রমজান বরকতময় মাস। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা পুরো বছর এ মাসের অপেক্ষায় থাকে। যখন তা আসে, সবাই এত খুশি হয় যে, যেন হারানো কিছু পেয়েছে। এ মাসের গুরুত্বও অনেক বেশি। কেননা, যখন এ মাসের আগের মাস তথা শাবান মাস শুরু হয়, তখন নবীজি (সা.) এ মাসের জন্য অধীর আগ্রহে দিন কাটাতেন। সব সময় এ দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবানের বরকত দিন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। (আল মুজামুল আওসাত : ৩৯৩৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ২/১৬০)। শাবান মাসে মদিনায় রোজা ফরজ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা সংযমী হও।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায়, সে যেন রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)।
রমজানে যারা ভাগ্যবান ও দুর্ভাগা
মানুষ যে জিনিসের অপেক্ষায় থাকে, যখন তা সামনে আসে, তখন তার স্বাদ ইচ্ছে মতো আস্বাদন করে। অন্যরকম এক অনুভূতি জন্ম নেয়। নিজের মধ্যে অনেক আনন্দ অনুভব করে। সব সময় ভাবে, না জানি এর মূল্যায়নে কমতি হয়ে যাচ্ছে, যথেষ্ট মূল্যায়ন হচ্ছে না! আর যদি তার আগমন হয় অনেক বরকত সঙ্গে নিয়ে। তারাই বড় ভাগ্যবান, যারা এ পুণ্যময় মাসে নিজেদের মূল্যবান সময়গুলো ইবাদতে ব্যয় করে। আর তারা কত অভাগা, যারা এ রকম বরকতময় মাস পাওয়ার পরও নেকি কামানো থেকে বঞ্চিত থাকে। রাসুল (সা.)-এর ভাষায়, ‘দুর্ভাগ্যবান সে-ই, যে এ বরকতের মাসেও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে।’ (মুসনাদুশ শামিন : ২২৩৮)।
রাইয়ান রোজাদারের প্রবেশদ্বার
পবিত্র এ মাসের অনেক ফজিলত রয়েছে। এ মাসেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এ মাসটি বিশেষত আল্লাহর অনুসরণ ও ইবাদতের। এতে এমন একটি রাত রয়েছে, যাকে শবেকদর বলা হয়। যে রাতে আল্লাহতায়ালা অগণিত মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এ মাসেই আল্লাহতায়ালা বান্দার ওপর রহমত নাজিল করেন। অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। সাহল ইবনে সাদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে; এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ছাড়া আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বোখারি : ১৭৯৭)।
যাদের অতীতের সব গোনাহ মাফ হবে
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গোনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কিয়ামে রমজান অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় শবেকদরে জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে, তারও পূর্ববর্তী গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ১/২৫৫, মুসলিম : ১/২৫৯, মিশকাতুল মাসাবিহ : ১/১৭৩)।
রোজাকে পবিত্র রাখি
রোজা ও রমজানকে যাবতীয় গোনাহ থেকে পবিত্র রাখতে হবে। মিথ্যা, প্রতারণা, গিবত, অশ্লীলতা, সুদণ্ডঘুষ, হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, ঝগড়া-বিবাদসহ সব অন্যায় থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষত চোখের গোনাহ থেকে নিজেদের সযত্নে ফিরিয়ে রাখতে হবে। আজকাল অনেক রোজাদার সময় পার করার উদ্দেশ্যে টিভির সামনে বসে সিনেমা-নাটক দেখায় মগ্ন থাকে। এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। সময় পার করার জন্য কোনো উত্তম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। এ সময় আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত। নানা ধরনের নেক আমলের রুটিনে রমজানের দিনগুলো সাজিয়ে নিলে সময় কত দ্রুত কেটে যাবে! ব্যক্তিগত আমল, যেমন- জিকির, তেলাওয়াত ইত্যাদির পাশাপাশি দ্বীনি মজলিসের ব্যবস্থা করা এবং তাতে শরিক হওয়াও কর্মসূচিতে রাখা যেতে পারে।
লেখক : শিক্ষক, সম্পাদক ও গবেষক