিজি : ৭৬৫)।
রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল
ঢাল দ্বারা যেমন শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করা যায়, তেমনি রোজার মাধ্যমেও দুর্ভোগময় জাহান্নাম থেকে বাঁচা যায়। এমন উপকারী ঢালকে ছুড়ে ফেলা নিজের পায়ে কুড়াল মারারই নামান্তর। জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেছেন, আমাদের মহান রব বলেছেন, ‘রোজা হলো ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোজা আমার জন্য, আর আমিই এর পুরস্কার দেব।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৪৬৬৯)। ওসমান ইবনে আবিল আস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘রোজা হলো জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের (শত্রুর আঘাত হতে রক্ষাকারী) ঢালের মতো।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৬২৭৮)।
রোজা কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে
বিচার দিবসের কঠিন মুহূর্তে রোজা সুপারিশ করে রোজাদারকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। এমন দরদি বন্ধুর সঙ্গ ত্যাগ করা কি নির্বুদ্ধিতা নয়? আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ কোরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে)। অতএব, তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘এরপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৬২৬)।
রোজা গোনাহ মাফের অনন্য মাধ্যম
রোজার মাধ্যমে যেমন অবারিত নেকি লাভ করা যায়, তেমনি তা গোনাহ মাফেরও উপায়। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ২০১৪)। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবির নামাজকে সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের সিয়াম ও কিয়াম আদায় করবে, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৬৬০)। এ ছাড়া রোজা হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘সবরের মাসের (রমজান মাস) রোজা এবং প্রতি মাসের তিন দিনের (আইয়ামে বীয) রোজা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমদ : ২৩০৭০)।
মিশকের চেয়েও সুগন্ধিময় যে গন্ধ
রোজাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধিযুক্ত। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন! রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হবে- এক. যখন সে ইফতার করে, তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তার রোজার কারণে আনন্দিত হবে।’ অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘যখন সে আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হবে, আর তিনি তাকে পুরস্কার দেবেন, তখন সে আনন্দিত হবে।’ (বোখারি : ১৯০৪, ১৮৯৪)।
সত্যবাদী ও শহীদদের দলভুক্ত যারা
রোজাদার পরকালে সত্যবাদী ও শহীদদের দলভুক্ত থাকবে। পরমানন্দে তাদের সঙ্গে পরকালে থাকবে। আমর ইবনে মুররা আল জুহানি (রা.) সূত্রে বর্ণিত; এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর দরবারে এসে বলল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যদি এ কথার সাক্ষ্য দিই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসুল, আর আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, জাকাত প্রদান করি, রমজান মাসের সিয়াম ও কিয়াম (তারাবিসহ অন্যান্য নফল) আদায় করি, তাহলে আমি কাদের দলভুক্ত হব?’ তিনি বললেন, ‘সত্যবাদী ও শহিদদের দলভুক্ত হবে।’ (মুসনাদে বাজ্জার : ২৫)।
রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না
রোজাদার যখন সারাদিন উপবাস থেকে দিন শেষে ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকে, তখন সে যেই দোয়া করে, আল্লাহতায়ালা তা কবুল করে নেন। তাই এ সময় অযথা গল্পগুজবে লিপ্ত না হয়ে দিল খুলে দোয়া করা চাই। মনের জমানো ব্যথা উজাড় করে রবের কাছে নিবেদন করা উচিত। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদার যখন দোয়া করে, তখন তার দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ তার দোয়া কবুল হয়)।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৭৫৩)। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ তাদের দোয়া কবুল করা হয়)। যথা- ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া ইফতারের সময় পর্যন্ত ও মজলুমের দোয়া। তাদের দোয়া মেঘমালার ওপর তুলে নেওয়া হয় এবং এর জন্য সব আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমার সত্তার কসম! বিলম্বে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব।’ (তিরমিজি : ৩৫৯৮)।
রোজা আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ উপায়
মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য কে না লাভ করতে চায়! আল্লাহপ্রেমিক মোমিন সর্বদা এমন আমল করার জন্য উদগ্রীব থাকে, যা প্রেমাষ্পদ রবের সন্তুষ্টিকে ত্বরান্বিত করে। রোজা এসব আমলের অন্যতম। আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি রোজা রাখ। কেননা, এর সমতুল্য কিছু নেই।’ আমি আবার বললাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে কোনো নেক আমলের কথা বলুন।’ তিনি বললেন, ‘তুমি রোজা রাখ। কেননা, এর সমতুল্য কিছু নেই।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২১৪০)। আবু উমামা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এমন কোনো আমলের আদেশ করুন, যার দ্বারা আল্লাহতায়ালা আমাকে উপকৃত করবেন।’ তিনি বললেন, ‘তুমি রোজা রাখ। কেননা, তার তুলনা হয় না।’ (সুনানে নাসায়ি : ২৫৩১)।
লেখক : সিনিয়র মুফতি, জামিয়া ইসলামিয়া হেমায়াতুল ইসলাম কৈয়গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম