ঈদে হাসুক প্রতিটি প্রাণ

হুসাইন আহমদ

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ঈদ মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ও সংস্কৃতি। এ ঈদ দুটি- এক. ঈদুল ফিতর ও দুই. ঈদুল আজহা। মুসলমানদের এ উৎসব ও সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ফলে ঈদ মানে আনন্দ-উল্লাস ও হাসি-খুশি, ভালো-মন্দ খাওয়া-দাওয়া, নতুন নতুন জামা-কাপড় পরিধান করা ও এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করা। ঈদের এ আনন্দকে বরণ করে নেয়ার জন্য পরিবারের ছোট বাচ্চা থেকে বয়স্করা সবাই অধীর আগ্রহে উদগ্রীব থাকে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে সবার ঈদ কেটেছে নিস্তেজ, আনন্দ-উল্লাসহীন। এক কথায়, সবার ঈদ আনন্দ একেবারেই ম্লান হয়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের এমন বিবর্ণ ঈদ (করোনাকালীন সময়ের) আগে কখনও হয়তো কাটেনি। তবে আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্ববাসী এখন করোনা থেকে মুক্ত হওয়ায় আসন্ন এ ঈদটি আনন্দ-উল্লাস ও হাসি-খুশিতেই কাটবে, ইনশাআল্লাহ। তাই তো আসন্ন ঈদটি মনে করিয়ে দিচ্ছে, নতুন জামা-কাপড়, কেনাকাটা ও সাজগোছহীন, আনন্দ-উল্লাসে মেতে না ওঠার সেই বিষাদময় স্মৃতি, যা স্মৃতিতে থাকবে বহুবছর। আর এবারের ঈদে সেই অদৃশ্য ভাইরাস থেকে বিশ্ববাসী মুক্ত হওয়ায় সবকিছু চলবে স্বাভাবিকই। তাই মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত সেই জনজীবনে এ বছর আনন্দ-উল্লাসেই ঈদ অতিবাহিত করবে। যে ঈদ এলে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সব মানুষ মেতে উঠত উৎসবে। সব রকম বৈষম্য ও ভেদাভেদ ভুলে মানুষে মানুষে সৃষ্টি হতো সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একটি দিনের জন্য হলেও ভুলে যেত সব হিংসা-বিদ্বেষ। অনুভব হতো ভালোবাসা ও বিনয়। আবারও সেই রকম ঈদ উদযাপন করবে বিশ্ববাসী, ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ করে, ঈদ এলে মনে পড়ে যায় আমাদের ছেলেবেলার ঈদের কত শত মধুর স্মৃতি। যেই ছেলেবেলার ঈদগুলো ছিল একটু অন্যরকম। ঈদের কয়েক দিন আগ থেকেই শুরু হয়ে যেত আমাদের ঈদের আনন্দ। ভাইবোন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাই মিলে মজা করতাম। ঈদ এলে সবাই একসঙ্গে খোলা মাঠে খুবই মন দিয়ে আকাশে চাঁদ খুঁজতাম। একজন আরেকজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও চেষ্টা করতাম যে, কে সবার আগে চাঁদ দেখব। যখন আকাশে ঈদের চাঁদ দেখতে পেতাম, সবাই মিলে হৈ-চৈ ও আনন্দ-উল্লাস করতাম। তা স্মরণ হলে আজও মন চায় জীবনের এ বয়সে অতীতে ফিরে যেতে। বর্তমান প্রযুক্তির এত উন্নয়ন হয়েছে যে, এখন আমরা সবাই আকাশে চাঁদ দেখি না, খুঁজি না। অনলাইন মিডিয়ার বদৌলতে মুহূর্তের মধ্যে খবর দেখি। তবে আগের মতো ঈদের সেই আনন্দটা আর নেই। এ ছাড়া হাতে মেহেদি দেয়া, নতুন পাঞ্জাবি পরা, ঈদের সালামির টাকা দিয়ে বন্দুক, গুলিসহ আরও কত কি খেলনা কেনা! সত্যি খুব আনন্দদায়ক ছিল। সেই ঈদ আনন্দ ফিরে আসুক সবার জীবনে।

একটি কথা না বললেই নয়, আসন্ন এ ঈদে আমরা সবাই আনন্দ-উল্লাস ও মজা করার জন্য দামি দামি মার্কেট, বাজার ও ভালো-মন্দ খাওয়া-দাওয়ার জন্য অনেক কিছু কিনব, অনেক কিছু করব। আমাদের এ আনন্দ ও মজার সঙ্গে যদি আমাদের আশপাশের প্রতিবেশী ও পথশিশুদের একটু শরিক করি, তাদের একটু খোঁজখবর নিই (যাদের মধ্যে দুই শ্রেণির মানুষ রয়েছে- এক. যারা অসহায়; তারা কোথাও হাত পাতে আর কিছু পায়ও। কিন্তু দুই. এমন শ্রেণির মানুষ; যারা শত প্রয়োজন ও অভাবের মধ্যেও কখনও কারও কাছে মুখ ফুটে কিছু চায় না, কখনও প্রকাশও করে না। তাদের দেখলে মনে হবে, বেশ ভালোই আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সমাজের এ শ্রেণির মানুষগুলো খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করে। তাই আসন্ন এ ঈদে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা যদি এসব মানুষের পাশে দাঁড়ান), তাহলে তাদের ঘরেও ঈদের আনন্দ-উৎসব হবে, তাদের মুখে ও প্রাণে হাসি ফুটবে। আর তখন তাদের হাসিতে আমাদের আনন্দগুলোও দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হবে, ইনশাআল্লাহ। অতএব, আসন্ন ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ও সব প্রাণে ঈদ আনন্দের হাসি ফোটাতে ব্যক্তিগতভাবে নিজে ও সামর্থ্যবান শ্রেণি এগিয়ে আসুন। ঈদে প্রতিটি প্রাণে হাসি ফুটুক। সবার ঈদ উৎসব হোক আনন্দমুখর ও প্রাণবন্ত।